গুরুত্ব দিতে হবে শ্রমবাজারে

0
17

সঠিক পরিকল্পনার অভাব ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের কারণে একের পর এক শ্রমবাজার হারাতে বসেছে বাংলাদেশ। অসাধু চক্রের কাছে একপ্রকার জিম্মি হয়ে আছে এ খাত। সৌদি আরবের বাজারে রেমিট্যান্স কমেছে। কোরিয়া, কাতার ও লিবিয়ার বাজারের খবর ভালো নয়। সম্ভাবনা জাগালেও রোমানিয়ার বাজার হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এমন অবস্থা দেশের জন্য অশনি সংকেত নয় কি? তবে আমাদেরও প্রবাসের শ্রমবাজার ধরে রাখতে বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বিকল্প হিসেবে আফ্রিকার দেশগুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এ দেশগুলো হতে পারে আমাদের শ্রমবাজারের নতুন ডেস্টিনেশন। সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে সম্ভাবনা থাকলেও অনিশ্চয়তা কাটছে না। জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের ১৫৮টিরও বেশি দেশে জনশক্তি রপ্তানি করে বাংলাদেশ। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) বলছে এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে বিদেশে। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে জনশক্তি রপ্তানিতে সহসাই সুসংবাদ মিলছে না বলে মনে করছেন জনশক্তি রপ্তানি খাতের সংশ্লিষ্টরা। এদিকে ডলার বাজারে অস্থিরতার মধ্যে রেমিট্যান্স অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। গত দুই বছরে কাজের জন্য দেশের বাইরে গেছেন ২০ লাখ কর্মী। দেশের বাইরে যখন প্রবাসী বাড়ছে, তখন রেমিট্যান্স কমছে দিনকে দিন। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলতে সরকার নানাভাবে তৎপরতা চালিয়ে আসছে। গত দুই বছরে শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায় থেকে একাধিকবার ইতিবাচক ঘোষণা এলেও ওই সিন্ডিকেটের জন্যই তা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে গেছে। নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। একই সঙ্গে সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি অনিয়মিত শ্রমিকদের বিরুদ্ধে নানারকম হয়রানি শুরু হয়, যা আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। মালয়েশিয়ায় আমাদের বিশাল এক শ্রম অভিবাসী কাজ করছে। মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে অবশ্যই আগের ভুলত্রæটি মোকাবিলা করে এই শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করতে হবে। সে ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সহনশীল ব্যয়ের মাধ্যমে কর্মী প্রেরণ করাটাই এখন বড় কর্তব্য। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। আর এর জন্য প্রয়োজন উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও অধিক কর্মসংস্থান। বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুযোগ ভোগ করছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ তরুণ। এদের শ্রমকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া। সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার যাতে প্রসারিত হয় এ লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া, সুদান, উগান্ডা এবং জাম্বিয়া বাংলাদেশকে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রস্তাব দিয়ে আসছে। সেসব প্রস্তাব অনুযায়ী বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা দেশগুলোতে সহজ শর্তে কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্পপণ্য, কৃষিজ খাদ্যশিল্প এবং তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগে মনোযোগ দিতে পারে। এসব দেশে আমাদের বড় কর্মসংস্থানের বাজার তৈরির সুযোগ হতে পারে। এজন্য জোরালো কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।