গল্প: সানগ্লাস

0
24

ফাত্তাহ তানভীর রানা
মহেশ মনের আনন্দে রেলস্টেশন থেকে বের হয়ে রিকশা খুঁজছিল। কেউ একজন কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, ‘বস ৪০৭ জাম্বিয়া।’ মহেশ কিছু বুঝতে পারলো না। লোকটা একটা প্যাকেটের দিকে ইঙ্গিত করলো। মহেশ কিছুটা পথ হেঁটে রিকশা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও ওরা পিছু ছাড়লো না। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কেউ একজন ঘাড়ে আঘাত করে বসলো। এরপর মহেশের আর কিছু মনে নেই।
এক চোখ ভাঙা চশমা নিয়ে মহেশের কৌতূহলের শেষ ছিল না। তবে চাটমোহর স্টেশনে একজন জিজ্ঞেস করলেন, ‘চশমা কি ভেঙে গেল?’ মহেশ হেসে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলো। অবশ্য অবাক হয়ে কেউ চেয়ে থাকেনি। যদিও ট্রেনের কামরায় একটা মেয়ের দিকে মহেশ ভাঙা চশমা দিয়েই অপলক তাকিয়ে ছিল।
চোখে পানির ঝাপটা পেয়ে মহেশের জ্ঞান ফিরলো।
চারদিকে বিশেষ মাস্ক আর মুখোশ পরা বেশ কয়েকজন গুণ্ডামার্কা মানুষ দাঁড়িয়ে। অন্ধকার মতো একটা ঘরে মহেশকে চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে। ওদের বস জিজ্ঞেস করলো, ‘মালগুলি কই?’
‘মাল! কিসের মাল? এখনো মাল তো হাতে পাইনি। গত পরশু কোম্পানির মাল ডেলিভারি দিয়েই বাড়ি গিয়েছিলাম। আজ তো অফিসে যোগ দেবো। তারপর মাল ডেলিভারি দেবো বলেই এসেছি। অফিসে যাওয়া হলো না। ওরা ধরে নিয়ে এলো তো।’
সাথে সাথে মহেশ অট্টহাসি শুনতে পেলো। হাসি শেষ হওয়ার আগেই গালে কড়া থাপ্পড় পড়ে গেল!
‘হারামখোর মাল চেনে না! ওর পাছায় মাল ঢুকিয়ে দিলেই চিনবে!’
আবার অট্টহাসি!
কি, খুব সহজে হজম করে ফেলবি! কয়েক কোটি টাকার মাল এত সহজে ছেড়ে দেবো ভেবেছিলি?’
‘দেখুন আপনারা ভুল করছেন। আমি এক কোটি টাকা কখনো দেখিনি। আমাকে ছেড়ে দিন।’
‘নিশ্চয়ই তোকে ছেড়ে দেবো; মাল বুঝে পাবার পরে।’ মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলল লোকটা।
‘আধা ঘণ্টা তোর জন্য পুলিশের ভয়কে উপেক্ষা করে রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কী করছিলি ততক্ষণে? মাল সড়িয়ে দিয়ে দেরিতে এসে এখন নাটক করছিস হারামজাদা? বল, মালগুলো কোথায় রেখেছিস?’
মহেশ বুঝতে পারছে, সে নরকের দরজায় দাঁড়িয়ে। কিন্তু তার অপরাধ বুঝতে পারছে না। আসার সময় তার চশমার একটা গ্লাস পড়ে গিয়ে ভেঙে যায়। তখনই বোঝা উচিত ছিল আজকের দিন কুফা। এটি একটি বড় ভুল হয়েছে। সে তখন বাড়ি ফিরে গেলে এত কিছু ঘটতো না। ওদের টর্চারে এক সময় মহেশ জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
‘বস, কিছুই স্বীকার করাতে পারলাম না। আরও টর্চার করলে মরে যেতে পারে।’
‘তোরা ভুল লোককে তুলে আনিসনি তো?’
‘আমাদের সিগন্যাল কখনো ভুল হয়েছে কি?’
‘কেউ আমাদের বোকা বানায়নি তো!’
‘আজকের রাতটা দেখা যাক। আমাকে একটু চিন্তা করতে দে।’
‘একই বর্ণনা! সানগ্লাসের এক চোখ ভাঙা। খ বগি থেকে বের হবে, একই ব্যাগ। তাছাড়া আমরা সময় চলে যাওয়ার পরের আধা ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। কোনো ভাঙা সানগ্লাস পরা কেউ আসেনি। সব অপারেশনে নির্দিষ্ট সময়ের কয়েক মিনিট আগেই আমাদের ডিল ফাইনাল হয়ে যায়।’
‘আমিও খোঁজ লাগাচ্ছি।’
‘ফিল্মি কায়দায় অপহরণ; গ্রেপ্তার ১!’ অনলাইনে নিউজ দেখেই সুজন বসকে কল দিলো।
‘বস, একজন ধরা পড়েছে। আর পেপারে আমাদের গতকালের ঘটনা!’
‘সুজন, আরেকটা নিউজ দেখিসনি! ৩ কোটি টাকার বেআইনি পণ্যসহ ভারতীয় নাগরিক গ্রেপ্তার!’
‘দেখছি বস।’
‘কে তথ্য পাচার করেছে? আমি আসছি।’
‘শালা ড্রাইভার ধরা পড়লো কিভাবে? অনেক কষ্টে এই গোপন আস্তানা পেয়েছি। এখানে আর থাকা গেল না।’
‘ভাগ্য ভালো আমরা এই লোকটাকে কিডন্যাপ করে এনেছি, নতুবা কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ এসে আমাদের কিডন্যাপ করতো!’
‘ভারতীয়কে পুলিশ আমাদের কাছে নিয়ে আসার আগেই আমরা চম্পট দিয়েছি। আরেকটা বুদ্ধিমানের মতো কাজ করেছি। তা হলো, কারো মোবাইল ব্যবহার করিনি।’
‘আমাদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সবাইকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন পুলিশ আমাদের খুঁজছে!’
‘ড্রাইভার যদি সব কোর্টে বলে দেয়?’
‘আমরা কী করতে পারি?’
‘এই পরিস্থিতিতে আগে কী করা হয়েছে মনে নেই?’
‘সুজন, একটা মিথ্যা ঢাকতে কয়েকটি মিথ্যা বলতে হয়। তখন মিথ্যাটা সত্যি বলে বিশ্বাস করানো সহজ হয়। এখন একটা অপরাধ ঢাকতে আরও অপরাধ করতে হবে। সবাই চলে যাওয়া যাক, এখানে আরও দেরি করলে আরেকটা ভুল হবে।’
‘বস মুরগির কী হবে?’
‘মুরগি বেঁচে থাকলে শব্দ করবে, আর মরে গেলে পচা গন্ধ বেরুবে! দুটোই আমাদের জন্য সমস্যা। ভেবে দেখ তোরা কী করতে চাস।’
সবাই নীরব রইলো।