১৫ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ৩১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সুপারিশ

‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কিত সুপারিশমালা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে এমন কিছু সুপারিশ করা হয়েছে, যা নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর প্রবল আপত্তি রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার বদলে জাতীয় অনৈক্য প্রতিষ্ঠার একটা প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে, যেটা আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে কখনো টেবিলে ছিল না, আলোচিত হয়নি, ঐকমত্য হয়নি, সেগুলো চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ দ্বৈত ভূমিকা পালন করবে।
জাতীয় সংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবেও কাজ করবে। জুলাই জাতীয় সনদে উল্লেখিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে সংবিধান সংস্কার পরিষদকে ২৭০ দিন বা ৯ মাস সময় বেঁধে দেওয়া হবে। এর মধ্যে সংসদ ব্যর্থ হলে সংস্কার প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে। এর আগে অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করবে।
এই সাংবিধানিক আদেশের আলোকে গণভোট হবে। গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিনও হতে পারে কিংবা আগেও হতে পারে। তবে গণভোটে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ থাকবে না।সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরিত সনদে যেসব বিষয় নেই এমন অনেক সুপারিশ সনদ বাস্তবায়নের আদেশের খসড়ায় যুক্ত করা হয়েছে।পরিষ্কারভাবে বলা আছে, রাজনৈতিক দলগুলো নোট অব ডিসেন্টের বিষয়গুলো নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হলে তার ভিত্তিতেই সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। অথচ যে সংযুক্তিগুলো দেওয়া হলো সুপারিশমালার সঙ্গে, সেখানে নোট অব ডিসেন্টের কোনো উল্লেখই নেই। তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কার পরিষদের নামে যে আইডিয়া এখানে সংযুক্ত করা হয়েছে, তা কখনো ঐকমত্য কমিশনের টেবিলে ছিল না, আলোচনাও হয়নি। কোনো ঐকমত্য হয়নি। উচ্চকক্ষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে যেটা বলা হচ্ছে, নিম্নকক্ষের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে আসনবণ্টনের মধ্য দিয়ে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে।
এ রকম তো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হয়েছে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে ১০০ সদস্যের। তারা কিভাবে কোন পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবে, সেটার ব্যাপারে তো ঐকমত্য হয়নি। কেউ কেউ ভোটের অনুপাতে চেয়েছে। বিএনপি চেয়েছে নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে।
সবচেয়ে বেশি মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে গণভোটের দিন নিয়ে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে, এটাই বিএনপির অবস্থান, এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচন কোনো কারণে না-ও হতে পারে। কিন্তু জুলাই সনদ একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল এবং সেটি সবার আগে বাস্তবায়ন করতে হবে।’ নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, যারা নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের পক্ষে, তারা মূলত জুলাই সনদকে অকার্যকর করতে চায়।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় দেশ এক ভয়ংকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। আমরা চাই না, তা আর দীর্ঘায়িত হোক। আমরা চাই, অন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশন জুলাই গণ-আন্দোলনের পক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে ঐক্য বজায় রাখার জন্য সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়