যশোরে মেসকাত হত্যার পরিকল্পনাকারী সৌদিপ্রবাসী নাজমা দুই লাখে খুন করে নারী কিলার রিক্তাসহ নিজাম ও শাহিন

0
22

নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে মেসার্স ইলা অটো রাইচ মিল শ্রমিক পাবনার মেসকাত প্রামানিককে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। তার হত্যার পরিকল্পনা করে পরকীয়া প্রেমিকা সৌদিপ্রবাসী নাজমা। মোবাইল ফোনে দুই লাখ টাকার চুক্তিতে মেসকাতকে হত্যায় সহযোগীতা করে সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গা গ্রামের রাজুর স্ত্রী রিক্তা পারভীন (৩০) ও সাতক্ষীরার আশাশুনির নৈকাটি গ্রামের নিজাম সরদার (৬০)। যশোর ডিবি পুলিশের জালে ধরা দু’জনই হত্যার দায় স্বীকার করেছে। হত্যায় ব্যবহৃত যশোর শংকরপুরের শাহীন ড্রাইভার এ কাজে সহযোগীতা করেন। তার প্রাইভেটকারটি জব্দ করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে নিহতের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন, ১টি স্বর্ণের চেইন, কন্ঠ চিক, এক জোড়া কানের দুল। শনিবার (৫ মে) যশোর ডিবি কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিং করে এসব তথ্য দেন ওসি রুপন কুমার সরকার। গণমাধ্যমের কাছে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন ডিবির এসআই মফিজুল ইসলাম। এ সময় গ্রেফতারকৃত রিক্তা পারভীন ও নিজাম সরদার পুরো পরিকল্পনা ও হত্যা মিশনের যাবতীয় তথ্য স্বীকার করেন। তাদের বর্ননামতে, সৌদি প্রবাসী নাজমা ও খুনি রিক্তা পারভীনের সম্পর্ক সাবেক স্বামীর সূত্রে জা। নাজমা সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার নৈকাটি গ্রামের নিজাম সরদারের মেয়ে। বিয়ে বিচ্ছেদের পর তিনি যশোর ইলা অটোরাইচ মিলে শ্রমিকের কাজ নেন। অন্যদিকে পাবনার ভাঙ্গুড়ার নিজাম প্রামানিকের ছেলে মেসকাত একই মিলে শ্রমিকের কাজ করতেন। একই মিলের কাজ করার সুবাদের তাদের মধ্যে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে নাজমাকে সৌদি পাঠিয়ে দেন মেসকাত। পরকীয়ার সম্পর্ক বজায় থাকায় নাজমা উপার্জিত টাকা মেসকাতের কাছে পাঠাতেন। সম্প্রতি মেসকাতের স্ত্রী জুলেখা বেগম বিষয়টি জেনে ফেলেন। এ নিয়ে তাদের দাম্পত্য অশান্তি চলছিল। তিনি সৌদিপ্রবাসী নাজমাকে মোবাইল ফোনে গালমন্দ করেন। এরপর নাজমার সাথে মেসকাত যোগাযোগ কিছুটা কমিয়ে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাজমা সৌদি বসেই মেসকাতকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তিনি সাবেক স্বামীর ভাইয়ের স্ত্রী রিক্তা পারভীনের সাথে মোবাইল ফোনে হত্যার পরিকল্পনার কথা জানান। রিক্তা হত্যা মিশন সফল করতে নাজমার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নেন। এ কাজে সহযোগী করেন নিজাম সরদারকে। তারা দু’জনে মিলে বন্দকি স্বর্ণালঙ্কার ফেরত আনার টোপ দিয়ে মেসকাতকে ঝাউডাঙ্গা গ্রামে ডেকে নেন। গত ২ মে রাতে যশোর শংকরপুরের শাহীন ড্রাইভার তার প্রাইভেটকারে মেসকাতকে সাতক্ষীরার বুধহাটায় নিয়ে যান। পরে তারা যশোরে ফেরার নাম করে গাড়িতে চেপে রওনা হন। গাড়ির ভেতরে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে মেসকাতকে হত্যা করে লাশ মনিরামপুরের ঝাঁপা ইউনিয়নের জোকার মাঠ নামক একটি স্থানে ধানক্ষেতে লাশ ফেলে আসে। ৩ মে সকালে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে যশোর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। পরে নিহতের এলাকার ও ঝিকরগাছা আল আমিন অটো রাইচ মিলের এক শ্রমিক লাশটি পাবনার মেকাতের বলে শনাক্ত করেন। পরে নিহতের ভাই এরশাদ আলম যশোরে আসেন। তিনি মনিরামপুর থানায় অজ্ঞাত আসামী হত্যা মামলা করেন। যার নং-০৪, তাং-০৩/০৫/২০২৪খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়। পরে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবি পুলিশ। পরে এসআই মফিজুল ইসলাম পিপিএম এর নেতৃত্বে একটি চৌকশ টিম গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ৪ মে রাতভর সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ও সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভাড়াটে মহিলা কিলারসহ ২ জনকে গ্রেফতার ও পরে হত্যা মিশনে ব্যবহৃত প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করেন।