কিশোর অপরাধ রুখতে হবে

0
28

গ্যাং কালচার সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক ও জাতীয় উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে কিশোর-তরুণরা বিভিন্ন গ্যাংয়ের মাধ্যমে অপরাধ করছে। তুচ্ছ ঘটনায় বখে যাওয়া কিশোরদের এক গ্রুপ হামলে পড়ছে অন্য গ্রুপের সদস্যদের ওপর। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার বাইরেও ঘটছে খুনের ঘটনা। ওদের ঠেকাতে প্রশাসনের নানা উদ্যোগের কথা শোনা যায়। কার্যকর কিছু দেখি না আমরা। নতুন করে কিশোর গ্যাং ও ইভটিজারদের বিরুদ্ধে রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় অভিযান চালাবে বলে জানিয়েছে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। কেউ যদি তথাকথিত বড় ভাইদের নাম বলে বাঁচার চেষ্টা করে তাহলে সেই বড় ভাইদেরও গ্রেপ্তার করা হবে। ছিনতাইকারী ও তাদের বড় ভাইদের সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকলে গোয়েন্দা পুলিশকে জানানোর অনুরোধ জানিয়েছে সংস্থাটি। ডিএমপির তথ্যমতে, গত বছর রাজধানীতে খুন হয়েছে ২০০ জনের বেশি। এর মধ্যে ৫৫টি ঘটনা ঘটেছে ভাসমান অপরাধীদের হাতে। তারা খুন, ছিনতাই, মাদকসেবন থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধে জড়িত। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যেই খুনোখুনি করছে তারা। হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি চুরি-ডাকাতি-ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বখাটে কিশোর-তরুণদের নিয়ে এমন অপরাধী চক্র গড়ে উঠেছে। যারা মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, নারীর শ্লীলতাহানিসহ নানান অপকর্মে যুক্ত। এসব চক্রের সদস্যের বড় অংশ কিশোর হলেও নেতাদের বয়স ১৯-৩৮ বছর। তাদের ‘সিনিয়র’ বা ‘বড় ভাই’ বলে ডাকে চক্রের সদস্যরা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব চক্রের নেতার বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত অথবা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই কিশোররা আগামীর ভবিষ্যৎ। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কিশোর সন্ত্রাস নতুন একটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বেপরোয়াভাবে সক্রিয় এসব গ্যাংয়ের সদস্য। বিশেষ করে মাধ্যমিক স্কুল পড়–য়ারা এসব গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়ছে। কারণ এই বয়সে ছেলেমেয়েদের আচরণ পরিবর্তিত হয়, তাদের মধ্যে এক ধরনের ‘বড় হয়ে গেছি’ বা ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব চলে আসে। তাছাড়া সময়ের সঙ্গে সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিথিল পারিবারিক বন্ধন, মা-বাবার সন্তানকে সময় না দেয়া, সামাজিক অবক্ষয়, অল্প বয়সে স্মার্টফোনসহ উন্নত প্রযুক্তি উপকরণের নাগাল পাওয়া, সঙ্গদোষ ইত্যাদি কারণে কিশোরদের অপরাধে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এছাড়া কিশোরদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা দেয়া, যৌক্তিকতা বিচার না করেই সব আবদার পূরণ করা এবং সন্তান কী করছে সে বিষয় পর্যবেক্ষণ না করায় অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে বলে সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন। কিশোররা যেন অপরাধে জড়াতে না পারে এবং কেউ তাদের অসৎ কাজে ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। এজন্য সবার আগে পরিবার তথা মা-বাবাকে এগিয়ে আসতে হবে। সন্তানরা কী করে, কার সঙ্গে সময় কাটায়- এসব খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানদের অযৌক্তিক আবদার পূরণ করার আগে ভাবতে হবে। স্কুল কারিকুলামের বাইরে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আকৃষ্ট করা এবং যুক্ত করার সুযোগ বাড়াতে হবে। কিশোর অপরাধ রুখতে ছিন্নমূল শিশু-কিশোরদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। যারা ইতোমধ্যে অপরাধ চক্রে জড়িয়ে গেছে, তাদের জন্য উপযুক্ত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।