বয়স্ক যৌনকর্মীরা পাবেন আবাসন সুবিধা

0
24

প্রতিদিনের ডেস্ক
দেশে যৌনকর্মীর সংখ্যা দুই লক্ষাধিক। একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর এ পেশায় থাকা নারীদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। বয়স, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা, অনিশ্চিত বাকি জীবন তাদের মানসিকভাবে আরও দুর্বল করে দেয়। যৌনপল্লীতে বেড়ে ওঠা শিশুরাও প্রতিকূল পরিবেশে বেড়ে ওঠে। এসব বিবেচনায় নিয়ে যেসব যৌনকর্মীর বয়স ৫০ বছরের বেশি তাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে সরকার। শিশুরাও থাকবে এ সুবিধার অধীনে। এ খাতে সরকারের ব্যয় হবে ৩৬ কোটি ৪৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।
‘দৌলতদিয়ায় বয়স্ক নারী ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য আবাসিক সুবিধা সৃষ্টিকরণ’ প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নিয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (পরিকল্পনা ও পরিসংখ্যান অধিশাখা) নাহিদ মঞ্জুরা আফরোজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি। তবে প্রকল্পটি এখনো অনুমোদন হয়নি। আমরা আশা করি প্রকল্পটি দ্রুতসময়ে অনুমোদন হবে।’
প্রস্তাবনা অনুযায়ী, চলতি সময় থেকে জুন ২০২৫ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় প্রায় দুই একর জমিতে ছয়তলা ভিতবিশিষ্ট তিনতলা ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে ১৫০ জন পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী এবং ৩০০ জন শিশুকে আবাসন সুবিধা দেওয়া হবে। প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ১৯টি আসবাবপত্র ও ৭০টি অফিস সরঞ্জামাদি কেনা হবে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, নানান কারণে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। নারীরা একপর্যায়ে নিরূপায় হয়ে কিংবা অনেকে পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে যৌনকর্মের দিকে ধাবমান হচ্ছে। ফলে তাদের স্থান হয় সমাজবর্হিভূত যৌনপল্লীতে। ২০১৫-১৬ সালের সরকারি পরিসংখ্যান মোতাবেক বাংলাদেশে যৌনকর্মীর সংখ্যা এক লাখ দুই হাজারেরও বেশি। বর্তমানে যৌনকর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। দৌলতদিয়া যৌনপল্লী বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গণিকালয়। এখানে প্রায় চার হাজার যৌনকর্মী এ পেশায় জড়িত। এক পর্যায়ে তারা যখন যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তখন তাদের দরিদ্রতা ঘিরে ধরে।
ক্ষুধামুক্তি, শিশুমৃত্যুর হার সর্বনিম্নকরণে বাংলাদেশের অগ্রগতি গর্ব করার মতো। এ ধারা অব্যাহত রাখতেই এ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাও এগিয়ে আসতে পারে। সমাজে অনেক বিত্তবান মানুষ আছে তারাও এগিয়ে আসতে পারে। সরকার সুবিধাবঞ্চিত নারীদের উন্নয়নে নানা কাজ করছে। একটা সময় বাধ্য হয়ে যৌনকর্মী ছিলেন, এখন ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে- এমন নারীদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে এ সুবিধার আওতায় আনা হবে।- যুগ্ম-সচিব নাহিদ মঞ্জুরা আফরোজ
