নির্বাচনোত্তর সহিংসতা দমন করতে হবে

0
37

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হলেও নির্বাচনোত্তর সহিংসতা থামছে না। দিন দিন নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা বাড়ছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও মামলার ঘটনা বেশি ঘটছে। এটা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে, নির্বাচনের আগে ও পরে সংখ্যালঘুরা হামলার শিকার হবে। এবারের জাতীয় নির্বাচন ঘিরেও দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় ঘটেছে এ রকম সহিংসতা। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে হিন্দু বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। মাদারীপুরের কালকিনিতে ১৭ থেকে ১৮টি বসতঘর ভাঙচুর ও লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেখানেও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ডাসারেও পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। বাগেরহাটের মোংলায় হামলা, মারধর, দখল, ভাঙচুরে জিম্মি হয়ে পড়েছে বেশ কিছু পরিবার। অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মানিকগঞ্জে নৌকার পক্ষে নির্বাচন করায় হুমকির মুখে আছে এক সংখ্যালঘু পরিবার। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় এক হিন্দু বাড়িতে হামলা হয়েছে। এছাড়া সুনামগঞ্জে সংঘাতের আশঙ্কায় রয়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ। এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা। আসলে রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন না হলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে না। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও আক্রমণের চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নির্যাতনের অধিকাংশ ঘটনাই সংঘটিত হয়েছে নির্বাচনকালীন, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে। এ পরিস্থিতির প্রভাব দেখা গেছে নব্বইয়ের দশক থেকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে; এর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী পর্যায়ে। ১৯৯০-এর অক্টোবরে সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হয়, উদ্দেশ্য দেশের গণআন্দোলন স্থবির করা। ২০০১-এর নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার শিকার হয় এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তখন পূর্ণিমা-সীমাদের আহাজারি কেউ শোনার বাকি ছিল না। অতঃপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন-পরবর্তী হামলার ঘটনাও সুবিদিত। যশোরের অভয়নগরের মালোপাড়ার সে ঘৃণ্য ঘটনাই কালের সাক্ষী! এছাড়া বিভিন্ন সময়ে নানা ইস্যুতে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ নির্যাতন যেন নিত্য ঘটনা। শাসকশ্রেণি কী জবাব দেবে এ সহিংসতার? যেমন প্রশাসন, তেমন সমাজ- কারো জবাবদিহির মতো মুখ নেই। সাম্প্রতিক সংঘটিত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় সহিংসতা। এমনকি জবাব মিলবে না রামু, উখিয়া, কক্সবাজারে বৌদ্ধ ও হিন্দুপল্লীতে হামলার ঘটনারও। এগুলোর শাস্তি বিধান কি হয়েছে? ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন হয়তো কোথাও কোথাও হয়েছে; কিন্তু অপরাধীর বিচার ও শাস্তি কতটা হয়েছে? এই অনাচারের যথোচিত শাস্তি না হওয়ার কারণে এ প্রবণতা সমাজে বেড়ে চলেছে। নির্বাচনের আগে-পরে যেন দানবীয় কায়দায় রূপ নেয় নির্যাতন। এমতাবস্থায় নিরাপত্তার অভাবে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী এই দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। এই দেশের কোনো সংখ্যালঘুই স্বেচ্ছায় তাদের মাতৃভূমি ছাড়তে চায় না। তারপরও কেন তারা দেশত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে? পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর গড়ে ০.৫ শতাংশ হারে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের আর কোনো লোক থাকবে না। দেড় কোটি সংখ্যালঘু বিপন্ন মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা সরকারের দায়িত্ব। এই বিষয়টি সবাইকে অনুধাবন করতে হবে।