১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

চালানোর লোক না থাকলে যন্ত্রপাতি কিনতে পারবে না কোনো হাসপাতাল

প্রতিদিনের ডেস্ক:
চালানোর মতো লোক না থাকলে কোনো হাসপাতাল নতুন কোনো যন্ত্রপাতি কিনতে পারবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।রোববার (৯ জুন) সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) এ সংলাপ আয়োজন করে। এসময় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।সরকার কোটি কোটি টাকা দিয়ে মেডিকেল যন্ত্রপাতি কিনছে। কিন্তু সেগুলো সংরক্ষণ বা পরিচালনার জন্য বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কোনো পদ নেই। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যন্ত্রপাতি কেনার ব্যাপারে আমাদের একটা নীতি যেটা আমরা ঠিক করেছি- যন্ত্রপাতি আমি সেগুলোই কিনবো যেগুলো চালানোর মতো লোক আছে।এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাকে একজন প্রশ্ন করলো, এক জায়গায় ডিজিটাল এক্সরে মেশিন গেছে, কিন্তু সেখানে চালানোর মতো লোক নেই। এ ধরনের পদক্ষেপ আমি নেবো না। আমি আগে দেখবো ওই জায়গায় যে ডিমান্ড আসবে ওই হাসপাতালে ওই যন্ত্র চালানোর মতো কোনো লোক আছে কি না। যদি থাকে তবে আমি কিনবো, না হয় কিনবো না।মন্ত্রী বলেন, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস। আমি আমার যে হাসপাতাল তৈরি করেছি, সেখানেও একটা পোস্ট রেখেছি বায়োমেডিকেল, আমরা এ বিষয়ে কাজ করবো।‘আমি যদি প্রাইমারি হেলথ কেয়ারকে ইমপ্রুভ করতে পারি, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে মায়েদের যদি বোঝাতে পারি, তারা যেন হাসপাতালে এসে ডেলিভারি করায়, তাহলে আমি মনে করি মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে পারবো।’‘বাচ্চাদের পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে আজকে আমরা একটা মিটিং করলাম। আমরা যদি গ্রামে আঁচল নামে শিশুদের চাইল্ড কেয়ার করি, মায়েরা যখন কাজ করে তখন সেখানে বাচ্চারা থাকবে। এ বিষয়ে আরও কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেগুলো নিয়ে আমি কাজ করবো’- যোগ করেন তিনি।অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, হাসপাতাল থেকে প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী পাঠিয়ে দেওয়া, এটা আমি কিছুতেই মেনে নেবো না। আমি আমার হাসপাতালগুলোকে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করবো। কিছু কিছু বিষয়ে আমাকে আরও কাজ করতে হবে। হাসপাতালগুলোতে জরাজীর্ণ অবস্থা, হাসপাতালে ডাক্তার যে জায়গায় বাস করে সেটারও। এরই মধ্যে আমি স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকে বলেছি, প্রতিটি উপজেলাকে যেন স্বাবলম্বী করা হয়। হাসপাতালের ভবন, ডাক্তারদের থাকার ব্যবস্থা, ওটি- এগুলোকে যেন মানসম্মত করে দেওয়া হয়। তাহলে, তখন আমি ডাক্তারকে একটা প্রেসার দিতে পারবো, যদি তিনি সেখানে না থাকেন। এখন তো গেলেই ডাক্তাররা বলেন, স্যার থাকার জায়গা নেই।ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অনেক সমস্যা রয়েছে। আমি সেখানে গতকাল (শনিবার) গিয়েছিলাম। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল, অত্যাধুনিক একটি হাসপাতাল পড়ে আছে। আমরা এ সপ্তাহে এগুলো নিয়ে বসবো। আইন অনুযায়ী নিয়োগ হয়েছে কি না আমি জানি না, কাগজপত্র দেখে এ নিয়োগগুলো কেন স্থগিত হয়েছে, যারা নিয়োগ পেয়েছে তারা কেন কাজ করতে পারছে না, তা আমরা খতিয়ে দেখবো। খতিয়ে দেখে দ্রুত এটির একটি সুরাহা করার চেষ্টা করবো।ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে বড় পদক্ষেপের আশ্বাস ইচ্ছে মতো ওষুধের দাম না বাড়াতে সম্প্রতি নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। ওষুধের দাম বাড়ানো বা না বাড়ানোর বিষয়ে স্বাস্থ্য আদালতকে নির্দেশনা দিতে হয়। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা কী- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি এটার ব্যাপারে একটা বড় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। সেটা এ মুহূর্তে এখানে বলবো না। আমি একবার না কয়েকবারই বলেছি- ওষুধের দাম যেন না বাড়ে। সরকার যে খুচরা মূল্য বেঁধে দিয়েছে এর বাইরে গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি বলেছি। এটা আমি আরও গুরুত্ব সহকারে দেখবো।চিকিৎসায় গাফিলতি-অবহেলা সহ্য করবো নাহাসপাতালে ডাক্তারদের সময় মতো আসার বিষয়টি মনিটর করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।কর্মস্থলে অননুমোদিতভাবে অনুপস্থিত থাকা চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে- জানতে চাইলে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, সিলেটে কর্মস্থলে না পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সাসপেন্ড করেছি। আমার প্ল্যান আছে ঢাকার বাইরের কিছু হাসপাতালে আমি যাবো। রূপগঞ্জে আমি গিয়েছিলাম। কিন্তু মুশকিল হয় কি কোন না কোনোভাবে জেনে যায় যে আমি আসবো। মন্ত্রী যখন যায় তখন প্রটোকল এমন থাকে… আমি বলছিলাম দরকার হলে আমি সিএনজি করে যাই, তাও যাই। কিন্তু প্রটোকলের জন্য জেনে যায়, সেদিন ডাক্তাররা যথারীতি হাসপাতালে উপস্থিতিও থাকে।স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি সবসময় একটা কথা বলি চিকিৎসা এমন একটা বিষয়, চিকিৎসায় অবহেলা কিংবা চিকিৎসায় গাফিলতি করলে মানুষের জীবন চলে যায়। সুতরাং এখানে দুবার চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে কোনো গাফিলতি কোনো অবহেলা আমি সহ্য করবো না।সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের চেম্বার করার বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে প্র্যাকটিসের বিষয়টি গত সরকারের আমলে চালু হয়েছিল। এটি নিয়ে আমি সেভাবে কাজ শুরু করিনি, অন্য কাজগুলো নিয়ে ব্যস্ত। হাসপাতালে প্র্যাকটিসটা নিয়ে আমি অতি দ্রুত দেখবো, এটি কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায়।বিএসআরএফ সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাবের সভাপতিত্বে সংলাপ সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়