সরকারের হস্তক্ষেপে সুরাহা হোক

0
40

ফসলের ভালো উৎপাদন এবং চালের উৎপাদন বৃদ্ধির পরও ভরা মৌসুমে হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হিসেবে দেখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ মূল্যবৃদ্ধির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। গণভবনে গত সোমবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভার শুরুতে দেয়া এক বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কথায় আমরা আশ্বস্ত হতে চাই। হঠাৎ করে মোটা, মাঝারি ও সরু- সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, বছরের শুরুতে মিলমালিকরা চালের দাম বাড়িয়েছেন। তবে মিলমালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজারে ধানের সরবরাহ কমায় বেড়েছে চালের দাম। চালের দাম ঊর্ধ্বমুখীর খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসছে। কোনো কারণ ছাড়া বারবার চালের দাম বৃদ্ধি উদ্বেগজনক। দেখা যাচ্ছে, নানামুখী কারসাজির মুখে পড়েছে দেশের চালের বাজার। মাঠে উৎপাদিত আমন ধান সবেমাত্র গোলায় ফিরেছে। এর মধ্যেই চালের দাম লাগামহীন। কারণ করপোরেট হাউসগুলো বাজার থেকে ধান কিনে গুদামে মজুত করছে এবং কারসাজি করে চাল বাজারে ছাড়ছে না। হিসাব অনুযায়ী, দেশে ধান-চালের কোনো সংকট নেই। তবুও বাড়ছে চালের দাম। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ধানের এ ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কথা নয়। অথচ বাড়ছে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে এখনই জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ে খুচরা, পাইকারি ও মিলারদের একে অপরকে দোষারোপ করার একটা প্রবণতা আমরা লক্ষ করি। চালের বেলায়ও তা দেখছি। মিলমালিকরা গণমাধ্যমকে বলছেন, চালের সরবরাহ কমে যাওয়ার সুযোগ নিচ্ছে কিছু সুবিধাবাদী চক্র। যার কারণে ধীরগতিতে চালের দাম বাড়ার পরিবর্তে বেড়েছে দ্রুতগতিতে। আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর আমনের উৎপাদন আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এরপরও চালের দাম বৃদ্ধি সত্যিই দুঃখজনক। শুধু তাই নয়, গত এক মাসে বাজারে ডাল, আটা, ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়েছে। এমনকি সরকারের অনুরোধও কানে তুলছেন না ব্যবসায়ীরা। পণ্য যথেষ্ট মজুত থাকলেও সরবরাহ নেই, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা অজুহাত তারা দাঁড় করাচ্ছেন। এতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েন নিম্নবিত্তের মানুষ এবং যাদের আয় সুনির্দিষ্ট। যাদের নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা নেই এবং যারা নির্দিষ্ট বেতন পান, তারাই বেশি নাজুক অবস্থায় পড়েন। আমাদের দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য চাল। বিপুলসংখ্যক শ্রমজীবী মানুষকে প্রচুর পরিমাণে ভাত খেতে হয় শুধু শর্করার চাহিদা পূরণের জন্য নয়, তাদের আমিষেরও একটা বড় অংশ আসে ভাত থেকে। তাই চালের দাম যেন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্রয়সাধ্যের সীমা অতিক্রম না করে, সরকারকে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘?অস্বাভাবিকভাবে অতিরিক্ত মজুত রাখছে এবং দুরভিসন্ধি নিয়ে মজুত করছে- এমন যাদেরই পাওয়া যাবে; মোবাইল কোর্ট দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দরকার হলে জেলে ঢুকিয়ে দিতে হবে। মানুষের খাবার নিয়ে খেলা করার কোনো অর্থ হয় না। এ ভরা মৌসুমে আমাদের চালের দাম বাড়ার কথা না।’ কিন্তু সরকার দক্ষভাবে ব্যবসায়ীদের তদারক করতে পারছে কিনা- সে প্রশ্ন সামনে আসছে। সরকারকে চালের বাজার স্বাভাবিক রাখায় বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করতেই হবে। ভাঙতে হবে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট।