প্রতিদিনের ডেস্ক:
ডিগ্রি (পাস) কলেজের তৃতীয় শিক্ষকরা অবশেষে এমপিওভুক্ত হচ্ছেন। তাদের ৮ শর্তে এমপিওভুক্তির নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে এক দশকের বেশি সময় বিনা বেতনে চাকরি করা তৃতীয় শিক্ষকদের কষ্টের অবসান হচ্ছে।
জানা গেছে, বুধবার (১৩ মার্চ) ডিগ্রি স্তরের তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির নির্দেশ দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালককে চিঠি পাঠানো হয়েছে।মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সই করা চিঠিতে বলা হয়, এমপিওভুক্ত হওয়া ডিগ্রির তৃতীয় শিক্ষকরা প্রভাষক হিসেবে চাকরি শুরু করবেন নবম গ্রেডে ২২ হাজার ৫০০ টাকা বেতনে। এর সঙ্গে তারা অল্প কিছু বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা পাবেন।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা অনুযায়ী ডিগ্রি স্তরে একটি বিষয় পড়ানোর জন্য একটি কলেজে তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হয়। কিন্তু এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো অনুযায়ী কলেজে দুজন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা যায়।ফলে তিনজনকে নিয়োগ দিলেও একজন এমপিওভুক্তির বাইরে থেকে যান। কলেজগুলোতে ওই শিক্ষককে ‘তৃতীয় শিক্ষক’ বলা হয়। এমপিওভুক্ত হতে তৃতীয় শিক্ষকরা উচ্চ আদালতে গেলে আদালত তাদের পক্ষে আদেশ দেন। এরপর তৃতীয় শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা শুরু হয়।২০১০ সালের আগ পর্যন্ত বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত তৃতীয় শিক্ষকদের ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট এমপিওভুক্তির আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ তৃতীয় শিক্ষক এমপিওভুক্ত হন। ২০১০ সালের পর নিয়োগপ্রাপ্ত বিভিন্ন ডিগ্রি কলেজে প্রায় ৮৪১ জন তৃতীয় শিক্ষক নিযুক্ত হন এবং তারা এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। এ শিক্ষকরা অর্থ বিভাগ থেকে অনুমোদিত জনবল কাঠামোভুক্ত নয়।
এ কারণে তৃতীয় শিক্ষকদের যোগ্যতা, বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত ও কর্মরত থাকা সাপেক্ষে এমপিওভুক্ত করতে সম্মতির জন্য অনুরোধ জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পেলে আট শর্তে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য মাউশি অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মাউশি সূত্র জানায়, ৯টি অঞ্চল থেকে ৭৬৮ জন শিক্ষকের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নতুন করে এমপিওভুক্ত ৫২টি কলেজের শিক্ষকরা রয়েছেন। এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী ডিগ্রি স্তরের জন্য কাম্য শিক্ষার্থী আছে কি না, তা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ। চূড়ান্ত তালিকা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পর এমপিওভুক্ত করা হবে।যে ৮ শর্তে এমপিওভুক্তি >> শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ডিগ্রি স্তর এমপিওভুক্ত থাকতে হবে>> নীতিমালা অনুযায়ী তৃতীয় শিক্ষকের নিয়োগকালীন কাম্য যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে কর্মরত থাকতে হবে।>> এ বিভাগের ২০২৩ সালের ৬ এপ্রিল প্রকাশিত পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যানবেইসে অনলাইনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ডাটাবেইসে সংরক্ষিত তথ্যের সঙ্গে তুলনামূলক যাচাই-বাছাই করতে হবে। ডাটাবেইসে তথ্য যথাযথ না থাকলে কোনো তৃতীয় শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা যাবে না।>> শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৬ সালের ১৯ অক্টোবর প্রকাশিত পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ পাওয়া তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করতে হবে।>> তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি এমন প্রতিষ্ঠানে নতুনভাবে কোনো তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে না।>> নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিক কাম্য শিক্ষার্থী (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি তথ্য অনুযায়ী) থাকতে হবে। তবে বর্তমানে কাম্য শিক্ষার্থী না থাকায় কোনো শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে না পারলে পরবর্তীতে কাম্য শিক্ষার্থী পূরণ হলে মন্ত্রণালয়ের অনুমতিক্রমে এমপিওভুক্ত হতে পারবে।>> নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্য তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির পর, ওই এমপিও পাওয়া শিক্ষকদের নাম, পদবি, বিষয়, প্রতিষ্ঠানের নাম ও শিক্ষার্থীর সংখ্যাসহ প্রতিবেদন আগামী ৬ মাসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পঠাতে হবে।>> প্রতিষ্ঠানে কাম্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা (বিষয় ভিত্তিক) যথাযথ থাকতে হবে। তা না হলে ব্যক্তি এমপিওপ্রাপ্ত হবে না।