হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে হতে হবে সচেতন

0
12

বাইরে বের হলেই প্রচণ্ড গরম। অতিরিক্ত গরমের কারণে সবচেয়ে বেশি দেখা দেয় পানিস্বল্পতা। প্রচুর ঘামের কারণে পানির সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণও বেরিয়ে যায়। ফলে সাধারণত শরীরের রক্তচাপ কমে যায়, দুর্বল লাগে, মাথা ঝিমঝিম করে। এ ক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং কিডনির সমস্যা হওয়াও বিচিত্র নয়। তবে চলমান তাপপ্রবাহে সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যা হলো হিটস্ট্রোক। গত রবিবার হিটস্ট্রোকে সারাদেশে শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ নেতা, ব্যবসায়ী, কৃষকসহ ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের হিসাবে দেশের ইতিহাসে এর আগে একদিনে হিটস্ট্রোকে এত মানুষের মৃত্যুর রেকর্ড নেই। ১৩ জেলায় তাপমাত্রা ছিল ৪০-৪২ ডিগ্রির ওপরে। ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছিল। এসব মাথায় রেখে পঞ্চম দফায় হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকবে তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা। আবহাওয়াবিদরা জানান, একদিকে তীব্র গরম, অপরদিকে বাতাসে জলীয় বাষ্পের আর্দ্রতা বেশি থাকায় মানুষের মধ্যে অস্বস্তি বাড়ছে। অল্পতেই মানুষ প্রচণ্ড ঘেমে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এ রকম তীব্র গরমের সময় সতর্ক না থাকলে শারীরিক নানা সমস্যার পাশাপাশি হিটস্ট্রোকে মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। এদিকে প্রচণ্ড গরমে রাজধানীসহ ফরিদপুর ও নোয়াখালীর বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থীদের অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ পরিস্থিতিতে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার দাবি জানাচ্ছেন অভিভাবকরা। যদিও চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে স্কুল খুলে দেয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তাপমাত্রার মধ্যে শিশুদের কোনোভাবেই ঘর থেকে বের হওয়া উচিত নয়। তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে শিশুরা বাইরে গেলে নানা ধরনের রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে। ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখাই ভালো। যদিও তাপপ্রবাহের কারণে ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা ও রাজশাহী জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মূলত হিটস্ট্রোকের আগে হিট ক্র্যাম্প দেখা দেয়। এতে শরীর ব্যথা করে, দুর্বল লাগে এবং প্রচণ্ড পিপাসা লাগে, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়, মাথাব্যথা করে এবং রোগী অসংলগ্ন আচরণ করতে থাকে। এ অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে শরীরের তাপনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় এবং শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়। এর লক্ষণগুলো হলো- ঘাম বন্ধ হয়ে যাওয়া, ত্বক শুষ্ক ও লাল হয়ে যাওয়া, নিঃশ্বাস দ্রুত হওয়া, নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ ও দ্রুত হওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়া, খিঁচুনি আসা, মাথা ঝিমঝিম করা এবং রোগীর অসংলগ্ন ব্যবহার। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে গরমের এই হিটস্ট্রোক সমস্যা থেকে বাঁচার কিছু উপায় রয়েছে; যেমন- যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকা, বাইরে বের হলে সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলা, প্রয়োজনে টুপি বা ছাতা ব্যবহার করা, পরনের হালকা কাপড়; ঢিলেঢালা ও সুতি কাপড় পরা, গোসল করা এবং শরীর ময়লামুক্ত রাখা, শ্রমসাধ্য কাজ যথাসম্ভব কম করার চেষ্টা, করলেও এ ক্ষেত্রে কিছুক্ষণ পরপর বিশ্রাম নেয়া এবং প্রচুর পানি ও স্যালাইন পান করা। পরিশেষে বলা যায়, হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর ঝুঁকি এড়াতে আমাদের নিজেদের সচেতনতার বিশেষ কোনো বিকল্প নেই।