উৎপল মণ্ডল,শ্যামনগর
শীতের তীব্রতায় রীতিমত কাঁবু হয়ে পড়েছে উপকুলীয় জনপদ শ্যামনগরের নানা প্রান্তের মানুষ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ছিন্নমুল এবং নিম্ম আয়ের মানুষের দুর্দশা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এছাড়া শীতজনিত কারনে উপজেলাজুড়ে নিউমোনিয়াসহ ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলার উপকুলীয় জনপদ বুড়িগোয়ালীনি, মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় বৃহস্পতিবার থেকে শীতের তীব্রতা মারাত্বকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় একই সময় থেকে হঠাৎ ঘন কুয়াশা সৃষ্টি হওয়ায় স্থানীয়দের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। চাষীরা বীজতলা তৈরীতে যেমন বাধাগ্রস্থ হচ্ছেন তেমনী খেঁটে কাওয়া নিম্ম আয়ের মানুষের ভোগন্তি চরম আকার ধারণ করেছে। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার দুপুরের কিছু আগে সুর্যের দেখা মেলায় সকাল থেকে তীব্র শীতের মধ্যে নিম্ম আয়ের অসংখ্য মানুষ কাজে যেতে পারেনি। ছুটির দিন হওয়ার পাশাপাশি মীতের প্রচন্ডতায় রাস্তায় মানুষজনের উপস্থিতি ছিল তুলনামুলক অনেক কম।
উপজেলার গোপালপুর গ্রামের শাহিন হোসেন জানান বৃহস্পতিবার রাত থেকে রীতিমত হাঁড় কাঁপানো শীত শুরু হয়েছে। এত শীতের মধ্যে সকালে কাজে যেতে পারেননি জানিয়ে তিনি আরও বলেন একদিন কাজ না করলে সংসার চলে না। তারপরও শীতের প্রচন্ডতার কারনে আরও অনেকের মত তিনি কাজের জন্য মোকামে যাননি।
কাঁচড়াহাটি নন্দীগ্রামের জিকো জানান,গত কয়েক দিন শীত থাকলেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে তা প্রকট হয়ে উঠেছে। সাথে আগের রাত থেকে শুরু হওয়া কুয়াশার তীব্রতা শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সবকিছু ঢেকে রাখায় মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে বিঘœ ঘটেছে। অনেকে বীজতলা প্রস্তুতের জন্য মাঠে গেলেও শীতের তীব্রতায় সরঞ্জামাদী নিয়ে বাড়িতে ফিরতে বাধ্য হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এদিকে শীতের তীব্রতায় উপজেলাজুড়ে নিউমোনিয়া এবং ডায়ারিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি ছুটির কারনে সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহিঃর্বিভাগ বন্ধ থাকায় জরুরী বিভাগে বিকাল পর্যন্ত ২০ শিশুকে শীতজনিত চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথা জানান সেখানে কর্মরত চিকিৎসক আব্দুল মজিদ।স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও শিমু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ২ মাসের পরিমনির পিতা কার্তিক মন্ডল জানান ডায়ারিয়ার কারনে সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। কিন্তু শয্যা সংকট সত্তে¡ও প্রচন্ড শীতের মধ্যে মেঝেতে বিছানা তৈরী করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। ছয় মাসের আব্দুর রহমানকে নিয়ে হাসপাতালে অবস্থানরত তার পিতা আশিকুর রহমান বলেন মারাত্বক শীতে জুবুথুবু অবস্থা। শুধু সন্তানের নিউমোনিয়া হওয়ায় সার্বক্ষনিক চিকিৎসকের তত্তাবধানে রাখতে প্রচন্ড শীতের মধ্যে অনেক কষ্ট সত্তে¡ও হাসপাতালে অবস্থান করছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ নাজমুল হুদা জানান গত সাতদিনে ডায়ারিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত দুই শতাধিক শিশুকে তিনি চিকিৎসা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার থেকে শেিতর তীব্রতা বৃদ্ধির ঘটনায় পরিবার সতর্ক না হলে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ১৮ শিশুকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ শাহিনুল ইসলাম জানান, পৌরসভাসহ ১২টি ইউনিয়নে পাঁচ হাজারের বেশী কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।