একজন এমপি হয়ে আরেক এমপির বিরুদ্ধে লড়ছি

0
53

প্রতিদিনের ডেস্ক
সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদীর ‘দখলে’ থাকা গুলশানের বাড়ি নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল না করায় দুদকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
তিনি বলেন, আমি একজন এমপি হয়ে আরেক এমপির বিরুদ্ধে লড়ছি। অথচ সালাম মুর্শেদীর বাড়ি নিয়ে নিরব দুদক।বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ব্যারিস্টার সুমন।
সালাম মুর্শেদী খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সরকারি সম্পত্তি গুলশানের বাড়িটি নিজের দখলে নিয়েছেন।এদিকে এ বিষয়ে তদন্ত করে ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদাত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদলতে দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। আর রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
শুনানি শেষে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আমি একজন এমপি হয়ে আরেকজন এমপির বিরুদ্ধে লড়ছি। উনিও সংসদে শপথ নিয়েছেন আমিও নিয়েছি। আমরা শপথ নিয়েছি যে, ব্যক্তি স্বার্থকে বড় করে দেখবো না। আপনারা জানেন, উনি (সালাম মুর্শেদী) যে বাড়িতে থাকেন সেটি সরকারের জমি। দুদক এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করলেও আদালতে দাখিল করছে না।
তিনি আরও বলেন, এর আগের শুনানিতে প্রতিবেদন দাখিল না করলে আদালত অবমাননার শামিল বলার পরও দুদক প্রতিবেদন দাখিল করেনি।
ব্যারিস্টার সুমন আরও বলেন, দুদকের আইনজীবী বললেন যে, দুদক পক্ষপাত করেন না। মাঝে মাঝেই বলেন তারা কারো কাছে মাথানত করেন না। কিন্তু আমার মনে হয়, সালাম মুর্শেদীর বাড়ি নিয়ে নিরব দুদক। তারা মাথানত করেছে কি না, তা বলতে পারবো না। তবে মুর্শেদীর বাড়ির প্রশ্নে দুদকের যে মাথা ঘোরায়, এটুকু বলতে পারি।
এদিকে ব্যারিস্টার সুমনের এ বক্তব্য মনগড়া বলে মন্তব্য করেছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন, সুমন সাহেব তো অনেক কথাই বলেন। তার কথা মতো তো আমরা প্রতিবেদন দেবো না। আদালতের নির্দেশে প্রতিবেদন দাখিল করবো।
তিনি বলেন, এখনো বলছি, দুদক কারো কাছে মাথানত করে না, কখনো নিরব থাকে না। দুদক সব সময় সরব আছে এবং থাকবে। দুদকের কারণেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও মন্ত্রীদের সাজা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ২৩ আগস্ট এবং তারও আগে ২০ জুলাই আদালতকে জানানো হয়, আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি নিয়ে অনুসন্ধান কাজ শেষ করেছে দুদকের অনুসন্ধান টিম। এখন কমিশন এ বিষয়ে পর্যালোচনা করবে। এরপর আদালতে জমা দেওয়া হবে প্রতিবেদন। সেজন্য সময় চেয়েছিলেন দুদকের আইনজীবী। এ বিষয়ে শুনানির জন্য পরবর্তী দিন ঠিক করেন হাইকোর্ট। তারই ধারাবাহিকতায় আজ শুনানির জন্য আসে।
আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে গুলশানের পরিত্যক্ত বাড়ি দখলে নেওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ১ নভেম্বর বাড়ির সব নথি তলব করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এবং আব্দুস সালাম মুর্শেদীকে ১০ দিনের মধ্যে হলফনামা আকারে নথি দাখিল করতে বলা হয়।
এছাড়া সরকারি সম্পত্তি নিজের নামে নিয়ে বাড়ি বানানোর অভিযোগে সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে পরিত্যক্ত সম্পত্তির ‘খ’ তালিকাভুক্ত বাড়িটি বেআইনিভাবে দখল করার অভিযোগে সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চান আদালত।
২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ বিষয়ে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
রিটে বলা হয়, রাজধানীর গুলশান-২-এর ১০৪ নম্বর সড়কে সি ই এন (ডি)-২৭-এর ২৯ নম্বর বাড়িটি ১৯৮৬ সালের অতিরিক্ত গেজেটে ‘খ’ তালিকায় পরিত্যক্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত। কিন্তু আব্দুস সালাম মুর্শেদী সেটি দখল করে বসবাস করছেন।