১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

কুষ্টিয়ায় বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রচণ্ড দাবদাহে জনজীবন দুর্বিষহ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা কুষ্টিয়ার মানুষের। দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গরমের তীব্রতা। ভ্যাপসা গরমে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। প্রখর তাপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভ্যাপসা গরমের প্রভাব পড়ছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর। দিনের বেলায় তীব্র তাপদাহের সঙ্গে রাতেও গরমের তীব্রতা থাকছে। গরমের কারণে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বেড়েছে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। ফলে হাসপাতালে বৃদ্ধি পাচ্ছে রোগীর সংখ্যা।
কুষ্টিয়া আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, শনিবার (১০ মে) বিকাল ৩টা পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি এই জেলায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড। টানা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছে না কুষ্টিয়া আবহাওয়া অফিস। প্রসঙ্গত, এর আগে গত বছরের ৩০ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেটি ছিল গত বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড। সরেজমিন দেখা যায়, গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবী মানুষ। বিশেষ করে, বর্তমানে জেলায় ধান কাটার মৌসুম চলছে। এই ধান কাটার মৌসুমে কৃষকদের কষ্ট সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এ ছাড়াও জেলার ভ্যান-রিকশা চালক ও শ্রমজীবী মানুষরা কষ্টে রয়েছেন। গরমে কিছুটা স্বস্তি পেতে অনেককে রাস্তার পাশে শরবত পান করতে দেখা গেছে। স্থানীয় মিরপুর বাজারের ভ্যানচালক উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ‘তীব্র দাবদাহের কারণে দিনের বেলা ভ্যান চালাতে চরম কষ্ট হচ্ছে। গরমের কারণে আমাদের যাত্রী কমে গেছে। রোদের ভেতরে মানুষ প্রয়োজন ছাড়া বের হতে চাচ্ছে না। গরমের কারণে ঠিকমতো ভ্যানের ভাড়া মারতে পারছি না। ভ্যান চালিয়ে আমাদের সংসার চলে।’ সুলতানপুর গ্রামের কৃষক আতিয়ার রহমান বলেন, ‘এখন আমাদের এখানে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে তীব্র রোদের কারণে শ্রমিকদের ধান কাটতে কষ্ট হচ্ছে, তাই নিজের জমির ধান নিজেই কাটা শুরু করেছি। গরমে ধান কাটতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।’ কুমারখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন আর রশিদ বলেন, ‘শনিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। এর আগে শুক্রবারও কুষ্টিয়া জেলার একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।’ আবহাওয়া কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘তাপদাহ আরও কয়েকদিন এমন থাকতে পারে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হওয়ার পরে তাপমাত্রা কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে।’ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ঈমাম বলেন, ‘তীব্র দাবদাহ এবং ভ্যাপসা গরমের কারণে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন অনেকে চিকিৎসা নিতে আসছেন। তাদের মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের গরমে মানুষের সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক, তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে নিরাপদ থাকা যায়। বাইরে বের হলে, রোদে গেলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। রোদে ছাতা, ক্যাপ ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়াও প্রচুর পানি, লেবুর শরবত, স্যালাইন ও তরল খাবার খেতে হবে। তেল-মসলাজাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। যারা অসুস্থ, তাদের খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া দিনের বেলায় বাইরে বের না হওয়াই ভালো।’

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়