১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

তৃতীয়বারের মতো শপথ নিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

প্রতিদিনের ডেস্ক
কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহেরুর পর টানা তৃতীয়বার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন নরেন্দ্র মোদি। মন্ত্রীসভার ৭২ সদস্যও একযোগে শপথ নিচ্ছেন মোদির সঙ্গে। এর মধ্যে ৩০ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী, পাঁচজন স্বতন্ত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং ৩৬ জন প্রতিমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতি ভবন রাইসিনা হিলস চত্বরে শপথ নিচ্ছেন মন্ত্রীসভার সদস্যরা। রবিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় শপথগ্রহণ করেন তিনি। শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। রাষ্ট্রপতি ভবন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি মোদি ও ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অন্যান্য নেতাদেরকে নতুন সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মোদির পরই শপথ নিয়েছেন রাজনাথ সিং। পাশাপাশি তার মন্ত্রিপরিষদের আরো কয়েকজন সদস্যও শপথ গ্রহণ করছেন। শপথ অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারা। কেবল বিদেশিই নয়, ভারতের রাজনৈতিক নেতাদেরকেও আমন্ত্রণ জানানো হয় মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে। এর মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গে। তবে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি অনুষ্ঠানে যাননি। ওদিকে, চলচ্চিত্র তারকারা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। শপথের আগে সকাল সকাল মোদিকে গিয়েছিলেন রাজঘাটে। মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধের সামনে গিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন তিনি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর সৌধ ‘সদৈব অটল’-এর কাছেও গিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন তিনি। মোদির শপথগ্রহণের অনুষ্ঠান উপলক্ষে সাজ সাজ রব ছিল দিল্লিতে। কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয় রাজধানী। রবিবার তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়ের ব্যবস্থা নেয় দিল্লি পুলিশ। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের কারণে দিল্লির আকাশসীমাতেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এবারের লোকসভা নির্বাচনে ২৯২টি আসনে জয় পেয়েছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ পেয়েছে ২৩৩টি আসন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে এনডিএ সরকার গড়লেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। ফলে তারা চাপে রয়েছে। সরকার গঠনের ক্ষেত্রে বিজেপি’কে শরিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এনডিএ শরিকরা মোদিকেই প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বেছে নিয়েছেন। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার পর তিনি শপথ নিলেন। রবিবারই সরকার গড়ার কথা রয়েছে এনডিএ’র। শপথ নেয়ার আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকের পর মোদি বলেছিলেন, “রোববার সকালে এনডিএ জোটের সব শরিক আমাকে নেতা হিসাবে বেছে নিয়েছে এবং রাষ্ট্রপতিকে তা জানিয়েছে। রাষ্ট্রপতি এরপর আমাকে ডেকেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন। তারপরই আমি সন্ধ্যায় শপথগ্রহণের সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছি।” এনডিএ-কে জয়যুক্ত করার জন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে মোদি বলেন, “এনডিএ-কে তৃতীয়বারের মতো দেশের সেবা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। আমাদেরকে এই সুযোগ দেয়ার জন্য আমি দেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে চাই… আমি এও বলতে চাই, গত দুই মেয়াদে দেশ যে গতিতে উন্নতি করেছে এবারো আমরা একই গতিতে একই দিশায় কাজ করে যাব।” প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি নতুন সরকারের একাধিক মন্ত্রীও শপথ নিচ্ছেন। এবার ৭২ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করতে যাচ্ছেন মোদি। এই প্রতিবেদন পর্যন্ত শপথ নেওয়া মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন অমিত শাহ, এস জয়শঙ্কর, মনোহরলাল খট্টর, নির্মলা সীতারামন, শিবরাজ সিংহ চৌহান, রাজনাথ সিং, নীতিন গড়করি, জেপি নাড্ডা, জেডিএস নেতা এইচডি কুমারস্বামী, পীযূষ গয়াল, ধর্মেন্দ্র প্রধান, জিতনরাম মাঝিঁ, রাজীবরঞ্জন সিংহ, সর্বানন্দ সোনোয়াল, বীরেন্দ্র কুমার, রামমোহন নাইডু, প্রহ্লাদ জোশী, জুয়েল ওরাওঁ, গিরিরাজ সিংহ, অশ্বিনী বৈষ্ণব, জ্যোতিরাদিত্য শিন্ডে, ভূপেন্দ্র যাদব, গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত, অন্নপূর্ণা দেবী, কিরেন রিজিজু। ভারতীয় মন্ত্রিসভার এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনসহ শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভুটান, নেপাল, মরিশাস এবং সিশেলসের সরকারপ্রধানরা। এতে অংশ নিয়েছেন ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি, মুকেশ আম্বানি, বলিউড তারকা শাহরুখ খান, অক্ষয় কুমার, দক্ষিণী সিনেমার সুপারস্টার রজনীকান্তসহ আরও কয়েক হাজার অতিথি।
শপথ অনুষ্ঠানকে ঘিরে রাষ্ট্রপতি ভবন রাইসিনা হিলসে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দিল্লি পুলিশের সোয়াত এবং এনএসজির কমান্ডোদের অনুষ্ঠানস্থল ও কৌশলগত অবস্থানের চারপাশে মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ রাজধানীকে একটি ‘নো-ফ্লাই’ জোন ঘোষণা করেছে। এছাড়া আগামী কয়েক দিন ড্রোন, প্যারা গ্লাইডার, রিমোটচালিত উড়োজাহাজ এবং গ্যাসভর্তি বেলুন ওড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়