আজ নাজাতের প্রথম দিন

0
12

আবু সাইদ মারুফ
আজ নাজাতের প্রথম দিন। পবিত্র মাহে রমজানের একুশতম দিবস। রহমত, মাগফিরাত আর নাজাত- এই তিন ভাগে তিনটি দশকে বিভক্ত রমজানের বরকতময় মাস। সে আলোকে আজ রোজাদারের জন্য রমজানের শেষ দশক তথা নাজাতের প্রথম দিন। উম্মুল মুমেনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-এর রেওয়ায়েতে পবিত্র বুখারি ও মুসলিম শরিফের হাদিসে এসেছে, ‘রমজানের শেষ দশকের আগমন ঘটলে আল্লাহর রাসুল (সা.) ইস্পাত-কঠিন দৃঢ় মনোবলে নিজেকে সংহত করতেন, রাত্রিসমূহে নিজে জাগরণে থাকতেন এবং গৃহের অধিবাসী অন্যদেরও রাত জেগে ইবাদতে মশগুল থাকার প্রেরণা জোগাতেন।’ রমজানের শেষ দশকেই রয়েছে লাইলাতুল কদর, এতেকাফ পালনের সুযোগ, ইবাদত পালন ও আমল প্রক্রিয়ায় রাসুল (সা.)-এর অধিকতর মনোনিবেশ, ইহতেসাব তথা আত্মবিশ্লেষণ ও আমলের ন্যায়ানুগ হিসাবের বিষয়ে কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি ও রমজানের বিদায়সহ নানাবিধ কারণে এ দশকটি রোজাদারের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হিসেবে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। এ মানুষকেই তিনি পৃথিবীতে তার প্রতিনিধিত্বের মর্যাদাও প্রদান করেছেন। সমগ্র সৃষ্টিকুলের ওপর সর্বোচ্চ সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের আসন দেয়ার পরেও অজস্র কৃপা-ভান্ডারে মানুষকে তিনি মমতার বাঁধনে জড়িয়ে রেখেছেন। জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও অপরিসীম সৌন্দর্য দান করেও তিনি সেই মানুষকেই আবার সৃষ্টিকুলের সর্বনিকৃষ্ট হিসেবে জরাগ্রস্ততার অতল দেশে অধঃপতিত বলেও অভিমত ব্যক্ত করেছেন। মানুষ তার কর্মের বিচারেই পারলৌকিক জীবনে সীমাহীন ও কল্পনাতীত দুর্ভোগ ও যন্ত্রণার স্থান জাহান্নামের উত্তপ্ত অগ্নিকুণ্ডের জ্বালানিতে পরিণত হবে। কত ভয়াবহ সেই নরকাগ্নির আজাব তা ভাবতেই শরীর-মন সজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে। উম্মতে মোহাম্মাদির (সা.) ভাগ্যাকাশে রয়েছে বর্ণনাতীত বরকতের মাহে রমজান। যার শেষ দশকে সম্পন্নকৃত ইবাদতের পরিপ্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ সিয়ামব্রত পালনকারীদের জাহান্নামের সেই ভয়াবহ শাস্তি থেকে পরিত্রাণের ব্যবস্থা করে দেবেন। এ বিষয়েই মহানবীর (সা.) ঘোষণা, ‘ওয়া আখিরুহু ইতকুম মিনান্নার’ অর্থাৎ রমজানের শেষ দশক রোজাদারের জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির অবলম্বন। পবিত্র রমজানের শেষ দশকই হলো বান্দার জন্য তার বহুল প্রত্যাশিত নাজাতের অসিলা। এ দশকটির অত্যধিক গুরুত্ব, ফজিলত ও তাৎপর্যের পেছনে রয়েছে সহস্র মাসের চাইতেও উত্তম রজনী ‘লাইলাতুল কদর’-এর উপস্থিতি। আর লাইলাতুল কদরের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের মূল কারণ হলো, এ রাতেই অবতীর্ণ হয়েছে পবিত্র আল কোরআন; যা মহান আল্লাহর মহিমাময় বাণী এবং মানবজীবনের জন্য পরিপূর্ণ এক নির্দেশিকা। তাই রমজানের শেষ দশকে পালনকৃত নেক আমলসমূহের বিনিময়ে, লাইলাতুল কদরের মহিমান্বিত বরকতের ভিত্তিতে এবং নির্ভুল ও মহাপবিত্র কোরআন মাজিদের অব্যর্থ সুপারিশের বদৌলতে রোজাদার বান্দাগণ দোযখের আজাব থেকে নাজাত লাভে ধন্য হবেন।
রমজানের শেষ দশকে আমাদের কর্তব্য হলো, ইবাদতের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়া। কেননা, এই দশকের মধ্য দিয়েই রমজান আমাদের থেকে তার বিদায়ের বার্তা ঘোষণা করে। তাই আমরা নিবিষ্টচিত্তে আমাদের রোজা-পালন, তেলাওয়াতে কোরআন, কিয়ামুল্লাইল, তাহাজ্জুদ, ইস্তেগফার, তওবা ও মোনাজাতসহ এই দশকে সমস্ত ইবাদত পালনে ব্রতী হব। বিশেষ করে আমাদের আন্তরিক প্রয়াস চালাতে হবে যেন লাইলাতুল কদরের অপরিসীম ফজিলত ও বরকত থেকে মাহরুম না হয়ে যাই। সে জন্য রমজানের একুশতম, তেইশতম, পঁচিশতম, সাতাশতম ও ঊনত্রিশতম রাতকে আমরা একনিষ্ঠ ইবাদতের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করব। কেননা উপরিউক্ত পাঁচ রজনীর কোনো এক রজনীতেই মহিমান্বিত শবেকদর আমাদের জন্য তার অগণিত রহমত ও বরকতের শান্তিময় সুধা নিয়ে হাজির হবে। মহামহিম আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত কোরআনুল কারিম ধরাপৃষ্ঠে আবির্ভাবের এ পুণ্য রজনীর নেক আমলসমূহ আমাদের জন্য ‘ইতকুম মিনান্নার’ তথা জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের হাতিয়ার হবে।