ক্যারিংম্যান মশিয়ারের মৃত্যু রহস্য কি অনুঘাটিতই থেকে যাবে? মাফিয়া ডন তবি-হাবিবুর সিণ্ডিকেটের হোতারাও থাকবে অধরা!

0
13

সুন্দর সাহা
শার্শার গোগা সীমান্তের নাটকীয় ভাবে মাফিয়া ডন তবি-হাবিবুর সিণ্ডিকেটের সোনার ক্যারিংম্যান মশিয়ারের মরদেহ ইছামতি নদী থেকে উদ্ধার হলেও এখনও রহস্যাবৃত্ত হয়ে আছে মৃত্যু রহস্য। একইভাবে অধরা থেকে গেছে আন্তর্জাতিক সোনা চোরাচালানী মাফিয়া ডন তবি এবং এই চক্রের সেকেণ্ড ইন কমাণ্ড হাবিবুরসহ সিণ্ডিকেটের হোতারা। মশিয়ারের মরদেহ উদ্ধার হলে তার শরীরে মিলেছে ৪০ পিস সোনার বার। যার ওজন ৫ কেজি দুই শত ৭১ গ্রাম। উদ্ধারকৃত সোনার মূল্য ৫কোটি ১০ লাখ ২৩ হাজার ২৮০ টাকা। যেখানে মশিয়ার ডুবে গিয়েছিল বলে তবি-হাবিবুর গং গল্প ছড়িয়েছিল সেখান থেকে দুই কিলোমিটার দুরে কাটাখালের মুখ থেকে উদ্ধার হয় মশিয়ারের লাশ। গোগা বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা এই উদ্ধার অভিযান চালায়। এসময় শার্শা থানার পুলিশ ও ডিবি পুলিশও উপস্থিত ছিল। গোগা সীমান্তবাসীর প্রশ্ন স্রোতবিহীন কোমর পানির মরা নদীতে সাতার জানা মশিয়ার ডুবে মারা গেল কিভাবে। ইছামতি নদীর ভারত সংলগ্ন এলাকায় নাকি ডুবে যায় মশিয়ার। যার চারদিন পরে বাংলাদেশের অংশে চরের দিকে ‘সামান্য কাঁদা-পানির’ মধ্য থেকে মশিয়ারের লাশ উদ্ধার হয়। অগ্রভুলোট বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা মশিয়ারের লাশ উদ্ধার করে। তখন তার কোমরে ও রানে দুটি জায়গায় কসটেপ জড়ানো দুটি টোপলা উদ্ধার করে। ওই কসটেপ এর টোপলা খোলার পর সেখান থেকে ৪০ পিছ সোনার বার উদ্ধার হয়। স্রোতহীন মরা নদী পানির তীব্রতাও কম। সেই নদীতে ৫ কেজি সোনার বারসহ মরদেহ কিভাবে দুই কিলোমিটার দুরে গেল। এ প্রশ্নের উত্তর মিরছে না সীমান্তবাসীর। মশিয়ারের স্ত্রী শাহনাজ বেগম বলেন, গত ১০ মার্চ বেলা ৩ টার সময় তার স্বামীকে তাদের হরিষচন্দ্রপুর গ্রামের রহিম বক্স, তার ছেলে হাবিবার রহমান ও একই গ্রামের জামাল ডেকে নিয়ে কসটেপ দিয়ে পেচিয়ে কি যেন বেঁধে দেয়। তার স্বামী ওই সময় ভাত খাচ্ছিল। আমি তাদের বললাম ভাত খেয়ে যাক তখন ওরা বলে এসে খাবে বেশী সময় লাগবে না। এরপর বিকেলে কুখ্যাত তবি বাহিনীর লোকজন মশিয়ার ভারতীয় অংশে পানিতে ডুবে গেছে বলে প্রচার করে। সীমান্তবাসীর দাবি, এই ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে প্রায় ২০দিন কিন্তু আজও পুলিশ অদৃশ্য কারণে আন্তর্জাতিক সোনা পাচারকারী কুখ্যাত তবি, ইছামতি নদীর পাড়ে বাড়ি রহিম বক্স, তার ছেলে হাবিবুর রহমান এবং জামালকে আটক করেনি। অথচ এদের আটক করলেই বেরিয়ে পড়তো থলের বিড়াল। মামলার তদন্তকর্তা সোনা পাচার চক্রের হোতা আন্তর্জাতিক সোনা সিণ্ডিকেটের গোগা সীমান্তের