১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে দুই শিশুসহ তিনজনকে হত্যা

খুলনা প্রতিনিধি
খুলনার লবণচরার টুটপাড়া দরবেশ মোল্লা গলির আলোচিত তিন খুনের মূল পরিকল্পনাকারী শামীম আহমেদ এক লাখ টাকায় খুনিদের সাথে রফা-দফা করে। মিশন সম্পন্ন হওয়ার পর চুক্তি অনুযায়ী ঘটনার দিন রাতে ফ্রান্স প্রবাসী শামীম হত্যাকারীদের পাওনা পরিশোধ করে দেন। বুধবার গভীর রাতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে গ্রেপ্তার হওয়া আলোচিত ট্রিপল মার্ডারের পরিকল্পনাকারী শামীম এমন তথ্য জানিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন। শনিবার দুপুরে কেএমপি সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবু রায়হান মোহাম্মদ সালেহ উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে এমনই তথ্য তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “তিন খুনের মূল পরিকল্পনাকারী শামীম আহমেদ হত্যার শিকার দুই শিশুর বাবা শেফারের মামাতো ভাই। রূপসা উপজেলার আইচগাতী ইউনিয়নের ভবাণীপুর গ্রামে ১ একর ৬৯ শতক জমি নিয়ে তাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। শামীম জাল দলিল করে ওই জমি ভোগ দখল নেওয়ার চেষ্টা করে। এ নিয়ে মামলাটি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।” তিনি আরও বলেন, “শামীম ২০১৬ সালে ইউরোপের দেশ ফ্রান্সে পাড়ি জমায়। ২০২৩ সালে দেশে ফিরে রূপসা থানার অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যায়। অস্ত্র মামলায় জামিন নিয়ে সে পুনরায় আবার বিদেশ পাড়ি দেন। কারাগারে থাকাকালীন খুলনার একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর সাথে তার বন্ধুত্ব হয়। সেখানে থেকেই শেফার আহম্মেদ পরিবারকে শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করে সে। কয়েক মাস পূর্বে শামীম দেশে ফিরে ওই সন্ত্রাসী বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করে এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য খুনিদের সাথে ১ লাখ টাকা চুক্তিতে রফা-দফা করা হয়।” সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, “১৬ নভেম্বর দুপুর ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে বাড়ির দেওয়াল টপকিয়ে শামীমসহ ৬-৭ জন খুনি শেফার আহমেদের বাড়িতে প্রবেশ করে। ওই হত্যাকারীদের মধ্যে লবণচরা থানা এলাকার আর্জুর কালভার্ট এলাকার তরিকুল ইসলাম তারেক শেফার আহম্মেদের শ^াশুড়ি মহিতুন্নেছাকে ইট দিয়ে আঘাত করে মাথা থেঁতলে দিলে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। এরপর শেফার আহম্মেদের দু’সন্তানকে একইভাবে ইট দিয়ে হত্যা করা হয়। তিন খুনের পর হত্যাকারীরা কিছু সময় তাদের বাড়িতে অবস্থান করে চলে যায়।” ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় শেফার আহম্মেদ প্রথম থেকে মামাতো ভাই শামীমকে দোষারোপ করে আসছেন। হত্যাকা-ের ৩ দিন পর শেফার আহম্মেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ শামীম আহম্মেদের গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকে। এর মধ্যে ২০ নভেম্বর রাতে মোল্লাপাড়া আর্জুর কালভার্ট এলাকা থেকে তরিকুল ইসলাম তারেককে এ মামলায় গ্রেপ্তার করে। সে হত্যাকা-ের ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। তার দেওয়া তথ্যে পুলিশ পরবর্তীতে তাফসির হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়া প্রবাসী হওয়ায় শামীম সম্পর্কে পুলিশ বিভিন্নস্থানে তথ্য দিয়ে রাখে। ঘটনার পরপরই শামীম তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ রাখে। ফ্রান্সে যাওয়ার আগে শামীম তার বন্ধুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ব্যবহার করে বিভিন্নস্থানে কথা বলতে থাকে। বুধবার রাতে দেশের বাইরে যাওয়ার আগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় শামীম। পুলিশের কাছে হত্যাকা-ের সকল বর্ণনা দেয় সে। স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে চাইলে শুক্রবার রাতে তাকে উপস্থিত করা হলে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরিকল্পনাকারী গ্রেপ্তার হলেও অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান আছে। এ মামলার অন্যান্য আসামিরা খুব দ্রুত গ্রেপ্তার হয়ে যাবে। সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন কেএমপি’র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. শিহাব করিম, সহকারী পুলিশ কমিশনার ত ম রোকনুজ্জামান, সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. গোলাম মোর্শেদ, লবণচরা থানার অফিসার ইনচার্জ হাওলাদার সানওয়ার হুসাইন মাসুম প্রমুখ।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়