সুন্দর সাহা
যশোরের আলোচিত উপজেলা শার্শা। সীমান্তের এই উপজেলাজুড়ে অপরাধীদের অভয়ারণ্য। হত্যা-খুন-মাদক-সোনা-অস্ত্র পাচারসহ সকল প্রকার অপরাধের পিটস্থান এই শার্শা উপজেলা। শার্শা উপজেলার শার্শা ও বেনাপোল থানা এলাকা হত্যা-খুন-মাদক-সোনা-অস্ত্র পাচার সিণ্ডিকেট এবং কিলাররা বেপরোয়া। বৃহস্পতিবার শার্শা ও বেনাপোল থানার হত্যাকাণ্ড এবং মাদক পাচারের পৃথক দুই মামলায়
সাত জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। আদালত সূত্রে জানা যায়, ফেনসিডিলের মামলায় শার্শার তিন মাদক ব্যবসায়ীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছে যশোরের একটি আদালত। বৃহস্পতিবার বিশেষ দায়রা জজ ও বিশেষ জজ (জেলা ও দায়রা জজ) এসএম নূরুল ইসলাম এক রায়ে এ সাজা দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলো, শার্শার শ্যামলাগাছি গ্রামের মতলেব হোসেনের ছেলে কামাল হোসেন, বেনাপোলের বুজতলা গ্রামের মৃত পাচু বেপারির ছেলে আজহার আলী ও ঝিকরগাছার উত্তর দেউলী গ্রামের মৃত চান মিয়ার ছেলে আমির হোসেন মেম্বর। মামলার অভিযোগে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর শার্শা থানা পুলিশের এসআই মুরাদ হোসেন একদল পুলিশ নিয়ে গাতিপাড়া দাখিল মাদ্রাসার পাশে অবস্থান নেন। এসময় পুলিশ দেখে তিনজন তিনটি প্লাস্টিকের বস্তা ফেলে পালিয়ে যায়। তাৎক্ষনিক সাক্ষীদের উপস্থিতিতে প্রত্যেক বস্তার ভিতর ১শ’ বোতল করে, মোট ৩শ’ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পলাতক আমীর হোসেন মেম্বর, কামাল হোসেন ও আজহারকে আসামি করে শার্শা থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন এসআই মুরাদ হোসেন। এ মামলার তদন্ত শেষে ওই তিনজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বরকত হোসেন। দীর্ঘ সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক প্রত্যেকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাস করে সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। কুখ্যাত কিলার ও মাদক সম্রাট কামাল হোসেন ও আমির হোসেন মেম্বারের উপস্থিতিতে বিচারক এ রায় ঘোষণা করেন। অপর আসামি আজহার পলাতক রয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা শার্শার শ্যামলাগাছি গ্রামের মতলেব হোসেনের ছেলে কামাল হোসেন শুধু মাদক সম্রাট নয়, দুর্ধর্ষ কিলার। তার বিরুদ্ধে ৭টি হত্যা মামলা রয়েছে। শার্শা-বেনাপোলে কিলার কমাল নামে সে সমধিক পরিচিত। দুর্ধর্ষ কিলার-মাদক-সোনা-অস্ত্র ব্যবসায়ী কামাল হোসেনের যাবজ্জীবন সাজার খবরে এলাকার মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করেছে। ইতোপূর্বে এই কামাল হোসেনের অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ে দৈনিক প্রতিদিনের কথা পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। অবশ্য কামাল হোসেনের কিলার ও মাদক সম্রাট হওয়ার পেছনে রয়েছে তার শালা এবং স্ত্রীর প্রকাশ্য সমর্থন। তবে এলাকাবাসির দাবি দুর্ধর্ষ কিলার-মাদক-সোনা-অস্ত্র ব্যবসায়ী কামাল হোসেনকে ধারাবাহিক ৭ টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফাঁসির আদেশ দেয়া হোক। এদিকে, শার্শার বেনাপোলের ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক সুজায়েতুজ্জামান প্রিন্স হত্যার ২১ বছর পর দুলাভাই মিজানুর রহমান মিজানসহ চারজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছে যশোরের একটি আদালত। বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক জয়ন্তী রানী দাস এক রায়ে এ আদেশ দিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক। সাজাপ্রাপ্ত মিজানুর রহমান মিজান শার্শা উপজেলার আমতলা গাতীপাড়া গ্রামের আক্কাস আলী মোড়লের ছেলে ও নিহত প্রিন্সের আপন দুলাভাই। অপর আসামিরা হলো, যশোর বেনাপোল কাগজপুকুর গ্রামের কালু ওরফে ঘারকাটা কালুর ছেলে সেকেন্দার, একই গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে জসিম ও ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার ভাটাডাঙ্গা গ্রামের গোলাম মণ্ডলের ছেলে ইকবাল হোসেন। মামলার অভিযোগে জানা গেছে, পিন্স ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবীকা নির্বাহ করতেন। আদালতের অতিরিক্ত পিপি আব্দুর রাজ্জাক জানান, ২০০৪ সালের ২০ আগস্ট প্রিন্স তার গ্রামের বাড়ি পোড়াবাড়ি নারায়ণপুর থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে ভাড়ায় চালনোর উদ্দ্যেশে বের হন। এরপর তিনি আর বাড়ি ফিরে আসেননি। অনেক খোঁজাখুঁজি পর পিন্সকে উদ্ধারে ব্যর্থ হন স্বজনেরা। পরদিন সকালে ছোট নিজামপুর গ্রামের একটি ধানক্ষেত থেকে পিন্সের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় নিহত প্রিন্সের মামা বকতিয়ার অপরিচিত ব্যক্তিদের আসামি করে বেনাপোল পোর্ট থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্তকালে আটক আসামিদের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, প্রিন্সের মোটরসাইকেলটি আত্মসাতের উদ্দ্যেশে পরিকল্পিতভাবে মোটরসাইকেল ছিনতাই করতে প্রিন্সকে হত্যা করেছিল আসামিরা। দীর্ঘ তদন্ত শেষে আটক আসামিদের দেয়া তথ্য ও সাক্ষীদের বক্তব্যে ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় ওই চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমাদেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আফজাল হোসেন। দীর্ঘ সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ২১ বছর পর এক রায়ে ওই চারজনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক প্রত্যেক আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৩ মাস করে সশম্র কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। সাজাপ্রাপ্ত মিজান ও সেকেন্দার কারাগারে আটক আছে।

