দেশে গ্যাস সংকট : উত্তরণের পথ খুঁজুন

0
40

সারাদেশে গ্যাস সংকট তীব্রভাবে দেখা দিয়েছে। চলতি মাসের শুরু থেকেই এ সংকট দেখা যায়। গত এক সপ্তাহ ধরে চরম আকার ধারণ করেছে। বেশির ভাগ এলাকায় দিনের বেলা কলকারখানার উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। রাজধানীর পাশাপাশি চট্টগ্রামেও প্রকট হয়ে উঠেছে গ্যাস সংকট। সরবরাহ না থাকায় গত শুক্রবার সকাল থেকেই চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট শুরু হয়। শুক্রবার রাত থেকে পাইপলাইনে সরবরাহ শুরু হওয়ার পর থেকে গ্রাহকরা গ্যাস পেতে শুরু করেন। গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত গ্যাসের চাপ খুব কম ছিল। দুপুর ১২টার পর থেকে গ্যাসের চাপ বাড়তে থাকে। প্রতি বছর শীত এলেই গ্যাসের সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করে। এবারো ব্যতিক্রম নয়। এতে একদিকে যেমন ব্যাহত হচ্ছে শিল্প উৎপাদন, অন্যদিকে রান্নাবান্নার ব্যাপারে গৃহিণীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আর সময়মতো রান্না না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের স্কুল ও কর্মজীবীদের অফিস-আদালতে যেতেও নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। পাইপলাইনের গ্যাসের সংকট প্রায় বছরজুড়েই থাকে। এমন দুর্ভোগ কাম্য নয়। আবাসিকে গ্যাসের চুলা জ¦ালাতে বাসিন্দাদের খরচ এখন দ্বিগুণ হয়েছে। একদিকে পাইপলাইনের গ্যাস বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে হচ্ছে; অন্যদিকে বাজার থেকে গ্যাস সিলিন্ডার কিনে প্রতিদিনের কাজ চালাতে হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে সরবরাহ রয়েছে ২৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। পেট্রোবাংলাসহ জ্বালানি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী গ্যাস সংকটের কারণে ২০২০ সালের এপ্রিলের পর এবারই দেশে গ্যাসের সরবরাহ সর্বনিম্ন। বাসাবাড়িতে ৬০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে দেয়া হচ্ছে মাত্র ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। এতে নাগরিক জীবন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ সমস্যা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। কিন্তু কেন এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না- তা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। বিশ্ববাজারে এলএনজির আমদানি মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় এ খাতে সরকারকে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হচ্ছিল। সে কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ রয়েছে। গ্যাসের সংকট কাটাতে সরকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আবাসিক ও বাণিজ্যিক সব লাইনের গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। সংশ্লিষ্টদের মতে, সঞ্চালন লাইনের ত্রæটির কারণে শীত মৌসুমে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্যাস সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। সংকীর্ণ পাইপলাইন দিয়ে ক্রমবর্ধমান গ্রাহকের গ্যাসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে শীতে পাইপলাইনে তরল হাইড্রোকার্বন জমেও গ্যাস সরবরাহে বিঘœ ঘটায়- এটিও গ্যাস সংকটের আরেকটি কারণ। রাজধানীর আবাসিক গ্রাহকের ভোগান্তির এসব কারণ চিহ্নিত হয়েছে আগেই। এসব নিয়ে লেখালেখিও হচ্ছে। তারপরও কেন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়। দেশে গ্যাসের মজুত অফুরন্ত নয়। অথচ চাহিদা বেড়েই চলেছে। নতুন নতুন সংযোগও দেয়া চলছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের গ্যাস ব্যবহার নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যেমন পাইপলাইনে সরবরাহকৃত গ্যাসের প্রচুর অপচয় ঘটে। এই অপচয় ঠেকাতে মিটার সিস্টেম চালু করা বা এ রকম কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে না। পরিবহন খাতে অবাধে সিএনজির ব্যবহার চললেও নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ নেই। অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসনির্ভরতাও কমছে না। গ্যাসের সংকট উত্তরণে নতুন নতুন কূপ অনুসন্ধান ও খনন করে গ্যাসের মজুত বাড়াতে হবে। গ্যাসের অপচয় রোধ করতে হবে। গ্যাসের সঞ্চালন ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।