মির্জা আব্বাসের দুর্নীতি মামলা রায় প্রচারের তালিকা থেকে ফের যুক্তিতর্কে

0
16

প্রতিদিনের ডেস্ক
১৬ বছর আগে সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে। এ মামলার রায় দ্বিতীয় দফায় পেছানোর পর ফের যুক্তিতর্কের শুনানি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আদালত। মামলাটিতে ঘটনাগত এবং তথ্যগত বিষয়সহ জটিল আইনগত বিষয় জড়িত থাকায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আদালত।রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আদালত আগামী ২৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ ডিসেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক মঞ্জুরুল ইমামের আদালতে মামলার রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য ছিল। মামলাটি রায় প্রচারের তালিকা থেকে সরিয়ে নিয়ে অধিকতর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ২৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত।
আদেশে বিচারক উল্লেখ করেন, মামলার রায় প্রচারের জন্য দিন ধার্য আছে। মামলার একমাত্র আসামি মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদকে জেল-হাজত থেকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে পিপি হাজিরা দাখিল করেন। রায় প্রস্তুতকালে নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের মোট ২৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। আসামির পক্ষে মোট পাঁচজন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ আসামির সম্পদ বিবরণীসহ আয়কর বিষয়ে এবং অন্যান্য বিষয়ে অসংখ্য ফাইলসহ, কাগজপত্র দাখিল করেছেন। মামলাটিতে ঘটনাগত এবং তথ্যগত বিষয়সহ জটিল আইনগত বিষয় জড়িত রয়েছে। সে বিষয়ে উভয় পক্ষের অধিকতর যুক্তিতর্ক শুনানি হওয়া আবশ্যক মর্মে আদালত মনে করেন। বিধায় মামলাটি রায় প্রচারের তালিকা হতে উত্তোলন পূর্বক অধিকতর যুক্তিতর্ক শুনানির সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।আগামী ২৪ জানুয়ারি অধিকতর যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হলো।
এর আগে ২২ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ৩০ নভেম্বর দিন ধার্য করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক মঞ্জুরুল ইমাম। সেদিন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক মঞ্জুরুল ইমামের আদালতে মামলার রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য ছিল। রায় প্রস্তুত না হওয়ায় বিচারক রায় ঘোষণার জন্য ১২ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। সেদিন দ্বিতীয় দফায় রায় প্রস্তুত না হওয়ায় ২৮ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার জন্য নতুন দিন ধার্য করেন আদালত।
এ মামলায় মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি দুদকের। ফলে সংস্থাটি বিএনপির এ নেতার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৩ বছরের কারাদণ্ড প্রত্যাশা করছে। একই সঙ্গে তার সম্পদ বাজেয়াপ্তের প্রত্যাশাও দুদকের।
তবে মির্জা আব্বাসের আইনজীবী মহিউদ্দিন চৌধুরীর দাবি, দুদকের আনা অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। দুদক অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। রায়ে মির্জা আব্বাস খালাস পাবেন বলে প্রত্যাশা রয়েছে।
চারদলীয় জোট সরকারের গণপূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর রমনা থানায় এ মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. শফিউল আলম। মামলায় মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন সাত কোটি ৫৪ লাখ ৩২ হাজার ২৯০ টাকার সম্পদ অর্জন এবং ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ৫৭১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ২৪ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. খায়রুল হুদা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
তদন্তে মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে চার কোটি ২৩ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন ও ২২ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। ২০০৮ সালের ১৬ জুন আদালত এ মামলায় দুদক আইনের ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। বিচার চলাকালীন আদালত ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।
এ মামলায় মির্জা আব্বাসসহ পাঁচজন সাফাই সাক্ষ্য দেন। তাদের মধ্যে অন্য চারজন হলেন- অ্যাডভোকেট এ কে এম শাহজাহান ও এনআরবি ব্যাংকের চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট নুরুল হোসেন খান, শাহজাহান মিয়া ও কাজী শিফাউর রহমান হিমেল।
