১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

কমলার খোসার নানা ব্যবহার

প্রতিদিনের ডেস্ক
কমলার আছে নানা গুণ, কিন্তু কমলার খোসাও যে বেজায় গুণধর, তা জানেন কি? কমলার খোসার কিছু গুণাগুণ সম্পর্কে জানলে এর পর থেকে কমলার খোসাগুলো আর ফেলে দেবেন না। রান্না থেকে শুরু করে ত্বকের যত্ন, এমনকি ঘরে মনমাতানো সৌরভ আনতেও কমলার খোসার জুড়ি মেলা ভার! লিখেছেন ফারিয়া এজাজ।
রোমকূপের ময়লা দূর করে
ধুলাবালু ত্বকের রোমকূপে জমে ব্রণ, র‍্যাশ, চুলকানিসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। আর ত্বকের এই ময়লা তুলে ত্বককে গভীর থেকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে প্রাকৃতিক স্ক্রাব, শুকনা কমলার খোসা। কমলার খোসা রোদে শুকিয়ে ব্লেন্ডের পর মিহি গুঁড়া করে কাচের জারে ভরে রেখে দিতে পারেন। সেই সঙ্গে শুকনা কমলার খোসা ত্বকের উপরিভাগের মৃত কোষ দূর করে ত্বকে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। এ ছাড়া হোয়াইটহেডস ও ব্ল্যাকহেডস দূর করার জন্য কমলার খোসা দারুণ একটি উপাদান। মধুতে অ্যালার্জি না থাকলে কমলার খোসার সঙ্গে মধু মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। আর্টিফিশিয়াল স্ক্রাবের চেয়ে প্রাকৃতিক এই স্ক্রাব হাজার গুণে কার্যকরী।
রোদে পোড়াভাব দূর করে
কমলার খোসার সঙ্গে আরও কিছু প্রাকৃতিক ও সহজলভ্য উপাদান মিশিয়ে সহজেই বানিয়ে নিতে পারেন হোমমেড সান ট্যান রিমুভিং ফেস স্ক্রাব। একটি পাত্রে এক টেবিল চামচ কমলার খোসা, আধা টেবিল চামচ চিনি, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও গোলাপজল দিয়ে কাদা কাদা করে স্ক্রাবটি বানিয়ে নিন। স্ক্রাবটি মুখে লাগিয়ে দু-তিন মিনিট আলতোভাবে ঘষে নিন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করে
কিশোরী, তরুণী থেকে শুরু করে প্রায় সব বয়সীরাই ব্রণের সমস্যায় ভোগেন। কমলার খোসার গুঁড়ার সঙ্গে মসুর ডালের গুঁড়া অথবা পেস্ট ও গোলাপজল মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। এরপর ১৫ মিনিট রেখে আলতোভাবে ঘষে তুলে ফেলুন এবং কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। কমলার খোসায় থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড প্রাকৃতিকভাবে ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
রুম ফ্রেশনার হিসেবে কাজ করে
এখন বাজারে নানা ব্র্যান্ডের ও ফ্লেভারের এয়ার ফ্রেশনার পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এর সবগুলোই কেমিক্যালযুক্ত, যা স্বাস্থ্যের জন্য, বিশেষ করে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে কমলার খোসাকে যদি রুম ফ্রেশনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে রুমে যেমন স্নিগ্ধ, মিষ্টি সুঘ্রাণ থাকবে, তেমনি শারীরিক কোনো ক্ষতিও হবে না। চুলায় গরম পানি বসিয়ে তা ফুটে এলে তাতে কমলার খোসা ছেড়ে দিন। সেই সঙ্গে আরও কিছু সুগন্ধি ভেষজ, যেমন পুদিনাপাতা, আদাকুচি, গোলাপের পাপড়ি বা বেলি ফুল দিয়ে দিতে পারেন। সব একসঙ্গে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে জ্বাল কমিয়ে দিন। ধীরে ধীরে পুরো ঘরে সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়বে। এমনকি রান্না ঘরে উটকো, আঁশটে গন্ধ থাকলে, তা–ও চলে যাবে।
রান্নাঘর পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে
একটি কাচের জারে সাদা ভিনেগার নিন। এই ভিনেগারে কমলার খোসার টুকরা দিয়ে ঢাকনা লাগিয়ে নিন। এভাবে দু-তিন সপ্তাহ রুমের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে দিন। মাঝেমধ্যে কাচের জারটি ঝাঁকিয়ে নেবেন। কয়েক সপ্তাহ পর একটি স্প্রে বোতলে কমলার খোসাগুলো ছাড়িয়ে শুধু ভিনেগারটুকু ঢেলে নিন। রান্নাঘরের তেল চিটচিটে জায়গা এবং চুলার চারপাশে এই ভিনেগার স্প্রে করে মুছে নিন। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ব্যবহারে আপনার রান্নাঘর থাকবে ঝকঝকে পরিষ্কার।
রান্নায় ব্যবহার করুন
রান্নায় কমলার খোসা ব্যবহার করলে রান্নায় সুঘ্রাণ তো আসেই, সেই সঙ্গে রান্নায় যুক্ত হয় ভিটামিন সি–এর গুণাগুণ। মিষ্টি বা ডেজার্ট–জাতীয় আইটেমের পাশাপাশি বেকারি আইটেম, যেমন কেক, বিস্কুট, মাফিন এগুলো তৈরিতেও ব্যবহার করতে পারেন কমলার খোসার মিহি করা কুচি। তা ছাড়া কিছু কিছু ওয়েস্টার্ন স্টাইল সালাদ বানানোর সময়ও কিন্তু ব্যবহার করতে পারেন চিকন, পাতলা করে কাটা কমলার খোসা। আবার মারমালেড ও জ্যাম-জেলি তৈরির সময়ও কমলার খোসা ব্যবহার করতে পারেন।
দাঁত সাদা করতে সাহায্য করে
কমলার খোসা দাঁতের হলদেভাব দূর করতে সাহায্য করে। কমলার খোসাতে আছে ডি-লিমোনেনে নামক একধরনের উপাদান, যা দাঁতের হলদেভাব দূর করতে সাহায্য করে। কমলার খোসার পেছনের সাদা অংশ দু-তিন মিনিট আলতোভাবে দাঁতে ঘষে নিন। এভাবে দু-তিনবার ঘষলেই দাঁত অনেকটা সাদা হয়ে আসবে। কমলার খোসার গুঁড়ার সঙ্গে কিছুটা পানি মিশিয়ে প্রাকৃতিক টুথপেস্ট বানিয়ে নিন। প্রতিদিন অন্তত দুবার এই পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে আপনার দাঁত ও মাড়ি থাকবে সুস্থ।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়