তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত, হবে দুর্যোগ ঘোষণা

0
12

প্রতিদিনের ডেস্ক
ভবিষ্যতে তাপপ্রবাহ হলে তা মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান। তাপপ্রবাহকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করা হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তাপপ্রবাহের মাত্রা হয়তো দিন দিন আরও বাড়তে পারে। আমরা এটা অ্যাডজাস্ট করতে চাই। এটাকে দুর্যোগ ঘোষণা করা হবে।’তিনি বলেন, ‘গত মাসে তাপপ্রবাহের সময় আমরা প্রোগ্রাম রেডি করে ফেলেছিলাম। সারাদেশে পানি, স্যালাইন, ছাতা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃষ্টির পূর্বাভাস দিলো, বৃষ্টি হলো।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো কিছু করতে হলে তো প্রস্তুতি নিতে সময় লাগে। তাপপ্রবাহ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও সংসদ ভবনের দক্ষিণ পাশে দুটি ক্যাম্প করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। যেটি স্পিকারের উদ্বোধন করার কথা ছিল। এ দুই স্থান থেকে পানি, স্যালাইন, ছাতাসহ বিভিন্ন উপকরণ দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। মানুষ এখানে আশ্রয় নিতে পারতো। সব রেডি ছিল, তাবু ফেলে আমরা ক্যাম্প করবো। কিন্তু বৃষ্টি হওয়ায় তা আর হয়নি।’
‘ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমার নির্বাচনী এলাকায়ও আমি তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষা পেতে নানান উদ্যোগ নিয়েছিলাম।’মহিববুর রহমান বলেন, ‘ভবিষ্যতে তাপপ্রবাহ হলে তা মোকাবিলার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। আমাদের সব রেডি আছে।’তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যে পরিবেশ-পরিস্থিতি তাতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠলে দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। আমরা সেভাবেই এগোচ্ছি।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩১ মার্চ রাজশাহী ও পাবনায় মৃদু তাপপ্রবাহ শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে তাপপ্রবাহের তীব্রতা ও আওতা বাড়ে। ১৩ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায় রাঙ্গামাটিতে। ১৬ এপ্রিল থেকে শুরু হয় তীব্র তাপপ্রবাহ। ওইদিন চুয়াডাঙ্গা ও বাগেরহাটের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়।এরপর সারাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চল বৃষ্টিহীন হয়ে পড়ে। কালবৈশাখীরও দেখা মেলে না। সারাদেশের তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়তে থাকে।
২০ এপ্রিল বিভিন্ন জায়গায় দিনের তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে অর্থাৎ তাপপ্রবাহ অতি তীব্র আকার ধারণ করে। ওইদিন ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়। মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ প্রায় সারাদেশে বিস্তৃত হয়। এ সময়ে জনজীবনের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। তীব্র গরমে হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।
২৯ এপ্রিল ঢাকার তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়, যেটি ছিল চলতি মৌসুমে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এছাড়া ৩০ এপ্রিল যশোরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ওঠে, যা ছিল ১৯৮৯ সালের পর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
মে মাস শুরু হওয়ার পর ঝড়-বৃষ্টি বেড়ে কমতে থাকে তাপপ্রবাহের তীব্রতা ও আওতা। ঢাকায় বৃষ্টি হয় ২ মে রাতে। বৃষ্টির সঙ্গে কালবৈশাখী হতে থাকে অন্যান্য অঞ্চলেও। তাপমাত্রা ক্রমে কমে শেষে সারাদেশ থেকেই দূর হলো তাপপ্রবাহ।
চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা তাপমাত্রা নির্ধারণ করে তাপপ্রবাহকে ‘দুর্যোগ’ হিসেবে ঘোষণারও সুপারিশ করেছেন।