প্রতিদিনের ডেস্ক
আব্দুর রউফ ওরফে বাপ্পি। পড়াশোনা করেন এইচএসসি পর্যন্ত। পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে ঢাকায় এসেছিলেন গার্মেন্টসে চাকরির জন্য। ভর্তি হয়েছিলেন বিজেএমইএর ট্রেনিং প্রতিষ্ঠান কিউসি ম্যানেজমেন্টের ওপর ৬ মাসের কোর্সে। তবে শারীরিক অসুস্থতার জন্য কোর্সটা সম্পন্ন করতে পারেননি। চলে যান গ্রামের বাড়ি শেরপুর। তবে চলে গেলেও বায়িং হাউজ সম্পর্কে অর্জন করা জ্ঞান তার সঙ্গী হয়।
বাড়িতে গিয়ে গ্রামীণেফোনের সিম বিক্রেতার কাছ থেকে সংগ্রহ করেন কয়েকটা বেনামি রেজিস্ট্রেশন করা সিম। এসব সিম দিয়ে শুরু করেন বায়িং হাউজে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা। বায়িং হাউজের চাকরি সম্পর্কে ধারণা থাকায় বিভিন্ন কৌশলে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে সিভি সংগ্রহ করে, সিভির রেফারেন্সে থাকা নম্বরগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেও নতুন করে সিভি সংগ্রহ করেন।
এরপর সংগৃহীত সিভির চাকরি প্রার্থীদের ফোন করে নিজেকে বিভিন্ন নামিদামি বিদেশি কোম্পানির বাংলাদেশি প্রতিনিধি বলে পরিচয় দেন, আকর্ষণীয় বেতনে বায়িং হাউজের চাকরির অফার করেন। এরপর হোয়াটসঅ্যাপে কান্ট্রি ম্যানেজারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
কণ্ঠ পরিবর্তন করে কখনো ভারতীয় নাগরিক, কখনো শ্রীলঙ্কান নাগরিক পরিচয়ে কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে কথা বলেন। হোয়াটসঅ্যাপে ইন্টারভিউ নিয়ে চাকরি কনফার্ম করেন। পরে বাংলাদেশি প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। বাংলাদেশি প্রতিনিধি পরিচয়দানকারী ব্যক্তি কান্ট্রি ম্যানেজারকে তার দেশে যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিট কেনার জন্য কিছু টাকা দিতে বলেন। কেউ একবার এই ফাঁদে পা দিলে শুরু হয় তার নতুন ফাঁদ।
চাকরি কনফার্ম করে মূল কোম্পানিতে মেইল করা হয়েছে বলে জানান। বিদেশি কোম্পানির বেতন নিতে হবে নেটেলার/পেপাল অ্যাকাউন্টে, অ্যাকাউন্ট তৈরি এবং চালু করার জন্য বিভিন্ন ধাপে টাকা হাতিয়ে নেন প্রতারক।
টাকা দিতে না চাইলে ক্যারিয়ার ধ্বংসের হুমকি দেওয়া হয়। টাকা হাতানোর কৌশলও অভিনব। প্রতারক নিজের কোনো বিকাশ, নগদ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন না। প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া টাকা ডিপোজিট করেন অনলাইন জুয়াসাইট ‘1XBET’ এ। এভাবে প্রতারকচক্র গত চার বছরের প্রায় পাঁচ শতাধিক চাকরি প্রার্থীর সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে দুই কোটি টাকা হাতিয়েছে। প্রতারণার মাধ্যে হাতিয়ে নেওয়া টাকার বেশিরভাগ জুয়ার সাইট ‘1XBET’ এ বেটিং করে হারিয়েছেন।
তার প্রতারণার শিকার একজন ভুক্তভোগী গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীর উত্তরখান থানায় বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
পরবর্তী সময়ে মামলাটি কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ তদন্ত করে ইন্টারনেট রেফারেল টিমের টিম লিডার সহকারী পুলিশ কমিশনার ইমরানুল ইসলামের নেতৃত্বে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই অজয় দাস।
এসআই অজয় দাস জানান, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক আব্দুর রউফ ওরফে বাপ্পিকে শেরপুরের সদর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়।
তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল সিমকার্ড, মোবাইল ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা আলামত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গ্রেফতার আসামি গত ২ মাসেই একটি ‘1XBET’ অ্যাকাউন্ট থেকে ২১ লাখ টাকার জুয়া খেলে খুইয়েছেন।
চাকরির প্রলোভনে হাতিয়ে নেওয়া কোটি টাকা জুয়ার সাইটে
