সমাজের নীতিনির্ধারকরা এগিয়ে আসুন

0
28

উদ্বেগের খবর, ২০২৩ সালে দেশে ৫১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ৩০৯ জনই নারী শিক্ষার্থী। গত শনিবার বেসরকারি একটি সংস্থা আয়োজিত ‘২০২৩ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা, পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মৃত্যুর পরিসংখ্যানের দিকে তাকান, গা শিউরে উঠবে। কোনোভাবে এটাকে হেলাফেলা করার সুযোগ নেই। আত্মহত্যা মহাপাপ। আইন অনুযায়ী একটি অপরাধ। জগতের সব ধর্ম এবং নীতিশাস্ত্রে আত্মহত্যার সমর্থনে কোনো যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। তাহলে কেন মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়? আত্মহত্যা নিরসনে সরকারি-বেসরকারি নানাবিধ উদ্যোগ এবং প্রয়াস রয়েছে, তথাপি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছেই। আত্মহত্যার পেছনের গল্প যদি তালাশ করি তাহলে স্বভাবতই যে চিত্রটি মানসপটে ভেসে আসে, তা হলো- যৌতুক, বেকারত্ব, পারিবারিক কলহ, প্ররোচনা, চাপ, হতাশা, প্রেমে ব্যর্থতা, চাহিদা এবং আকাক্সক্ষার মাঝে ফারাক, নেতিবাচক চিন্তা, জীবনের উদ্দেশ্যহীনতায় হীনম্মন্যতা, আস্থাহীনতাসহ নানা উপাদান কিনা অনুঘটক হিসেবে রসদ জোগায়। বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫১৩ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে স্কুল শিক্ষার্থী ২২৭ জন। কলেজ শিক্ষার্থী ১৪০ জন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৯৮ জন এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ৪৮ জন। আত্মহত্যা করা মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ২০৪ জন। অন্যদিকে ছাত্রী ৩০৯ জন। ২০২২ সালে আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী ছিল ৫৩২ জন। আত্মহত্যার এমন পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক। আমরা দেখছি, প্রতি বছর আত্মহত্যায় মারা যাওয়াদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে পড়া শিক্ষার্থী বেশি। নানা কারণে বিপন্ন হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীদের জীবন। মানসিকভাবে তারা ভেঙে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধের ফলে বাসায় বসে থেকে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আত্মহত্যার মতো জঘন্য পথে তারা এগোচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের পথ কী? এ থেকে পরিত্রাণে মানসিক চিকিৎসা, ইতিবাচক মনোভাব, সহমর্মিতা, বন্ধুত্বের হাত বাড়ানো, বক্তব্য শেয়ার করার পরিবেশ তৈরি, আত্মসমালোচনা। আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে সমাজের নীতিনির্ধারকদের সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে। আর ছেলেমেয়েদের ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। একই সঙ্গে সিনেমা-নাটক, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় জীবন সম্পর্কে সচেতন হওয়া ও আত্মহত্যার কুফল সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তুলতে পারলে তবেই আত্মহত্যা প্রবণতা অনেকটা কমে আসবে। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যার পেছনে যেসব কারণ দায়ী, তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা না নিলে এর প্রবণতা বাড়তেই থাকবে। তাই আত্মহত্যা প্রতিরোধে সবাইকে সজাগ, সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে, সবাইকে সচেতন করতে হবে।