বেনাপোল স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনের যাত্রী সেবার এসিগুলো নষ্ট : কাস্টম কর্তারা নির্বিকার

0
14
Oplus_131072

সুন্দর সাহা
দেশের বৃহত্তম স্থল বন্দর বেনাপোল কাস্টম হাউজের কর্তারা অনৈতিক পন্থায় জড়িয়ে পড়ায় বন্দর জুড়ে চলছে চরম অরাজকতা। কোটি টাকা ব্যয় করে সিসি ক্যামেরা লাগানোর পরও ইতিপূর্বে বন্দরের লকার খুলে কোটি-কোটি টাকার সোনা চুরি করেছেন তৎকালীন কাস্টমস কর্তারা। নগদ নারায়ণে শীর্ষ শিরোমনি রক্ষা পেলেও বন্দরবাসী জানেন এই সোনা কারা লোপাট করেছেন। এরই ধারা বাহিকতায় বর্তমান কমিশনার আব্দুল হাকিমের সময়ে স্ক্যানিং মেশিনগুলো নষ্ট করে বন্দরে চলছে শুল্ক ফাঁকির মচ্ছব। স্ক্যানিং মেশিনগুলো ঠিক না করে অতি অভিজ্ঞ কমিশনার এবং তার তিন সিপাহশারার ফল আমদানির ছদ্মাবরাণে ছোট রয়েলসহ আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত একডজন শুল্ক ফাঁকিবাজের স্বার্থ রক্ষা করে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। অভিযোগ রয়েছে, স্ক্যানিং মেশিনগুলো খারাপ থাকায় অবৈধ ব্যবসায়ীসহ চোরাচালানী এবং পাচারকারীদের সাথে কর্তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। শুধু স্ক্যানিং মেশিন নয় কর্তাদের অর্থলিপ্সায় কাস্টমসের সর্বক্ষেত্রে চলছে লুটপাঠ বাণিজ্য। কোন সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এই ধারাবাহিকতায় দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের কয়েকটি এসি কয়েক সপ্তাহ ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। যার কারণে প্রতিদিন ভারত থেকে আগত এবং ভারতে যাওয়ার জন্য চেকপোস্টে কয়েক হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী মারাত্মক ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। এমনিতেই দুই দেশের কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনে ভোগান্তির শিকার হন পাসপোর্ট যাত্রীরা। তাতে আবার অতি তীব্র তাপদাহে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ। বেনাপোল চেকপোষ্ট কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের ভিতরের পাশে দেয়ালে লাইন ধরে লাগানো এসি গুলো অধিকাংশই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন-কাস্টমসে দেয়ালে লাগানো এসিগুলো কাজ করে না গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। পাসপোর্টধারী যাত্রীরা রীতিমতো ভিসা ফি, ভ্রমণ ফি এবং প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের ফি দিয়ে ভ্রমণ করছে। সেবা পাচ্ছে না কানা কড়িও। বেশি ভোগান্তিতে বৃদ্ধ এবং শিশুরা। লাইনে দাঁড়িয়ে পাসপোর্টের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে তারা ঘেমে ভিজে যাচ্ছে। এসব দেখার কেউ নেই।যাত্রীদের অভিযোগ, তারা সরকারের বিভিন্ন ফি দিয়ে ভারতে যান। এদের মধ্যে কেউ যাচ্ছে বেড়াতে,কেউ চিকিৎসা নিতে কেউ বা যাচ্ছে ব্যবসার কাজে। আবার কারোর গন্তব্য আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে। অধিকাংশই তারা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে যাচ্ছেন। চলমান তীব্র এই গরমে ইমিগ্রেশন-কাস্টমসে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের পাসপোর্টের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সীমাহীন দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন তারা। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাতে বৃদ্ধ ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি কষ্টের শিকার হচ্ছে। ঘেমে ভিজে অনেকেই আবার অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ঝিনাইদহ থেকে ভারত ভ্রমণে আসা জুয়েল রানার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ট্রেনে করে বেনাপোল আসতে কয়েকঘন্টা ঘণ্টা সময় লেগেছে। সেখানে ও ছিল অসহনীয় গরম। তারপর ভ্রমণ ফি ও প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল চার্জ দিয়ে লাইনে ইমিগ্রেশন-কাস্টমসে আসি। এখানে ও সীমাহীন গরম। ইমিগ্রেশন-কাস্টমসের দেয়ালে এসি সাটানো থাকলেও অধিকাংশই অচল,কাজ করে না। তাহলে এতো টাকা খরচ করে আমরা কি সেবাটা পাচ্ছি? ঢাকার যাত্রী দেলোয়ার হোসেন বলেন, নিজের শিশু বাচ্চাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য অতি জরুরিভাবে ভারতে যাচ্ছি। বাইরে সর্বত্র তীব্র গরম। মনে করেছিলাম অফিসের ভিতরে একটু এসির ঠান্ডা পাবো। হিতে বিপরীত। এখানে আরো গরম। এসি থাকলেও এগুলো চলে না। তবে তিনি মনে করেন কর্তৃপক্ষের এদিকে নজর দেওয়া উচিত। বেনাপোল চেকপোষ্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আযহারুল ইসলাম দৈনিক প্রতিদিনের কথাকে বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। চেকপোষ্ট ইমিগ্রেশনে যোগদানের পর থেকে দেখেছি এসিগুলো অধিকাংশই নষ্ট। এসিগুলো নষ্ট থাকায় পাসপোর্টধারী যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এগুলো দেখাশোনা করে থাকেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। উনারাই ভালো বলতে পারবেন দীর্ঘদিন ধরে এসিগুলো নষ্ট থাকলেও কেন মেরামত করা হচ্ছে না। বিষয়টি কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’ জনস্বার্থে এসিগুলো মেরামত করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন। এ বিষয়ে জানার জন্য দৈনিক প্রতিদিনের কথার পক্ষ থেকে বেনাপোল কাস্টমসের যুগ্ম-কমিশনার সাফায়েত হোসেন এবং কমিশনার আব্দুল হাকিমের মুঠোফোনে কল দিলেও তারা কেটে দেন। অগত্যা ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তার কোন উত্তর মেলেনি। এভাবেই চলছে বেনাপোল কাস্টম কর্তাদের দায়িত্ব পালন। তারা মূলত দালাল নির্ভর হয়ে গেছেন। বেনাপোলের সাদা জামা পড়া লেবাসধারী দুই দালালকে মাঠে নামিয়ে নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে এবং ফলের আমদানি বাড়াতে তাদের পক্ষে রিপোর্ট করাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।