খাতুনগঞ্জে উত্তাপ ছড়াচ্ছে পেঁয়াজ-রসুন-আদার দাম

0
7

প্রতিদিনের ডেস্ক
তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে খাতুনগঞ্জের বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে পেঁয়াজ, রসুন ও আদা। ঈদুল ফিতরের পর ১৫ দিনের ব্যবধানে হঠাৎ বাড়তে শুরু করেছে এসব নিত্যপণ্যের দাম। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০ টাকা, রসুন ৩০ ও আদা ৩৫-৪০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।ভোগ্যপণ্যের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই। এ বাজার থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ আশপাশের জেলা-উপজেলায় ভোগ্যপণ্য সরবরাহ করা হয়। পাইকারি এ বাজারে দাম বাড়লে এর প্রভাব পড়ে চট্টগ্রামজুড়ে।
খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। পাশাপাশি চোরাইপথে আসা ভারতীয় পেঁয়াজের জোগানও কমে যাওয়ায় পেঁয়াজের বাজার কিছুটা অস্থিতিশীল। পাশাপাশি রসুন ও আদার জোগান আসে চায়না (চীন) থেকে। চায়নায় বুকিং রেট বেড়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশে রসুন ও আদার দাম বাড়তি।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, ঢাকা মহানগরীর খুচরা বাজারগুলোতে বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ ৫৮ থেকে ৭৫ টাকা, রসুন ১৭০ থেকে ২৪০ ও আদা ১৯০ থেকে ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মাত্র ২০ দিন আগে পেঁয়াজের খুচরা দাম ছিল ৪৫-৬০ টাকা, রসুন ১২০ থেকে ২২০ ও আদার দাম ছিল ১৯০ থেকে ২৫০ টাকা।রোববার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, খাতুনগঞ্জে ব্যস্ততা কম। বাইরের জেলা থেকে ভোগ্যপণ্য নিতে আসা ট্রাকগুলো আসেনি। তবে রাতে প্রবেশ করা ট্রাকগুলো পণ্য লোড-আনলোড করছে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী আবু তৈয়ব বলেন, ‘বৃহত্তর চট্টগ্রামে পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এতে বাইরের জেলাগুলো থেকে আসা ট্রাক সকালের পর থেকে খাতুনগঞ্জ, চাক্তাইয়ে আসতে পারেনি। যে কারণে ব্যস্ততা কম। না হলে সপ্তাহের প্রথম দিন হিসেবে রোববার সব সময় ব্যস্ততা বেশি থাকে।’
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজারের প্রায় সবগুলো আড়তে পেঁয়াজ, রসুন, আদা এবং আলু বেচাকেনা হয়। এ বাজারের দোকানি আবু তৈয়ব বলেন, ‘এ সপ্তাহে পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। যে কারণে দাম বাড়ছে। রসুন ও আদার আন্তর্জাতিক বুকিং রেটও বেড়েছে। রোজার ঈদের পর প্রতি কেজি পেঁয়াজে কমপক্ষে ১০ টাকা বেড়েছে। শনিবার বন্দর থেকে রসুন ডেলিভারি হয়েছে ১৯০ টাকা কেজিতে। অথচ ঈদের পরেও খাতুনগঞ্জে রসুনের দাম ১৪৫ টাকায় নেমেছিল। আজ (রোববার) ১৯৮ থেকে দুইশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘রমজানে টিসিবির পেঁয়াজ বাজারে ছিল। যে কারণে পাইকারি বাজারের মতো খুচরায়ও পেঁয়াজের দাম ছিল কম। এখন টিসিবিও পেঁয়াজ দিচ্ছে না। যে কারণে পেঁয়াজের দাম ধীরে ধীরে বাড়ছে।’
খাতুনগঞ্জের বড় আড়তদার ব্যবসায়ী মেসার্স এ এইচ ট্রেডার্সের ম্যানেজার ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘বাজারে হঠাৎ করে পেঁয়াজের জোগান কমেছে। নতুন পেঁয়াজ ওঠার সময় প্রায় শেষ। এতে খাতুনগঞ্জের বাজারে পেঁয়াজ কম আসছে। তাছাড়া রমজানে প্রচুর ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে ছিল। আমদানি না হলেও বর্ডার দিয়ে পেঁয়াজ নিয়ে আসতো অনেকে। এখন তাও কমে গেছে। যে কারণে দাম বাড়ছে।’মধ্যম চাক্তাইয়ের পেঁয়াজ-রসুনের আড়তদার ব্যবসায়ী বশর অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী আবুল বশর  বলেন, ‘রমজানে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৫০-৫২ টাকা কেজিতে। এখন মান ও আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায়।’
তিনি বলেন, ‘১৫ দিন আগেও রসুন ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হতো। আদা বিক্রি হতো ১৫০ টাকায়। এখন রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকায়, আদা বিক্রি ১৮২ থেকে ১৮৫ টাকা কেজি।’
শনিবার (২৭ এপ্রিল) বাংলাদেশসহ ছয় দেশে প্রায় এক লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে ভারত। দেশটির ভোক্তা, খাদ্য ও বিতরণ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে। বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভুটান, বাহরাইন, মরিশাস ও শ্রীলঙ্কায় ৯৯ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ রপ্তানি করবে ভারত। তবে এই পেঁয়াজের মধ্যে কতটুকু বাংলাদেশ পাবে তার পরিমাণ নিশ্চিত করা যায়নি।
খাতুনগঞ্জের লামার বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিসবলেন, ‘ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ঘোষণা দিলেও এ পেঁয়াজ কখন বাংলাদেশে আসবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। আবার দাবদাহের কারণেও যে কোনো পণ্য সরবরাহ ও পরিবহনে গতি কমেছে। যে কারণে খাতুনগঞ্জের বাজারেও পেঁয়াজ-রসুন কম আসছে। কোরবানির ঈদের আগে এসব মসলাজাতীয় পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি থাকতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। আবার রসুন ও আদার দাম আন্তর্জাতিক বাজারেও বেড়েছে। বিশেষ করে বুকিং রেট বেড়েছে। এখন এলসি করলে প্রতি কেজি রসুন দুইশ টাকার ওপরে পড়তা (পরিবহন ও আমদানি খরচসহ আড়তমূল্য) পড়বে।’