মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ কি শাসন ব্যবস্থায়ও নতুনত্ব আনবে?

0
38

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
বলা যায় পুরোনো সরকার, তবে মন্ত্রিসভায় নতুন কিছু মুখ। একটি নির্বাচন হয়েছে, সবার ধারণা মতো আবারও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলের ভিতর থেকেই স্বীকার করা হয় যে, ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম নানাবিধ সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে বেকায়দায় সরকার। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বড় বড় দুর্নীতি ও কেলেংকারি, চরম ডলার সংকট ও ডলারের অথ্যধিক দাম সামগ্রিক অর্থনীতিতে বড় নেতিবাচক প্রভাব রেখে চলেছে অনেকদিন ধরে।
অর্থনৈতিক সক্ষমতা হারানো সাধারণ মানুষের জীবনে স্বস্তি কীভাবে আনা যাবে সেই দিশা খুঁজতে চায় সরকার। তাই পরিবর্তন এসেছে অর্থমন্ত্রণালয়ে। বিগত অর্থমন্ত্রীর সময়ে বলতে গেলে অর্থনৈতিক নেতৃত্বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ব্যাংক খাতসহ দেশে বড় বড় সব আর্থিক বিষয় আলোচিত হয়েছে, কিন্তু অর্থমন্ত্রীকে কোথাও পাওয়া যায়নি তেমন করে। প্রধানমন্ত্রী এবার যাকে অর্থমন্ত্রী করেছেন তিনি একজন ঝানু কূটনীতিক এবং বিগত পাঁচ বছর সংসদে অর্থমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন। ফলে আশা করা যায় তিনি বিষয়গুলো সবই অবগত। দরকার এখন নেতৃত্ব দেয়া। অন্তত ব্যাংক খাতের লুটেরাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই একটা বড় অগ্রগতি হবে বলে ভাবা হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটি স্বস্তিদায়ক স্তরে আনাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে তার জন্য।
বিগত সংসদে এমন প্রশ্নও উঠেছিল যে বাণিজ্যমন্ত্রী কি সিন্ডিকেটের সদস্য? নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন হয়েছে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সীর সময়ে এবং এই সময়টায় তিনি নিজে লাগামহীন কথা বলেছেন যা মানুষের ক্ষোভকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। নিজেই বলেছিলেন, কোনোভাবেই বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না, আজকে একটা বাড়লে কালকে আরেকটার দাম বাড়ছে। সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। সেই তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে বলে ফেললেন, ‘যখন ক্রাইসিস তৈরি হয়, তখন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আরও ক্রাইসিস তৈরি হয়’।
বাণিজ্যমন্ত্রীর এই কথায় বাজার কারসাজির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকারের অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। আরেকবার বলেছিলেন, ‘ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করা ছিল আমার বড় ব্যর্থতা। তাদের বিশ্বাস করাটাই ছিল বড় ভুল’। অর্থাৎ বলতে গেলে মন্ত্রীর হাতে কোনো ব্যবস্থাপনাই ছিল না। নতুন মন্ত্রী কর্নেল (অব.)ফারুক খান আগেও বাণিজ্য মন্ত্রী ছিলেন, এবার আবার ফিরলেন। দেখা যাক তিনি ভোগ্যপণ্যের বাজারের একচেটিয়া রাজত্ব করা গুটি কয়েক বড় কোম্পানির কারসাজির বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেন। আগের বাণিজ্যমন্ত্রী নিজে ব্যবসায়ী ছিলেন বলে ব্যবসায়ীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন, সাধারণ মানুষের প্রতি অ-সংবেদনশীল। সেই অবস্থার পরিবর্তন দেখতে চায় মানুষ।
দ্রব্যমূল্য সব মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, কর্মসংস্থান বাড়ানোসহ ১১টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ দলটির নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নে বাণিজ্য, অর্থ, পরিকল্পনা ও কৃষিসহ যে মন্ত্রণালয়গুলো প্রধান ভূমিকা পালন করবে, সেসব মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর অর্থ হলো শেখ হাসিনা শাসন ব্যবস্থায় নতুন কিছু করতে চান। সেটাই দেখবার অপেক্ষায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসেছেন ড. হাছান মাহমুদ যিনি গত পাঁচ বছর দক্ষতার সাথেই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় চালিয়েছেন। সদ্য বিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন অ-কূটনৈতিক বহু বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন নানা সময়। ২০২২ সালে একবার চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমী উৎসবের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে বলে ফেললেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করতে ভারত সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে।’ তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।’ তার এই বক্তব্য শাসক দল আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় ফেলে রাজনৈতিকভাবে। দলকে বলতে হয় যে, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন দলের কেউ নন। তাঁর বক্তব্য দলের কোনো বক্তব্য নয়” এরকম আরও অনেক কথা বলে নানা সময় আলোচনায় থেকেছেন। তার বাদ পড়াটা নিশ্চিতই ছিল বলা যায়। হাছান মাহমুদের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো কোনো কোনো দেশের সাথে সৃষ্টি বৈরি পরিস্থিতিকে বদলে ফেলা।
ডা. দিপু মনি মন্ত্রী আছেন ঠিকই তবে, মন্ত্রণালয় বদলেছে। উপ-মন্ত্রী থেকে সরাসরি পুরো মন্ত্রী হলেন মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। আশা করা যায়, তার এই সময়য়ের অভিজ্ঞতা তিনি কাজে লাগাতে পারবেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে সর্বজন শ্রদ্ধেয় ডাক্তার সামন্ত লাল সেনের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তি দল মত নির্বিশেষে প্রশংসিত হচ্ছে। সদ্য সাবেক জাহিদ মালেকের সময় এই মন্ত্রণালয় সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে দুর্নীতি ও অদক্ষতায়। সামন্ত লাল সেন বেশি কিছু না, এই মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তিতে সামান্য পরিবর্তন আনলেও একটি বড় পাওয়া হবে স্বাস্থ্যখাতে। পরিবর্তন এসেছে কৃষি ও প্রাণি সম্পদেও।
সরকার দলের ইশতেহার বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই পুরোনোদের মধ্যে ৩০ জন মন্ত্রী বাদ পড়েছেন। তবে পুরোনোদের বড় একটি অংশ মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। নতুন ১৪ জন প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় যুক্ত হয়েছেন। এর সঙ্গে অর্থ, বাণিজ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোতে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি বন্ধ করা, বৈশ্বিক পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জগুলোকে নতুন মন্ত্রিসভা গুরুত্বে সাথে নিবে বলেই আশা করছে মানুষ।
দ্রব্যমূল্য সব মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, কর্মসংস্থান বাড়ানোসহ ১১টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ দলটির নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নে বাণিজ্য, অর্থ, পরিকল্পনা ও কৃষিসহ যে মন্ত্রণালয়গুলো প্রধান ভূমিকা পালন করবে, সেসব মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর অর্থ হলো শেখ হাসিনা শাসন ব্যবস্থায় নতুন কিছু করতে চান। সেটাই দেখবার অপেক্ষায়।
লেখক: প্রধান সম্পাদক, গ্লোবাল টেলিভিশন।