ওষুধের দাম : হাইকোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়ন হোক

0
17

নিত্যপণ্যের মতো জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম বৃদ্ধির খবরে আমরা শঙ্কিত হই। বিশেষ করে জরুরি চিকিৎসায় ব্যবহৃত নাপা, সেকলো, অমিডন, মন্টিয়ার-মোনাস, এমকাস, রিভার্সএয়ারের মতো ওষুধগুলোর দাম বেড়েছে কারণ ছাড়াই। গত সোমবার দেশে সব ধরনের ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অব্যাহতভাবে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি রোধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। স্বাস্থ্য সচিব ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওষুধ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আদালতকে জানাতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে উদ্যোগী হবেন। আদালতের নির্দেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হবে এমন আশা করছি। জানা গেছে, মোট ১ হাজার ৬৫০টি জেনেরিকের মধ্যে সরকার নিয়ন্ত্রিত ওষুধ ১১৭টি। এর মধ্যে সম্প্রতি ৫৩টি ওষুধের দাম বাড়ানো হয়। সেই দাম বাড়ানোর প্রভাবে জরুরি প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম যে বৃদ্ধি পেয়েছিল, তা আর কমেনি। বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর জানিয়েছে, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন খরচ পোষাতে না পারায় বাধ্য হয়ে দাম বাড়াতে হয়েছে। এছাড়া ডলারের দাম বাড়ায় আমদানিকৃত ওষুধের দামও সমন্বয় করতে হয়েছে। উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, শুধু কাঁচামালের দামই বাড়েনি, প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়ালস, পরিবহন ও ডিস্ট্রিবিউশন ব্যয়, ডলারের বিনিময় মূল্য, মুদ্রাস্ফীতিসহ নানা কারণেই ওষুধ উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। এসব কারণে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। ওষুধের দাম নির্ধারণ হওয়া উচিত দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে। উৎপাদন খরচ মুখ্য হতে পারে না। জনগণের ক্রয়ক্ষমতা, আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনা করতে হবে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে। এভাবে চলতে থাকলে বিভিন্ন রোগব্যাধিও বাড়বে। মাত্রাতিরিক্ত ওষুধের দাম বাড়াতে মানুষের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। দাম বাড়াতে না দিলে উৎপাদন বন্ধের হুমকিও দিয়েছিল তারা। এখানে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর অসহায়। ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন আচরণ সত্যিই দুঃখজনক। ওষুধ কোনো বিলাসী ভোগ্যপণ্য নয়। এর ওপর মানুষের জীবন-মরণ নির্ভর করে থাকে। এ ক্ষেত্রে ক্রেতার স্বার্থ রক্ষা করাই অনেক বেশি জরুরি। ওষুধের মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে কোম্পানিগুলোর উচ্চাভিলাষী বিপণন নীতি ও অধিক মুনাফা করার প্রবণতাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। ওষুধ কোম্পানিগুলোর অতি মুনাফা প্রবণতার বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এটি অনৈতিক। সরকারকে অবিলম্বে এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। উদ্বেগের বিষয়, ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে দেশে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। কার্যত প্রায় গোটা ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে ওষুধ শিল্প মালিক সমিতি। সরকারের আইনের দুর্বলতার কারণেই ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। এটা মানুষের জীবন রক্ষার উপকরণ। কাজেই ওষুধের ব্যবসার সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা ও মানবিক হওয়া প্রয়োজন। জনগণের চিকিৎসা ব্যয় কমাতে ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের তদারকি বাড়ানোর বিকল্প নেই। মূল্যস্ফীতির এ সময়টায় মূল্যবৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি থাকলেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।