দেশের যৌনকর্মীরা যখন যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্যে চলে যাচ্ছে তখন তাদের জীর্ণতা গ্রাস করছে। সমাজের মানুষের দ্বারা অবহেলার স্বীকার হচ্ছেন তারা। মানুষ তাদের সমাজে প্রবেশে বাধার সম্মুখীন করছে। এতে একদিকে তারা যেমন গৃহহীন হয়ে পড়ছে অন্যদিকে চিকিৎসার অভাবে অকালে মারা যাচ্ছে। এদেশের যৌনকর্মীরা তাদের মৌলিক মানবাধিকার থেকেও বঞ্চিত। বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয়ের পাশাপাশি তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাও সমপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যৌনকর্মীরা একসময় সন্তানদের কাছ থেকে কষ্ট পেয়ে পরিবারের কাছাকাছি থাকতে পারে না। পাবনা জেলায় এ ধরনের একটি গবেষণায় ইনসমনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন মস্তিষ্ক-হানিকর রোগের প্রাদুর্ভাব আমাদের প্রবীণদের মধ্যে দেখা যায়। দুর্ভাগ্যবশত বিদ্যমান এ ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যেই আর্থ-সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় অনেককেই। ঢাকার আগারগাঁওয়ের ‘প্রবীণ হিতৈষী সংঘ’ ফরিদপুর ও বরিশালের সরকারি বৃদ্ধাশ্রম এবং গাজীপুরের ব্যক্তিমালিকানাধীন ‘বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র’সহ বৃদ্ধ নারী-পুরুষদের জন্য হাতে গোনা কয়েকটি আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। বয়স্ক যৌনকর্মীদের জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। তবে সার্বিক বিবেচনায়, সারাদেশের চাহিদাসাপেক্ষে তাদের জন্য যে ধরনের পুনর্বাসন বা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন তার কণা পরিমাণও নেই।
একইসঙ্গে জীবনচক্রের অপর প্রান্তে পিছিয়ে পড়া শিশুদের কথাও আনা হয়েছে এ প্রকল্পের উন্নয়নে। দারিদ্র্যের চক্রে পড়ে অনেক ছেলেমেয়ে রাস্তায় বের হয়ে ভিক্ষা করতে বাধ্য হয়। তাদের মধ্যে শিক্ষা অনুপস্থিত। একটি দেশের ভবিষ্যৎ যদি এভাবে বড় হয় তবে সে দেশের উন্নয়ন আদৌ সম্ভব কি না সেটা যথেষ্ট ভাবনার বিষয় বলে জানায় মন্ত্রণালয়।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, যৌনপল্লীতে বেড়ে ওঠা শিশুদের উপযুক্ত পরিবেশ, শিক্ষার ও মানসিক বিকাশের অভাব রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের খারাপ কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হচ্ছে অনেক শিশু। অনেক শিশু খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণের সুযোগ পাচ্ছে না। এতে আমাদের দেশের একটা অংশ অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে। এসব শিশুর স্বাস্থ্য, খাদ্য ও সুন্দর জীবনধারণের সমস্যাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
সার্বিক জীবনমানের উন্নয়ন ও বিকাশে সমাজের শিক্ষিত, অশিক্ষিত, অবসরপ্রাপ্ত, সুবিধাভোগী, বঞ্চিত, নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের মধ্যে দূরত্ব কমানোর জন্য অবসরপ্রাপ্ত ও অসহায় বৃদ্ধ এবং পিছিয়ে পড়া শিশু গোষ্ঠীকে একই ভৌত অবকাঠামোর আওতায় এনে আলোচ্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের কার্যক্রম প্রসঙ্গে যুগ্ম-সচিব নাহিদ মঞ্জুরা আফরোজ বলেন, ‘যৌনপল্লীতে শিশুরা অনেক অসহায় হয়ে পড়ে। এসব বাচ্চাকে প্রশিক্ষণ-পড়াশোনার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হবে। বয়স্কদের জন্য গড়ে তোলা হবে আবাসন ব্যবস্থা। সারাদেশে দুই লাখের বেশি যৌনকর্মী আছে। সরকারের একার পক্ষে সবাইকে সুবিধাভোগী করা সম্ভব হবে না।’
‘সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাও এগিয়ে আসতে পারে। সমাজে অনেক বিত্তবান মানুষ আছে তারাও এগিয়ে আসতে পারে। সরকার সুবিধাবঞ্চিত নারীদের উন্নয়নে নানা কাজ করছে। একটা সময় বাধ্য হয়ে যৌনকর্মী ছিলেন, এখন ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে- এমন নারীদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে এই সুবিধার আওতায় আনা হবে।’