১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

মাগুরার সেই শিশুটি না ফেরার দেশে, এলাকায় চলছে শোকের মাতম : প্রধান উপদেষ্টার শোক

মাগুরা প্রতিনিধি
মাগুরায় ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার শিশু আছিয়া ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা গেছে (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শোক জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানানো যাচ্ছে যে, মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটি আজ ১৩ মার্চ ২০২৫ দুপুর ১টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এদিকে, মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার শিশুর মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

শিশুটির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শিশুটির বৃহস্পতিবার সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। দুইবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃৎস্পন্দন ফিরে আসেনি। উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ শিশুটিকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকা সিএমএইচ-এ ভর্তি করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শিশুটির শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে এবং যেকোনো প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শিশুটির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে। মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গত ৫ মার্চ রাতে ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার হয় আট বছরের শিশু আছিয়া। বোনের শ্বশুর তাকে ধর্ষণ করেছে বলে জানায় সে। ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার বোনের অভিযোগ, গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পরও তাকে চিকিৎসার জন্য না নিয়ে উল্টো ঘরের ভেতরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। পরদিন ৬ মার্চ সকালে প্রতিবেশী এক নারী তাদের ঘরে এলে বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়ে এবং এরপর আছিয়াকে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। ততক্ষণে শিশুটি অচেতন হয়ে পড়ে। হাসপাতালে গিয়ে বোনের শাশুড়ি চিকিৎসকদের জানান শিশুটিকে জ্বিনে ধরেছে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন সে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বিষয়টি টের পেয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান বোনের শাশুড়ি। ওইদিন (৬ মার্চ) দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য আছিয়াকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ওইদিন রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ঢাকা মেডিকেলে দুইদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ৮ মার্চ তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শিশু আছিয়া। ধর্ষণের ঘটনায় মাগুরা সদর থানায় মামলা করেছেন আছিয়ার মা। এতে বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি, ভাশুর ও ভগ্নিপতিকে আসামি করা হয়েছে। তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি এখন হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে।


অন্যদিকে, মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার শিশুর মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। সেই শোক ছড়িয়ে পড়েছে জেলাব্যাপী। মৃত্যুর সংবাদ শোনার সাথে সাথে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। তারা বলতে থাকেন যেভাবে শিশুটিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তেমনি দ্রুত ধর্ষক আর খুনিদের ফাঁসি দিতে হবে। শিশুটির মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথেই সাধারণ মানুষ শোকাহত হয়ে পড়েন। আশপাশের এলাকাসহ দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে যান শিশুটির বাড়িটিতে। তারা শোকাহত পরিবারের পাশে থেকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে নিজেরাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। দুপুর থেকেই সোস্যাল মিডিয়ায় মুত্যুর সংবাদ প্রকাশ করে হাজারো মানুষ শিশুটিকে নিজেদের বোন, মা, কন্যা বা স্বজন হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। সবারই যেন এক কথা ‘ওপারে ভালো থাকিস মা, এই অসভ্য সমাজ তোর না’। সোস্যাল মিডিয়ায় শিশুটির ধর্ষণ ও হত্যার সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তিও দাবি করা হয়। অনেকে ধর্ষকদের প্রকাশ্য বিচার দাবি করেন। কেউ কেউ বলেন, দীর্ঘ দেড় যুগ দেশে যেভাবে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু ছিল ধর্ষকরা সে কারণে এই ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিতে পারছে বার বার। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে শিশুটির বাড়িতে যেয়ে তার চারা সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, মরদেহ হেলিকপ্টার যোগে মাগুরা আসার পর শহরের নোমানী ময়দানে নামাজে জানাজা শেষে তাকে শ্রীপুরর সোনাইকুন্ডি গ্রামে কবরস্থনে দাফন করা হবে। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুর একটার দিকে মারা যান ধর্ষণের শিকার আট বছর বয়সী শিশুটি।এর আগে গত ৫ মার্চ রাতে মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী এলাকায় বোনের বাড়ি বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার হয় আট বছর বয়সী ওই শিশু। ধর্ষক তাকে হত্যারও চেষ্টা চালায়। পরে গত ৮ মার্চ সংকটাপন্ন শিশুটিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এদিকে, মাগুরায় ধর্ষণের শিকার হওয়া শিশুটির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ ঘটনায় জড়িত আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুর ১টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এর আগে, মাগুরা পৌর এলাকায় বোনের (শ্বশুর) বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গত বুধবার (৫ মার্চ) দিনগত রাতে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে পরিবার জানায়। শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) শিশুটিকে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় শিশুর বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়। চার আসামিকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়