খুলনায় ইফতারিতে চাহিদার শীর্ষে ‘নানা হালিম’

0
10

খুলনা প্রতিনিধি
রোজার সঙ্গে হালিমকে সঙ্গী করেননি শহরে ভোজন রসিক এমন লোক খুব কমই আছে। হাই প্রোটিন সমৃদ্ধ এই খাবারটি রোজাদারের সারা দিনের পুষ্টি ঘাটতি কমাতে দারুণ কার্যকর। এছাড়া মুখরোচক খাবার হিসেবেও হালিমের জুড়ি নেই। যেসব কারণে খুলনায় ইফতারে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে অনেকেই রাখেন বিখ্যাত নানা হালিম। বর্তমানে বাহারি ইফতার আইটেমের মধ্যে চাহিদার শীর্ষে রয়েছে এই নানা হালিম। হালিমের স্বাদের জাদুতে আছে ভিন্নতা। নানার হালিমের মালিকের নাম মো. হজরত আলী (৮০)। ‘নানা’ নামের আড়ালে তার নিজের নাম প্রায় হারিয়েই গেছে। খুলনা মহানগরীর সাউথ সেন্ট্রাল রোডে সরকারি পাইওনিয়ার মহিলা কলেজের সামনে নানা হালিমের একমাত্র বিক্রয়কেন্দ্র। বিক্রি হয় শুধু রমজান মাসেই। দূরদূরান্ত থেকে ভোজন রসিকরা আসেন এখানে। রোজার সময় দুপুরের পরই শুরু হয় ভিড়। রান্নার কলাকৌশল ও বৈচিত্র্যময় নামের কারণে খুলনায় নানা হালিম এখন বেশ প্রসিদ্ধ বলে জানান ক্রেতারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রমজানের প্রথম দিন মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরের পর থেকেই সরগরম হয়ে উঠেছে ফুটপাতের ওপরে শামিয়ানা টাঙানো ‘নানা স্পেশাল হালিম’ এর দোকান। বিখ্যাত এই হালিম খুলনার মানুষের ইফতারির অন্যতম অনুষঙ্গ। কেউ কেউ নানা হালিম নিতে বাড়ি থেকে পাত্র নিয়ে এসেছেন। আবার কেউ কেউ ওই দোকানের মাটির পাত্রে হালিম নিয়ে যাচ্ছেন। মালিক মো. হজরত আলীসহ দোকানের ১১ জন কর্মচারী ডেকচি থেকে মাটির পাত্রে ভরে ক্রেতার চাহিদামতো হালিম তুলে দিচ্ছেন। নানা হালিমের মালিক হজরত আলী বলেন, ১৯৯২ সাল থেকে প্রতি রমজানে এই হালিম বিক্রি করে আসছি। আমার হালিমে কোনো ভেজাল নেই। যার কারণে এত জনপ্রিয়। ডাল, মাংস সবকিছু ভালো মানের দেওয়ায় স্বাদও ভালো। নিজের হাতেই রান্না করি। সব দ্রব্যের দাম দিন দিন বাড়ছে। যার কারণে এবার হালিমের দাম সামান্য বাড়ানো হয়েছে। আধা কেজি ২০০ টাকা এক কেজি ৪০০ টাকা, দেড় কেজি ৬০০ টাকা আর এক কেজির একটু কম ৩০০ টাকায় বিক্রি করছি। কর্মচারী মো. রাজু বলেন, আজ পাঁচ ড্যাগ হালিম রান্না করা হয়েছে। তিন ড্যাগ বিকেলেই শেষ হয়ে গেছে। বাকি দুই ড্যাগ ইফতারের আগে শেষ হয়ে যাবে। আব্দুল্লাহ নামের এক ক্রেতা বলেন, হালিমের স্বাদের জাদুতে ভিন্নতা আছে নানা হালিমে। ‘নানা হালিম’ না হলে ইফতার পরিপূর্ণ হয় না। তাই প্রতিবছর এই হালিম নিতে আসি। খুলনার বিখ্যাত নানা হালিম ছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন নামে বিক্রি হচ্ছে হালিম। হালিম বিক্রি হচ্ছে ফুট গ্রেড পাত্রে ও সেই পুরোনো ঐহিত্য মাটির পাত্রে ১০০টাকা থেকে শুরু করে ১০০০টাকায় বিক্রি হচ্ছে হালিম। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ এবার হালিমের দাম অনেক বেশি। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, হালিম তৈরির উপকরণ তেল, মাংস ও মুগডালের দাম বেশি হওয়ার কারণে এর প্রভাব পড়েছে তৈরি হালিমের ওপর। এদিকে প্রথম রমজানেই নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে নানা প্রকার ইফতার সামগ্রী। ইফতারের মধ্যে রয়েছে খেজুর, বেগুনি, আলুর চপ, শাহী জিলাপি, রেশমি জিলাপি, পেঁয়াজু, ডিমের চপ, ফুলুরি, চিংড়ির চপ, পাকোড়া, ছোলা, মুড়ি, সবজি রোল, টিকিয়া, বোরহানি, চিড়া-দই, কলা, আখের রস, মাঠা, চিকেন ফ্রাই এবং এই মৌসুমের তরমুজসহ রকমারি ফল। প্রতিটি দোকানে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। তবে দাম একটু বেশি।