দাবদাহের কবল থেকে পরিবেশ রক্ষায় দক্ষিণে বিপুল পরিমান গাছ রোপনের উদ্যোগ যশোর বনবিভাগের

0
17

নিজস্ব প্রতিবেদক
দাবদাহের কবল থেকে পরিবেশ রক্ষায় দক্ষিণের জেলাগুলোতে বনজ ও ফলজ গাছ রোপনের উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। ইতিমধ্যে যশোর সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় কার্যালয়ের পক্ষ থেকে জেলার তিন উপজেলায় ৫৫ কিলোমিটার সড়কজুড়ে ৫৫ হাজার প্রজাতির চারা রোপস করা হয়েছে। সরকারের গৃহিত টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় স্ট্রীপ বাগান সৃজণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এ চারা রোপন করা হয়। সামাজিক বনবিভাগ যশোর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৯ থেকে ২০২২ আর্থিক বছর থেকে টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় স্ট্রীপ বাগান সৃজণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এ কর্মসুচি চলমান রয়েছে। তবে এবছর দেশের দক্ষিণের এ জেলা অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্পের কাজ বেগমানের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যে যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার আপার ভদ্রা নদীর কেশবপুর উপজেলায় ৯নং গৌরিঘোনা ইউনিয়নের গৌরিঘোনা বাজারের পুরাতন নদীর মাথা হতে সন্যাস গাছা ভাঙ্গাপুল, চৌগাছা উপজেলার ২নং পাশাপোল ইউনিয়নে কালিয়াকুন্ডি খালের পাড়, কালিয়াকুন্ডি ব্রীজ হতে হাউলি ব্রীজ, ঝিকরগাছা উপজেলার গঙ্গানন্দপুর ও মাগুরা ইউনিয়নে কপোতাক্ষ নদের দুই পাড়ে, ছুটিপুর ব্রীজ থেকে গঙ্গানন্দপুর মৌজা সীমানা ও ছুটিপুর ব্রীজ হতে মাগুরা গজালী খাল পর্যন্ত মোট ৫৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ গাছের চারা রোপন করা হয়। এর পাশাপাশি কেশবপুর উপজেলায় ৯নং গৌরিঘোনা ইউনিয়নের গৌরিঘোনা বাজারের পুরাতন নদীর মাথা হতে সন্যাস গাছা ভাঙ্গাপুল পর্যন্ত ২০ হাজার পিস বিভিন্ন গাছের চারা স্ট্রিপ সৃজণ করা হয়েছে। বাগানটিতে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ১০০ জন। এরমধ্যে ৭২ জন পুরুষ ২৮ জন মহিলা উপকারভোগী সম্পৃক্ত আছেন। বাগানটিতে গামার, চিকরাশি, জারুল, অর্জুন, আকাশমনি, মেহগিনি, বাবলা, শিলকড়ই, জলপাই, জাম, আমলকি, কাঠাল, আমড়া, বহেরা, নিম, চালতাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ১০ বছর পর বাগানের আবর্তকাল উত্তীর্ন হলে বাগানের গাছ বিক্রয়পূর্বক বিক্রয়লব্ধ অর্থের ৫৫% লভ্যাংশ উপকারভোগী সদস্যদের মাঝে সমভাবে প্রদান করা হবে। উপকারভোগীরা স্বত:স্ফূর্তভাবে বাগানটির সংরক্ষন ব্যবস্থা জোরদার রেখেছেন।
সামাজিক বন বিভাগ যশোরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, সহকারী বন সংরক্ষক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ফরেষ্ট ও অন্যান্য বন কর্মচারীরা সার্বক্ষনিক তদারকি করছেন বলে সুবিধাভোগীরা জানান। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সামাজিক বনবিভাগের গৃহিত প্রকল্প এলাকা যশোর কেশবপুর উপজেলার আপার ভদ্রা নদীর তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে সৃচিত বাগানটি এলাকায় দৃষ্টিনন্দন পরিবেশের আবহ তৈরী করেছে। প্রাকৃতি পরিবেশ উন্নত হয়েছে এবং বন বিভাগ কর্তৃক সবুজায়নের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর হয়েছে। এলাকার স্থানীয় লোকজন বিদ্যমান গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছেন। বিভিন্ন প্রজাতির পাখ- পাখালির কলরবে বাগানটি পরিপূর্ন। আপার ভদ্রা নদীর তীর সংরক্ষনে বাগানটি খুবই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে বলে স্থাণীয়রা জানান। বাগানটি ভূমি ক্ষয়, বাঁধ সংরক্ষন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধে সহায়তা করছে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও জলবায়ূ পরিবর্তনের বিরূপ প্রভা মোকাবেলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে আশা করা করেন সংশ্লিষ্টরা। একইভাবে চৌগাছা উপজেলার ২নং পাশাপোল ইউনিয়নে কালিয়াকুন্ডি খালের পাড়ে কালিয়াকুন্ডি ব্রীজ হতে হাউলি ব্রীজ পর্যন্ত ২০১৯- ২০২০ আর্থিক সনে টেকসইবন ও জীবিকা (সুফল) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বাঁধে ১৫,০০০টি বিভিন্ন প্রজাতির চারা রোপন করে ১৫ কিলোমিটার (সিডলিং) বাঁধ বাগানটি এলাকায় সাড়া ফেলেছে। অতিস¤প্রতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি ও উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বাগানটি পরিদর্শন করেন। একই ভাবে ঝিকরগাছা উপজেলার গঙ্গানন্দপুর ও মাগুরা ইউনিয়নে কপোতাক্ষ নদের দুই পাড়ে ছুটিপুর ব্রীজ হতে গঙ্গানন্দপুর মৌজা সীমানা ও ছুটিপুর ব্রীজ হতে মাগুরা গজালী খালের পাড়ে ২০ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছের বাগান মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি করে। বাগানটি ভূমিক্ষয়, বাঁধ সংরক্ষন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধে সহায়তা করছে বলে উপকারভোগীরা জানান। সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে যশোরসহ দক্ষিনাঞ্চলের জেলাগুলোতে যে পরিবেশ বিপর্যয়ের লক্ষণ ফুটে উঠেছে। এ থেকে পরিত্রানে গাছ-গাছালী সৃজণের বিকল্প নেই। এরই কারণে সামাজিক বনবিভাগের পক্ষ থেকে চলমান কার্যক্রম। ভবিষ্যতে এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।