যশোরে এনে স্ত্রী মিতুকে খুন করে স্বামী ডিবির জালে ধরা নিলয়ের দায় স্বীকার

0
2

নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর বুকভরা বাওড়পাড় থেকে উদ্ধার নারীর পরিচয় মিলেছে। তার নাম খাদিজা খাতুন ওরফে মিতু কর্মকার। তিনি উপজেলার ধানদিয়া কৃঞ্চনগর গ্রামের আজগর আলী সরদারের মেয়ে। এ ঘটনায় আটক হয়েছেন তার স্বামী যশোর সদর উপজেলার চান্দুটিয়া গ্রামের মৃন্ময় ভদ্র ওরফে নিলয় (৩০)। তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। হত্যার কারণ হিসেবে খুনি মৃন্ময় ভদ্র ওরফে নিলয় বলেন তার স্ত্রীর চরিত্র ভাল ছিল না। ড্যান্স করে বেড়াতো। তার কমপক্ষে ১০টি বিয়ে রয়েছে। প্রায় প্রায় ব্লাকমেইল করার কারণে স্ত্রীকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন নিলয়। ২৩ এপ্রিল রাতে পাটকেলঘাটা থেকে তাকে যশোরে এনে বেড়ানোর কথা বলে রাত ১১টার দিকে বুকভরা বাওড়পাড়ে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। প্রেসব্রিফিংয়ের সময় নিলয়কে অনুতপ্ত কিংবা অনুনোচনা করতে দেখা যায়নি। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহতের স্বজনরা যশোরের উদ্দেশ্যে পাটকেলঘাটা থেকে রওনা হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মিতুর বোন আয়েশা বেগম। বুধবার (২৪ এপ্রিল) যশোর শহরতলী বুকভরা বাওড়পাড়ে পড়েছিল হাতে মেহেদি পরিহিত অজ্ঞাত নারীর লাশ। কপালে সিঁদুর ও হাতে শাখা-পলা থাকায় ধারণা করা হচ্ছিল তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের গৃহবধূ। সকালে স্থানীয়রা লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এক কান দুই করে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাওড়পাড়ে উৎসুক মানুষের ভিড় জমে ওঠে। খবর পেয়ে থানা ও ডিবি পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। লাশ উদ্ধার করে পাঠায় যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে। এরভেতর ডিবির একটি চৌকষ দল হত্যার ক্লু উদঘাটন ও খুনিকে আটক করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার যুবক স্বীকার করে তার নাম মৃন্ময় ভদ্র ওরফে নিলয়। প্রকৃত ঠিকানা যশোরের চান্দুটিয়া গ্রাম। তিনি মদন কুমার ভদ্রের ছেলে। তবে বসবাস করেন কলারোয়া উপজেলার দামুদারকাঠি গ্রামে। তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেন। পরে ডিবি কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেন মৃন্ময় ভদ্র ওরফে নিলয়। তার দাবি বছরখানেক আগে একটি অনুষ্ঠানে খাদিজা খাতুনের ড্যান্স দেখে প্রেমে পড়েন। পরে বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। খাদিজা ধর্মান্তরিত হন। নাম হয় মিতু কর্মকার। বিয়ের সময় তার একাধিক বিয়ের কথা জানতেন না নিলয়। পরে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার শুরু করেন। এ সময় মিতু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ও ছবি ধারণ করে রাখতেন। এক পর্যায়ে মিতু স্বামীকে প্রায় প্রায় ব্লাকমেইল করে অর্থ হাতিয়ে আসছিলেন-দাবি নিলয় ভদ্রের। একই সময়ে মিতু বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ড্যান্স করা অব্যাহত রাখেন। স্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ নিলয় দিশেহারা হয়ে ওঠেন। সম্প্রতি তিনি ব্লাকমেইলের হাত থেকে রক্ষা পেতে স্ত্রী মিতুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। নিলয় স্বীকার করেন-পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৩ এপ্রিল রাতে পাটকেলঘাটার একটি অনুষ্ঠান থেকে মিতুকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় যশোরে আনেন। রাত ১১টার দিকে বাওড়পাড়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন না ফেরার দেশে। মিতুর যে মোবাইল ফোনে আপত্তির ভিডিও-ছবি ছিল, তা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেন কিন্তু আলামত থেকে যায় বাওড়পাড়ে। যার সূত্রধরে ডিবি পুলিশ তাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে পাকড়াও করতে সমর্থ হয়। সকাল ১০টার দিকে হালসা গ্রাম থেকে মৃণময়কে আটক করা হয়। ডিবির এসআই খান মাইদুল ইসলাম রাজীব সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তার নেতৃত্বে একটি টিম মৃন্ময় ভদ্র ওরফে নিলয়কে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করেন। নিলয় হত্যার দায় স্বীকার করার পর প্রেসব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে।