রেলের সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিকায়ন হোক

0
24

রেল যোগাযোগ আধুনিকীকরণে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। চলছে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। তবে যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি ও রেলের সিগন্যাল ব্যবস্থা ডিজিটাল করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো নজর নেই কর্তৃপক্ষের। ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশে রেল চলে ব্রিটিশ আমলের এনালগ বা ‘ম্যানুয়ালি’ সিগন্যাল ব্যবস্থায়। ত্রæটিপূর্ণ সিগন্যাল ব্যবস্থা দিয়ে দেশে প্রতিদিন তিন শতাধিক যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে। দুর্ঘটনা রোধে রেলের সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিকায়নে সরকারের মনোযোগী হওয়া উচিত। জানা গেছে, গত বছরের ২৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আন্তঃনগর এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ও একটি মালবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২২ জন নিহত ও বহু যাত্রী আহত হন। মালবাহী ট্রেনটি সিগন্যাল অমান্য করে স্টেশনে প্রবেশ করায় দুর্ঘটনা হয় এবং এতে চালকসহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতার বিষয়টি তদন্তে উঠে আসে। গত ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের পটিয়া রেলস্টেশনে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে নন-স্টপেজ সার্ভিসের দুটি ট্রেন পর্যটক এক্সপ্রেস ও কক্সবাজার এক্সপ্রেস মুখোমুখি সংঘর্ষ থেকে বেঁচে যায়। সম্প্রতি পাবনার ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে মালবাহী দুই ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। সর্বশেষ গত ৩ মে গাজীপুরে তেলবাহী ও যাত্রী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এছাড়া শনিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশনে স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টসম্যানের ভুলে একই লাইনে দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন প্রবেশের ঘটনা ঘটে। এমন ঘটনা অহরহ হচ্ছে। এরপরও দায়িত্বশীলরা অমনোযোগী। চাহিদা থাকায় বাংলাদেশে রেল সম্ভাবনা উজ্জ্বল। বাংলাদেশ রেলে সোনালি যুগের সূচনা করার সময় বয়ে চলেছে। দেশের ভেতরে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে রেল। কিন্তু নানা কারণে নিরাপদ বাহন হয়ে উঠেছে অনিরাপদ। রেললাইনে পাথর থাকা অপরিহার্য হলেও মাইলের পর মাইল রেললাইনে পাথর নেই, চুরি হয়ে যাচ্ছে। রেল কর্তৃপক্ষ ৩ হাজার কিলোমিটার রেললাইনের দিকে তাকালেই দুর্দশার চিত্র দেখতে পাবে। রেলের উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করা নিয়ে নানা প্রকল্পের কথা জানতে পারি। অথচ যে পথ দিয়ে রেল চলাচল করে, সেই পথই নিরাপদ করা হচ্ছে না। পর্যাপ্ত নতুন রেলপথ, সেতু নির্মাণ ও সংস্কার করা দূরে থাক, বিদ্যমানগুলোই সংস্কার করা হচ্ছে না। প্রায় খবর আসে রেলসেতু ভেঙে যাওয়ার ঘটনা। বাংলাদেশ রেলওয়ের অধিকাংশ সেতুই নির্মিত হয়েছে ব্রিটিশ আমলে। এসব সেতুর বেশির ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ-জরাজীর্ণ। জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা এসব সেতুর উপর দিয়েই চলছে ট্রেন। ফলে একটু উনিশ-বিশ হলেই ঘটছে দুর্ঘটনা। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে অবহেলার শিকার হয়ে আসছিল রেলওয়ে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে রেলের দিকে দৃষ্টি ফেরায়। স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় হয়েছে রেলওয়ে। রেল উন্নয়ন মহাপরিকল্পনাও হাতে নেয়া হয়েছে, যা দেশবাসীকে খুবই আশান্বিত করেছে। তবে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শ্লথগতি, সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি অনাকাক্সিক্ষত প্রতিবন্ধকতায় পড়ার খবর আমাদের স্বভাবতই হতাশ করে। আমরা বিশ্বাস করি, পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়মতো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে সত্যিকার অর্থে রেল যোগাযোগে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। তার সুফল পড়বে দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে।