আইসিজের নির্দেশ ইসরায়েল কি মানবে?

0
29

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েই চলছে দখলদার ইসরায়েল। হামাস সদস্যদের নির্মূলের নামে চালানো অভিযানে মরছে নিরীহ ফিলিস্তিনিরা। নেতানিয়াহু বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হয়েছে হাসপাতাল ও শরণার্থী শিবিরগুলো। এমতাবস্থায় গাজায় গণহত্যা ও গণহত্যার উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। গত শুক্রবার নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)-তে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সাউথ আফ্রিকার করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই রায় দিয়েছে। আদালত গাজায় মানবিক সংকট নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আইসিজের আদেশে বলা হয়, গাজায় গণহত্যা ঠেকাতে ইসরায়েলকে তার ক্ষমতার আওতার মধ্যে থাকা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ইসরায়েলের সেনারা যাতে গাজায় গণহত্যার মতো কোনো কিছু না করে, সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। এ নির্দেশ ইসরায়েল মানছে কিনা, সেটা দেখার বিষয়। আইসিজে বিশ্ব আদালত নামেও পরিচিত। এটি জাতিসংঘের একটি দেওয়ানি আদালত। সদস্যভুক্ত এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের বিরোধের বিচার করে এই আদালত। তবে এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) থেকে আলাদা। আইসিসি যুদ্ধাপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করে থাকে। জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইসরায়েল- দুই দেশই দুই আদালতের রায় মেনে চলতে বাধ্য। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপর গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এই হামলায় গাজা উপত্যকায় ২৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন। যার বেশির ভাগই নারী ও শিশু। গাজায় ভয়াবহ এক সংকট তৈরি হয়েছে, যা নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের উত্তাপ ছড়িয়েছে গোটা বিশ্বে। বদলে গেছে রাজনীতি-কূটনীতির নানা হিসাব-নিকাশ। কী হবে এই সংঘাতের ভবিষ্যৎ, তা নিয়ে বাড়ছে শঙ্কা। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধের দামামা বাজছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসন বন্ধে পাঁচটি সুপারিশ পেশ করেছেন। গত বছর ৯ নভেম্বর রিয়াদে অনুষ্ঠিত ৮ম বিশেষ ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনে সম্প্রচারিত ভাষণে তিনি এ পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের একতরফা যুদ্ধ বন্ধে অবিলম্বে ‘যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানানো দরকার। এই যুদ্ধ অন্যায্য এবং এটি মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের নির্মম লঙ্ঘন। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজা জ¦লছে এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। বিধ্বস্ত গাজার আটকে পড়া বাসিন্দাদের জন্য খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী উপকরণের অবিচ্ছিন্ন, দ্রুত এবং নিরাপদ সরবরাহের জন্য অবিলম্বে একটি মানবিক করিডোর খোলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সুপারিশ করেছেন। বিশ্বনেতারা প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিতে পারে। তুরস্ক, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশসহ সব রাষ্ট্রই ফিলিস্তিনি সমস্যার একটি দ্বিরাষ্ট্রকেন্দ্রিক সমাধানের কথা বলেছে। গাজা সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে ‘দ্বিরাষ্ট্র সমাধান’ নিয়ে নতুন করে আলোচনা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের অনেক মিত্র দেশই বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে। তারা বলছে, ইসরায়েলের পাশাপাশি পৃথক ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে জাতিসংঘ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানালেও বারবার তা প্রত্যাখ্যান করে যাচ্ছেন ইসরায়েলের যুদ্ধবাজ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এর বদলে তিনি বলছেন, অধিকৃত পুরো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন তার দেশের। প্রকৃতপক্ষে ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তি ও স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠা ছাড়া এ যুদ্ধ ও সংঘাতের অবসান ঘটবে না। এ ক্ষেত্রে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই একমাত্র পথ।