ভাষার মাস একুশ

0
5

সোনিয়া আফরিন
ছোট্ট সোনামণির মুখে আধো আধো বুলিতে ‘অ আ ক খ’ বলা যেন এক ইতিহাসের গল্প। সেই ইতিহাস ভাষার। শুরু হয়েছে সেই ভাষার মাস। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে যারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের অমলিন স্মৃতি স্মরণের মাস এই ফেব্রুয়ারি। ফেব্রুয়ারী মাসজুড়ে প্রতিদিন যে সূর্যের উদয় হবে, তাতে মিশে থাকবে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি’র করুণ সুর। বাঙালির কাছে এই মাস ভাষার মাস, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হওয়ার মাস। তাই তো বাঙালি জাতি পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাবে ভাষা শহীদদের। ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ফেব্রুয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষকাল। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে দুর্বার আন্দোলনে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা এবং আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেরণা। তারই পথ ধরে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন। একাত্তরে নয় মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। সেদিক থেকে বস্তুত ফেব্রুয়ারি মাস একদিকে শোকাবহ হলেও অন্যদিকে আছে এর গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। কারণ পৃথিবীর একমাত্র জাতি বাঙালি ভাষার জন্য এ মাসে জীবন দিয়েছিল। যে প্রত্যাশা নিয়ে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করা হয়েছিল, সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রয়োগ, তা আশানুরূপভাবে প্রতিষ্ঠা করা গেছে বলে মনে হয় না। শিক্ষা, ব্যবসা ও দাফতরিক ভাষায় বাংলার প্রয়োগ আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। ভাষা বেঁচে থাকে তার সঙ্গে অর্থনীতির যোগ থাকলে। মূল অর্থনীতি ও তার চালিকাশক্তির সঙ্গে আমাদের ভাষার কোনও সম্পর্ক নেই। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রয়োগ এখন কল্পনা মনে হয়। আর বর্তমান প্রজন্ম বাংলা ছাড়া যে ভাষা ব্যবহারে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে শক্তিশালী জায়গা করতে পারে, তারা সেই ভাষাতেই কাজ করে। ফলে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার যে জায়গায় আমাদের পৌঁছানোর কথা ছিল, সেখানে যাওয়া সম্ভব হয়নি। আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও রাষ্ট্রীয়ভাবে দাফতরিক কাজে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিচারিক কাজে, সরকারি দফতরে এখন অনেকাংশে বাংলাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। বিভিন্ন ফরম ও ওয়েবসাইটে ইংরেজির পাশাপাশি অবশ্যই যেন বাংলা থাকে সে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের বেশ কিছু আদেশ কার্যকর ভূমিকা পালনে সহায়তা করেছে।