১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

গভীর সংকটে দেশ

দেশের অর্থনীতির বিপর্যস্ত অবস্থা। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা। শিল্প-কারখানা ধুঁকছে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে। শ্রমিক বেকার হচ্ছে। নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। জননিরাপত্তা হুমকিতে। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের চাপে মানুষ দিশাহারা। দেশ ক্রমেই গভীর সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশে দ্রুত নির্বাচিত সরকার আসা প্রয়োজন, যারা শক্ত হাতে রাষ্ট্রের হাল ধরতে পারবে, চরম বিপর্যয় থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারবে। রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা সিটিতে নিউজ২৪ টিভি আয়োজিত ‘সংকট উত্তরণে সংসদ নির্বাচন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত দেশের রাজনীতিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও বিশিষ্টজনরা বলেন, সংকট থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত সুষ্ঠু, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও নির্ভরযোগ্য নির্বাচন হতে হবে। গত বছরের জুলাই-আগস্টে একটি সফল গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেড় দশক ধরে চেপে বসে থাকা স্বৈরাচারকে বিদায় করা হয়েছিল। সে সময় দেশে যে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে উঠেছিল, নানা কারণে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। অনেক রাজনৈতিক দলই মনে করে, দু-একটি দলের প্রতি বিশেষ নমনীয়তা দেখিয়ে এই সরকার তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। ফলে দ্রুত নির্বাচন না হলে দেশ ক্রমে বড় ধরনের সংকটে পড়ে যাবে বলে মনে করছেন বেশির ভাগ বক্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্র কী অবস্থায় আছে, সেটি বোঝার জন্য গতকালকের মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ঘটনা যথেষ্ট।’ তিনি বলেন, ভেতর থেকে দুর্বল ও ভঙ্গুর এই রাষ্ট্র আরো অনেক কিছুকে ভঙ্গুর করে দিচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘বাইরের দেশের হস্তক্ষেপ, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্লাসরুমে ছেলেদের ফিরে না যাওয়া, নানা দিক থেকে সংকট ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। একটি ক্রেডিবল নির্বাচন দেশকে স্থিতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী সংস্কারগুলো নির্বাচিত সরকারই করবে।’ এদিকে সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অভিযোগ করা হয়েছে, সংস্কারের নামে নতুন নতুন প্রস্তাব সামনে এনে অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছে। দলটি বলেছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এমন সব সংস্কার প্রস্তাব আনছে, যা বাস্তবায়নযোগ্য নয়, যার কারণে বিব্রত হতে হচ্ছে। বিএনপি নেতাদের অভিমত, দেশে দেশে গণতন্ত্রের স্বাভাবিক প্র্যাকটিসগুলোও কমিশন উপেক্ষা করতে চাচ্ছে। যুক্তরাজ্য, ভারতসহ অনেক দেশে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী একই ব্যক্তি হওয়ার নজির রয়েছে। বাংলাদেশেও দলের প্রধানই প্রধানমন্ত্রী হয়ে আসছেন। তাই দলীয় প্রধানের প্রধানমন্ত্রী না হতে পারার প্রস্তাব বিএনপি মানবে না। তা সত্ত্বেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বর্তমান শোকাবহ পরিস্থিতিতে সবাইকে শান্ত ও সংহত থাকার আহবান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং প্রতিটি সংকটকে সংহতি নিয়ে মোকাবেলা করতে হবে। আমরা আশা করি, পরিস্থিতি আরো জটিল হওয়ার কিংবা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই অন্তর্বর্তী সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। রাজনৈতিক বিভক্তি আরো বৃদ্ধি পায় এমন সংস্কার থেকে বিরত থাকাই ভালো হবে। পাশাপাশি দ্রুত সময়ে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়