ফুডগ্রেড বোতলে ভোজ্যতেল বাজারজাত করার দাবি

0
4

প্রতিদিনের ডেস্ক:
ভোজ্যতেল সংরক্ষণ বা সরবরাহের ক্ষেত্রে নীল রঙের ড্রাম ব্যবহার করা হয়। যাতে বিষাক্ত হয়ে যেতে পারে তেল। তাই ব্যবসায়ীদের কেমিকেলের এসব ড্রামের পরিবর্তে ফুডগ্রেড বোতল বা প্যাকে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণে বাধ্য করারসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এ দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।তারা জানান, ড্রামে বাজারজাত করা ৫৯ শতাংশ ভোজ্যতেলই ভিটামিন ‘এ’সমৃদ্ধ নয়। আর ৩৪ শতাংশ তেলে সঠিকমাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ নেই। কিন্তু আইন অনুযায়ী সব ধরনের ভোজ্যতেলে নির্ধারিত মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’থাকা বাধ্যতামূলক। এছাড়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো উপকরণ দিয়ে তৈরি প্যাকেট বা পাত্রে ভোজ্যতেল বাজারজাত করা যাবে না।বক্তারা আরও বলেন, ভিটামিন ‘এ’র অভাবে-অপরিণত শিশুর জন্ম, নারীদের গর্ভধারণে সমস্যা, শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, জন্মগত ত্রুটি, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ, রাতকানা, চোখ শুষ্ক হয়ে অন্ধত্বের সৃষ্টি হয়। শিশু মৃত্যু বৃদ্ধি এবং চামড়া শুষ্ক হয়ে যাওয়াসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে হৃদরোগ ও কিডনি রোগসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বেড়ে চলেছে। ড্রামের অস্বাস্থ্যকর এসব তেল গ্রহণের কারণে এই পরিস্থিতি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে।নন ফুডগ্রেড ড্রামে ভোজ্যতেল সরবরাহ বন্ধ করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে জানিয়ে বক্তারা বলেন, ২০২২ সালে অস্বাস্থ্যকর নন ফুডগ্রেড ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাত ও পরিবহন বন্ধ করার জন্য নির্দেশ জারি করে সরকার। কিন্তু কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং অন্যান্য সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সময়সীমা আরও বাড়ানো হয়। তখন সয়াবিন তেল বাজারজাতকরণের সময়সীমা ২০২২ সালের ৩১ জুলাই এবং খোলা পাম অয়েল বাজারজাতকরণের সময়সীমা একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এই সময়ে নন ফুডগ্রেড ড্রামে তেল বাজারজাত বন্ধকরণে শতভাগ নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও এটি করতে ব্যর্থ হয়েছে।ক্যাবের দাবিগুলো হলো-১. সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান (জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বিএসটিআই) কর্তৃক ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মার্কেট মনিটরিং করা হয়। কিন্তু কোনো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে না। মার্কেট মনিটরিংয়ে কোনো ধরনের জরিমানা করা হয় না। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে আইন অমান্যকারী ব্যবসায়ীদের সরকারি নিষেধাজ্ঞা মান্য করতে বাধ্য করতে হবে।২. আইন প্রতিপালনে ব্যবসায়ীদের কেমিকেল ড্রামের পরিবর্তে ফুড গ্রেডেড বোতল অথবা প্যাকে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণে বাধ্য করতে হবে।৩. রিফাইনারি কোম্পানিগুলো যেসব ড্রামে তেল সরবরাহ করে সেগুলোতে লেবেল এবং উৎস শনাক্তকরণ তথ্য যুক্ত করতে হবে।৪. সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী রিফাইনারি ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোর আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের খাদ্য ব্যবসার লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করতে হবে।৫. অস্বাস্থ্যকর, অনিরাপদ ও ফুডগ্রেড বিহীন ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাত বন্ধে ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।৬. অস্বাস্থ্যকর ড্রামে তেলের স্বাস্থ্য ক্ষতি সম্পর্কে নীতিনির্ধারক, উৎপাদক, সরবরাহকারী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।৭. সরকার, জনস্বাস্থ্যবিদ, সুশীল সমাজ, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যম, উন্নয়ন সহযোগীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই মিলে ভোক্তাদের খোলা ভোজ্যতেলের পরিবর্তে বোতল বা প্যাকেটজাত ভোজ্যতেল গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করতে হবে।মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া, ক্যাবের কোষাধ্যক্ষ ড. মো. মুঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার, সাবেক যুগ্ম সচিব ও ক্যাব কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য মোহাম্মদ শওকত আলী খান, ক্যাব কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য আফরোজা সুলতানা প্রমুখ।