মন্ত্রী হননি, যেভাবে কাটছে তাদের সময়

0
14

প্রতিদিনের ডেস্ক
গত সরকারে ছিলেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী বা সংসদ সদস্য। কিন্তু এবারে স্থান হয়নি মন্ত্রিপরিষদে। কেউ কেউ নির্বাচনে যেতে দলের মনোনয়নও পাননি। কয়েকজন হেরেছেন ভোটে। ফলে সংসদেও যাওয়া যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় বা নানা রকমের দায়িত্বে থাকার পর এখন তাদের অনেক অবসর। কীভাবে এখন সময় কাটাচ্ছেন, সেকথা জানিয়েছেন তাদের কয়েকজন।
সর্বশেষ মন্ত্রিসভায় ১৫ মন্ত্রী ও ১৩ প্রতিমন্ত্রীর জায়গা হয়নি নতুন মন্ত্রিপরিষদে। স্থান পানতি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া তিন প্রতিমন্ত্রী এবং ভোটে হেরে যাওয়া তিনজন। মন্ত্রিসভায় গত পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীদের মধ্যে এবারের নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বীর বাহাদুর উশৈসিং, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ।
বাদ পড়া প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে তিনজন এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। দলীয় মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত হয়েছেন তিনজন। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন পেয়েও ভোটে হেরে যান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।
গত সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হলেও নতুন সরকারে মন্ত্রিত্ব পাননি। ফলে তার কাছে এখন অনেক অবসর। তিনি জানান, কিছুদিন বিশ্রাম নিতে চান, এর পরেই ফিরতে চান কর্মস্থলে
১৯৪৭ সালের ১৫ জুন জন্ম নেওয়া আবু হেনা মোহাম্মাদ মুস্তাফা কামাল (লোটাস কামাল হিসেবেও পরিচিত) রাজনীতিবিদ হওয়ার পাশাপাশি ক্রিকেট সংগঠক হিসেবেও পরিচিত। অর্থমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মূল পেশা ব্যবসা। ব্যবসার কাজে ঢুকে গেলে আর বিশ্রাম নেওয়া হবে না, একইসঙ্গে এলাকার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেলেও সময় পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। তাই কিছুদিন বিশ্রামের পর কাজে ফিরতে চান সাবেক অর্থমন্ত্রী।
মুস্তফা কামাল বলেন, রাজনীতির সঙ্গেই তো যুক্ত আছি এবং থাকবো। তবে সামনে প্রচুর সময় পাবো বলে মনে হচ্ছে। সে সময় এলাকার উন্নয়নে ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করবো। এমপি হিসেবেও তো দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জন্য আ হ ম মুস্তফা কামালকে বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের মাসিক ম্যাগাজিন ‘দ্য ব্যাংকার’। বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী হিসেবে এ সম্মান পান তিনি। এর আগে ইন্দোনেশিয়ার অর্থমন্ত্রী ২০১৯ সালে এবং ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত অরুণ জেটলি ২০১৮ সালে দ্য ব্যাংকারের চোখে বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সাবেক সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির বাড়ি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার গুয়াবাড়ি গ্রামে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির পাশাপাশি তিনি পোশাক শিল্পেও জড়িত। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এর আগে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে টিপু মুনশি। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও অন্যতম উদ্যোক্তা হিসেবে সিপাল গ্রুপের এমডি পদে রয়েছেন। তিনি দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
টিপু মুনশিও নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। ফলে এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ফিরতে চান নিজের পেশা ব্যবসায়। একইসঙ্গে গুলশান আওয়ামী লীগের দায়িত্বও পালন করবেন বলে জানিয়েছেন তার সংশ্লিষ্টরা। তিনি বর্তমানে নিজ নির্বাচনি এলাকা রংপুর ও রাজধানী ঢাকায় আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছেন। কিছুটা রিল্যাক্স মুডে থাকলেও শিগগিরই রাজনীতি ও বাণিজ্যের কাজে ব্যস্ত হবেন। টিপু মুনশি বলেন, সংসদের অধিবেশনে যোগ দিচ্ছি ৩০ জানুয়ারি। এলাকার উন্নয়ন কাজের পাশাপাশি নিজের ব্যবসাও তো ঠিক রাখতে হবে। ধীরে ধীরে নিজের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবো।
সাবেক সরকারের রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বেসরকারি বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী পেশায় আইনজীবী। তারা তিনজনই ইতোমধ্যে পেশায় ফিরেছেন। বসছেন উচ্চ আদালতের নিজ নিজ চেম্বারে।
সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বাংলাদেশের পঞ্চগড়-২ সংসদ সদস্য। তিনি ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৫৬ সালের ৫ জানুয়ারি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার ময়দানদীঘির মহাজনপাড়ায় জন্মগ্রহণ করা নূরুল ইসলাম সুজন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার একজন আইনজীবী ছিলেন। ঢাবির সিনেট সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম একজন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য। এর আগে শ ম রেজাউল করিম পিরোজপুর-১ আসন থেকে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হন। পরে ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। নতুন সরকারে তিনি মন্ত্রিত্ব পাননি।
অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী একজন বাংলাদেশি আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ যিনি শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী।
রাজনীতি ও ব্যবসায়িক কাজে ফিরেছেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
পুরোদমে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছেন বাদ পড়া মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা, মন্নুজান সুফিয়ান।
সাবেক আমলা দ্বাদশ জাতীয় সংসদের এমপি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও টেকনোক্রেট পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম কিছুটা বিশ্রাম নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এম এ মান্নান নিজ জেলা সুনামগঞ্জের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হলেও গবেষণায় ফিরতে চান পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। আমলার আগে তিনি ছিলেন কৃষি বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষক।
নতুন সরকার থেকে বাদ পড়ার পর থেকেই নিজ জেলা বান্দরবানের রাজনীতিন সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছেন বীর বাহাদুর উশৈ সিং। ৩০ জানুয়ারি শুরু হওয়া জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের কাজ শেষ করে ফিরে যাবেন পাহাড় ও সবুজে ঘেরা জেলা বান্দরবানের আপনালয়ে, এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, রাজনীতি তো আমার রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে। এখন রাজনীতি ছাড়া কিছুই চিন্তা করতে পারছি না। সংসদ অধিবেশন না থাকলে বেশিরভাগ সময় এলাকায় থাকার মনোস্থির করেছি।