গত ২৯ অক্টোবর রাজধানীর শাহজাহানপুর থানার উপ-পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে মির্জা আব্বাসকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন। মামলায় ৪৯ জনের নামোল্লেখসহ ৭০০/৮০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। পরে এ মামলায় মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ মামলায় গত ১ নভেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিন মির্জা আব্বাসের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বর্তমানে তিনি কারাগারে আটক রয়েছেন।
যেসব ধারায় কারাদণ্ড হতে পারে আব্বাসের
সহায় সম্পত্তির ঘোষণা সংক্রান্ত দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৬(১) ধারায় বলা হয়েছে, কমিশন কোনো তথ্যের ভিত্তিতে এবং উহার বিবেচনায় প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান পরিচালনার পর যদি এ মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, কোনো ব্যক্তি, বা তাহার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি, বৈধ উৎসের সহিত অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পত্তির দখলে রহিয়াছেন বা মালিকানা অর্জন করিয়াছেন, তাহা হইলে কমিশন লিখিত আদেশ দ্বারা উক্ত ব্যক্তিকে কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে দায়-দায়িত্বের বিবরণ দাখিলসহ উক্ত আদেশে নির্ধারিত অন্য যে কোনো তথ্য দাখিলের নির্দেশ দিতে পারিবে।
দুদক আইন-২০০৪ এর ২৬ (২) এর দুটি ধারার মধ্যে (ক) উপ-ধারা (১) এ বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি উল্লিখিত আদেশ প্রাপ্তির পর সে অনুযায়ী লিখিত বিবৃতি বা তথ্য প্রদানে ব্যর্থ হন বা এমন কোনো লিখিত বিবৃতি বা তথ্য প্রদান করেন যাহা ভিত্তিহীন বা মিথ্যা বলিয়া মনে করিবার যথার্থ কারণ থাকে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি ০৩ (তিন) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
একই ধারার (খ) উপ-ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কোনো বই, হিসাব, রেকর্ড, ঘোষণাপত্র, রিটার্ন বা উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো দলিলপত্র দাখিল করেন বা এমন কোনো বিবৃতি প্রদান করেন যাহা ভিত্তিহীন বা মিথ্যা বলিয়া মনে করিবার যথার্থ কারণ থাকে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি ০৩ (তিন) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদের দখল
দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি তাহার নিজ নামে বা তাহার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তির নামে, এমন কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির দখলে রহিয়াছেন বা মালিকানা অর্জন করিয়াছেন, যাহা অসাধু উপায়ে অর্জিত হইয়াছে এবং তাহার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সহিত অসঙ্গতিপূর্ণ বলিয়া মনে করিবার যথেষ্ট কারণ রহিয়াছে এবং তিনি উক্তরূপ সম্পত্তি দখল সম্পর্কে আদালতের নিকট বিচারে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা প্রদান করিতে ব্যর্থ হইলে উক্ত ব্যক্তি অনূর্ধ্ব ১০ (দশ) বৎসর এবং অন্যূন ০৩ (তিন) বৎসর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদে কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন; এবং উক্তরূপ সম্পত্তিসমূহ বাজেয়াপ্ত যোগ্য হইবে।
এ বিষয়ে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, ২৮ ডিসেম্বর মামলার রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিন বিচারক মামলাটি রায় ঘোষণা থেকে উত্তোলন করে ফের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ২৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। এ মামলায় আমরা যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেছি। আদালত যেহেতু ফের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য করেছেন, আমরা দুদকের পক্ষ থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবো।
তিনি আরও বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ২৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। মির্জা আব্বাসসহ পাঁচজন সাফাই সাক্ষী দিয়েছেন। সাফাই সাক্ষী দিয়ে নিজেদের অপরাধ নিজেরাই প্রমাণিত করেছেন। আমরা রায়ে এ মামলায় আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছি।
মির্জা আব্বাসের আইনজীবী মহিউদ্দিন চৌধুরি বলেন, আদালত হয়তো নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখেছেন মামলাটিতে যুক্তি উপস্থাপন প্রয়োজন। তাই ফের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য করেছেন। আমরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি। আশা করি আমরা ন্যায়বিচার পাবো।