এম শামীমের অনুগল্প: দশ টাকার নোট

0
38

প্রতিদিনের ডেস্ক
‘এই দাঁড়া!’
আমি দাঁড়ালাম। একা নয়, আমার সাথে সাথে গায়ের লোমও দাঁড়িয়ে গেছে। মাঝরাতে কেউ হুটহাট এই দাঁড়া বললে একসাথে দুটো ভয় ভর করে। একটা হলো ছিনতাইয়ের ভয়, আরেকটা ভূতের ভয়।
হালকা শীতের রাত, হাতে গ্লাভস পরে বের হয়েছি। এই শীতেও ঘামছি। আপাতত ভূতের ভয় পাচ্ছি না, ছিনতাইয়ের ভয় পাচ্ছি। অবশ্য দুটি কিডনি ছাড়া তেমন কিছু হারানোর ভয় নেই!
‘তোর হাতে ওইটা কী?’
আমি শুকনো গলায় বললাম, ‘সিগারেট। খাবেন?’
‘লাগবে না, আগুনটা দে।’
আমি আগুন দিলাম।
ওরা চারজন একসাথে দাঁড়িয়ে। যে সিগারেট ধরাচ্ছে, সে সম্ভবত দলের নেতা। একটা টান দিয়ে আকাশের দিকে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল, ‘তোর মানিব্যাগটা দে।’
‘আমার কাছে মানিব্যাগ নেই।’
‘তাইলে মোবাইলটা দে। কল দিবো, আমারটাতে ব্যালেন্স নাই।’
আমি আমতা আমতা করে বললাম, ‘ভাই আমার তো মোবাইল কেনারই ব্যালেন্স নেই।’‘পকেট তো আছে। কিছু টাকা দে। পোলাপান মাল-পানি খাইবো, টাকা দরকার।’
পকেট হাতড়ে মাত্র দশ টাকার একটা নোট পেলাম। তা-ও আবার নোটের গায়ে পানের পিকের মতো রং লেগে আছে। ওটাই দলনেতার দিকে এগিয়ে দিলাম।
প্রায় সাথে সাথেই শালা শুয়োরের বাচ্চা গালি সমেত মাথা ঝিম ধরা একটা থাপ্পড় খেলাম। হাত থেকে সিগারেটটা পড়ে গেছে, সাথে নোটটাও। শরীর কাঁপছে। এই শীতেও দরদর করে ঘামছি।
ওদের মধ্য থেকে একজন বিশ্রী ভাষায় গালি দিয়ে বলে উঠলো, ‘ভাইকে কি তোর ফকিন্নি মনে হয়?’
আমি তথাকথিত ভাইয়ের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বললাম, ‘ভাই বেয়াদবি নিবেন না। আমার কাছে এই পানের পিকওয়ালা দশটা টাকাই আছে।’
ভাইয়ের মনে দয়া হলো। আমাকে কাছে টেনে পিঠ চাপড়ে বললেন, ‘যা কিছু মনে নিস না। পোলাপান মানুষ, মাথার ঠিক নাই। ভুলে একটা থাপ্পড় মারছে।’
আমি পড়ে যাওয়া সিগারেটটা তুলে টানতে টানতে চলে এলাম। দশ টাকার নোটটি নিশ্চয়ই ওই ছ্যাঁচড়াটা তুলবে। নোটে পানের পিকের রং নেই। আছে বিষাক্ত কেমিক্যাল। খালি হাতে তুললে ওর চামড়া ধীরে ধীরে পুড়ে যাবে। আমার হাতে গ্লাভস পরা ছিল বলে কিছু হয়নি। থাপ্পড়টা ও ডানহাতেই মেরেছে। ডানহাতেই হয়তো নোটটা তুলবে। পরদিন নিশ্চয়ই চিন্তা করবে আমাকে থাপ্পড় মারার জন্য হাত এমন হয়েছে। আমার অভিশাপে আল্লাহ এই শাস্তি দিয়েছে।
এসব ভাবতে ভাবতে আর মুচকি হাসি হাসতে হাসতে আমি এগোচ্ছি। কৃষ্ণপক্ষের চাঁদটাও আমার সাথে হাসছে। সেই হাসিতে স্নিগ্ধতা আছে, মায়ের হাসির মতো স্নিগ্ধতা।