বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চালু হচ্ছে আরেকটি নৌপথ, খুলছে সম্ভাবনার দুয়ার

0
20

প্রতিদিনের ডেস্ক
ভারতের মুর্শিদাবাদ থেকে বাংলাদেশের গোদাগাড়ী পর্যন্ত পণ্য আনা-নেওয়া হতো দেশ স্বাধীনের আগে। সেসময় পূর্ব বাংলা থেকে পাঠানো হতো পাট ও মাছ। ভারত থেকে আসতো বিভিন্ন পণ্য। ৫৯ বছর পর আবারও এই নৌপথে শুরু হচ্ছে বাণিজ্য। নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হচ্ছে ১২ ফেব্রুয়ারি। ফলে বাণিজ্যে সম্ভবনার দুয়ার খুলছে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে।
জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগ পর্যন্ত সুলতানগঞ্জ-ময়া ও গোদাগাড়ী-ভারতের লালগোলার মধ্যে নৌপথে বাণিজ্য কার্যক্রম চালু ছিল। যুদ্ধের সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়। এত বছর পর নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সুলতানগঞ্জ নদীবন্দর উদ্বোধনের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে।
বাংলাদেশের পদ্মা-মহানন্দার মোহনায় চালু হচ্ছে এ রুট। আপাতত প্রতিদিন এ রুট দিয়ে পাঁচটি জাহাজ আসবে। পরে এটি বাড়ানো হবে। এ রুটে দূরুত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। তাই খরচও কমবে।
বিআইডাব্লিউটিএর তথ্য মতে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত হয় রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ধুলিয়ান নৌরুটে বাণিজ্য চালুর। রাজশাহী থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার একটি নৌপথের অনুমোদন থাকলেও পদ্মার নাব্য সংকটের কারণে কার্যকর করা হয়নি। ফলে রুটটি সংক্ষিপ্ত করে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদের ময়া নৌবন্দর পর্যন্ত আড়াআড়িভাবে ২০ কিলোমিটার পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়া হবে। সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর চালু হলে এ পথে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি থানার ময়া নৌবন্দরের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুরু হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে এই পথে ভারত থেকে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল, পাথর, মার্বেল, খনিজ বালু ছাড়াও খাদ্য সামগ্রী আসবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে বস্ত্র, মাছ, পাট ও পাটজাত পণ্য ছাড়াও কৃষিপণ্য ভারতে যাবে। এসব পণ্য মূলত বিভিন্ন স্থলবন্দরের মাধ্যমে সড়ক ও রেলপথে আমদানি করা হয়। তবে সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরের মাধ্যমে এসব পণ্য ভারত থেকে আমদানিতে সময় ও খরচ বহুলাংশে কমে যাবে। এতে উপকৃত হবে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্ট তথ্য মতে, ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত নৌপ্রটোকলের আওতায় ২০২০ সালের অক্টোবরে সুলতানগঞ্জ-ময়া নৌপথটি চালুর কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে পিছিয়ে যায়। সুলতানগঞ্জ নৌঘাটটি রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক থেকে মাত্র এক কিলোমিটার ভেতরে পদ্মা-মহানন্দার মোহনায় অবস্থিত। সারাবছর সুলতানগঞ্জ পয়েন্টে পদ্মায় গভীর পানি থাকে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের ময়া নৌঘাটটি মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমা শহরের কাছে ভারতীয় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে যুক্ত। ফলে সুলতানঞ্জ-ময়া পথে নৌবাণিজ্য শুরু হলে পরিবহন খরচ অনেকাংশে কমবে।
এদিকে রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ নদীবন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে চালুর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সেখানে পরিদর্শনও করেছেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর আফির আহমেদ মোস্তফাসহ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
রাজশাহী চেম্বারের সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, এটি ভালো উদ্যোগ। এটি বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধির চুক্তি ছিল। এ বন্দর চালু হলে সড়ক ও রেলপথের চেয়ে কম খরছে পণ্য আসবে। মানুষও কম খরচে এগুলো কিনতে পারবে। তবে বন্দর শুধু চালু করলেই হবে না। এই বন্দর থেকে রাজশাহী ও রূপপুর পর্যন্ত নৌপথ চলাচলের সুযোগ তৈরি করতে হবে।
বিআইডাব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত নৌপ্রটোকলের আওতায় নদীপথে দুই দেশের মধ্যে কম খরচে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। রাজশাহীর সুলতানগঞ্জে নৌবন্দরের কার্যক্রম চালু হলে ভারতের মুর্শিদাবাদের ময়া নৌবন্দরের সঙ্গে নদীপথে বাণিজ্য শুরু হবে। এর ফলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরাই উপকৃত হবেন। দুই পাড়েই অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা এখনো রয়েছে। তবে সুলতাগঞ্জ বন্দর চালুর পর পর্যায়ক্রমে সেগুলো ঠিক হয়ে যাবে।
এদিকে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যের সুলতানগঞ্জ-ময়া নৌরুট চালুর বিষয়ে গত কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করে আসছেন রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
তিনি বলেন, সুলতানগঞ্জ-ময়া নৌপথটি খুবই সম্ভাবনাময় একটি বাণিজ্য পথ। এই পথে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য শুরু হলে উভয় দেশই বিপুলভাবে লাভবান হবেন।