খুলনা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ, শিশু চিকিৎসা সংকটে

0
7

খুলনা প্রতিনিধি
তীব্র তাপদাহের কারণে খুলনা মহানগরীর খানজাহানআলী থানার মীরেরডাঙ্গায় অবস্থিত খুলনা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেড়েছে আশংকাজনক হারে। হাসপাতালটিতে কোন শিশু বিশেষজ্ঞ বা শিশু কনসালটেন্ট না থাকায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের স্বজনদের। অন্যদিকে হাসপাতালটিতে ওষুধ এবং স্যালাইনের পর্যাপ্ততা থাকলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ জনবল সংকট এবং জরাজীর্ণতার কারণে বিভাগীয় এ সংক্রামণ ব্যাধি হাসপাতালটি থেকে কাঙ্খিত সেবা বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কিংবা জনপ্রতিনিধিদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, তীব্র তাপদাহের কারণে চলতি মাসের শুরু থেকেই হাসপাতালটিতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর পাশাপাশি বমি, পেটে ব্যথা, পাতলা পায়খানা, বমি বমি ভাব এ জাতীয় রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। চলতি মাসের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ভর্তিকৃত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে তিন শতাধিক। ভর্তিকৃত রোগী ছাড়াও প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত, পাতলা পায়খানা, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব এ জাতীয় রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসেন। হাসপাতালে ভর্তি হতে অনিচ্ছুক এসব রোগীদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপত্র দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। হাসপাতালটিতে রয়েছে মাত্র ২০ শয্যা। এর মধ্যে ১০ শয্যা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর জন্য বরাদ্দ থাকলেও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিজস্ব উদ্যোগে ১৪ টি বেডের ব্যবস্থা করেছেন। বাকী শয্যাগুলো অন্যান্য সংক্রামক রোগীর জন্য বরাদ্দ। পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য পৃথক কোন ওয়ার্ড নেই। নেই কোন কেবিনের ব্যবস্থা। একই ওয়ার্ডে পুরুষ এবং মহিলাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। রোগীর চাপ বেশি হলে ভর্তিকৃত ১৫ নং রোগী থেকে পরবর্তী রোগীগুলোকে ফ্লোরে শুয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হয়।
প্রতিদিন জিরো থেকে ৪ বছর বয়সী ৪/৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত, পাতলা পায়খানা, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব এ জাতীয় শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলেও শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা শিশু কনসালর্টেন্ট না থাকায় এ সব শিশুদের প্রাথমিক চিকিৎসা বা পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। হাসপাতালটিতে শিশুদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড, বেড কিংবা কেবিনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় শিশুরাও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতালটি থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা সেবা না পেয়ে বিপাকে পড়তে হয় তাদের স্বজনদের। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তাদেরকে শিশু হাসপাতাল কিংবা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুঁটতে হয়। হাসপাতালে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ হাবিবুর রহমান এই তীব্র তাপদাহে ছোট বাচ্চাসহ সবাইকে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ খাবার পানি, তরল জাতীয় খাবার এবং খাবারের পূর্বে ভালোভাবে হাত ধুয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। পরামর্শ দিয়েছেন রাস্তার পাশে শরবত জাতীয় কোন খাবার না খেতে। তিনি বলেন, হাসপাতালে ওষুধ এবং কলেরার স্যালাইন পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে হাসপাতালটিতে শিশু বিশেষজ্ঞের কোন পদ নেই। শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা ১ বছরের নীচে শিশুদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় থাকে না। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালটি জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ছাদের পলেস্তার খসে খসে পড়ছে। নতুন ভবন নির্মাণ একান্ত প্রয়োজন। জনবল প্রয়োজন। পদায়িত চিকিৎসক আমি একজন। বাকী ৪ জন ডেপুটেশনে আছেন। ৫ জনকে বাই রোটেশন ২৪ ঘন্টা ডিউটি করতে হয়। ৬ জন নার্স যথেষ্ট নয়। হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার, নার্স এবং স্টাফদের কোয়ায়াটারগুলো দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সমস্যা সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগিদ দিলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।