মাফিয়া ডন তবি-হাবিবুর-জামাল-রহিমবক্সসহ তাদের গড ফাদারদের মুখোশ উন্মাচন করা সম্ভব হতো। সীমান্তবাসী অভিযোগ, মশিয়ার পানিতে ডুবে মারা যাননি। কার্যত মাফিয়া ডন তবি-হাবিবুর গং সোনার বড় চালান গায়েব করতেই মশিয়ারকে জীবন দিতে হয়েছে। অন্ততঃ ১৫ কেটি টাকার সোনার চালান গায়েব করতেই বলির পাঠা বানানো হতে পারে অসহায় এই মানুষটিকে। এলাকাবাসী আরও জানান, সোনার চালান হজম করতেই মশিয়ারকে হতা করে ইছামতি নদীর কাটাখাল এলাকায় নিয়ে তার লাশ নদীতে ফেলে দেয়ার কাহিনী প্রচার করা হচ্ছে কিনা সেটিও তদন্ত করার দাবি উঠেছে। তবে বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধাঁর কেউ আছে কিনা সেটি নিয়েই যত প্রশ্ন। সীমান্তবাসী আরও জানায়, গোগার সোনা এবং ফেনসিডিল সিণ্ডিকেটের হোতা কুখ্যাত তবি সিণ্ডিকেট সাধারনত আন্তর্জাতিক সোনা চোরাচালানী সোহেল-মাহাবুব, রমজান, কুদ্দুস, রেজা, জিয়া, আলমগীর গংয়ের হয়ে সোনার চালান পাচার করে। এলাকাবাসির দাবি তবি এবং হাবিবুরকে আটক করে জিজ্ঞাসা করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। স্থানীয়রা জানান, হরিষচন্দ্রপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান ও তার পিতা রহিম বক্সকে আটক করলে কে-কে সোনা পাচারের সাথে জড়িত সব বেরিয়ে আসবে। যারা এর সাথে বা স্বর্ণ পাচার করে থাকে সেসব লোকও মশিয়ারকে উদ্ধারের সময় উপস্থিত ছিল। সূত্র জানায়, এই সোনার চালানটি ছিল সুমন হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইণ্ড সোহেলের। সোনার চালানটি ভারতে আন্তর্জাতিক সোনা চোরাচালানী মাফিয়া ডন বস্ গৌতমের ডেরায় পৌছানোর দায়িত্ব পড়ে মাহবুবের উপর। মাহবুবের বাড়ি শার্শা এলাকায়। বড় একটি সোনার চালান গোগা সীমান্ত দিয়ে মাফিয়া ডন বস্ গৌতমের ডেরায় পৌছানোর কাজে নিয়োজিত হচ্ছে গোগা সীমান্তের আরেক মাফিয়া ডন তবি। সোনা আসার খবর জানতে পেরে তবি হাবিবুর, তার পিতা রহিম বক্স এবং জামালসহ তার কাছের লোকজনকে খবর দেয়। এর মাঝেই মাহবুবের সোনার চালান চলে আসে গোগা সীমান্তে। তখনই তার পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক মশিয়ারকে লোভ দেখিয়ে নিয়ে আসে। এরপর নাটক সাজিয়ে সোনার বড় চালান আটক করেছে। এসব বিষয়ের সব কিছু পুলিশের নলেজে থাকলেও তারা অদৃশ্য কারনে টু-শব্দটি করছেন না। এই সোনার চালানের সূত্র ধরেই পুলিশ যশোর থেকে একটি সোনার চালান আটক করেছে। তারপরও আন্তর্জাতিক সোনা চোরাচালানী মাফিয়া ডন তবি এবং এই চক্রের সেকেণ্ড ইন কমাণ্ড হাবিবুর, রহিমবক্স এবং জামালসহ সিণ্ডিকেটের কাউকেই আটক করতে পারেনি বা করেনি। সবাই প্রকাশে থাকলেও পুলিশের এই নির্লিপ্ততায় নানান অভিযোগ ঘুরে ফিরছে সীমান্ত থেকে শহর পর্যন্ত মানুষের মাঝে।