স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন প্রণয়ন জরুরি

0
39

রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনা করাতে এসে শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় আবারো স্বাস্থ্যসেবায় নৈরাজ্যের বিষয় সামনে আসছে। শিশুর খতনা পরিবারের জন্য এক আনন্দ আয়োজন, কিন্তু আয়ানের পরিবারের সেই আনন্দ শোকে পরিণত হয়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর খৎনা করানোর জন্য আয়ানকে রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। অনুমতি ছাড়াই ‘ফুল অ্যানেসথেসিয়া’ (জেনারেল) দিয়ে চিকিৎসক আয়ানের খতনা করান বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে জ্ঞান না ফেরায় আয়ানকে গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার পিআইসিইউতে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গত ৯ জানুয়ারি রাজধানীর বাড্ডা থানায় আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ বাদী হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতাল ও ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক, অজ্ঞাতনামা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও একজন পরিচালককে আসামি করে মামলা করেন। আয়ানের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়। ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসা অবহেলার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে এর আগেও আমরা দেখেছি। করোনাকালে ৫ রোগীর আগুনে পোড়ার বিষয়টি এখনো সুরাহা হয়নি। আয়ানের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত জরুরি বলে মনে করি। আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের গাফিলতির অভিযোগ তদন্তে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আমরা চাই, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। ভুল চিকিৎসা বা চিকিৎসায় অবহেলার শিকার ব্যক্তির স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) কাছে অভিযোগ জানানোর সুযোগ রয়েছে। তবে এ বিষয়টি জানা নেই অনেকের, নেই সচেতনতা। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো- যারা অভিযোগ করেন, বিচারের আশায় তাদের কেটে যায় দীর্ঘ সময়। বিএমডিসিতে এ বিষয়ে অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ হলেও নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দেখা যায় ধীর গতি। বিএমডিসি সূত্রে জানা যায়, গত ৫ বছরে ১২৭টি অভিযোগ জমা পড়লেও নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ৩১টির। এর মধ্যে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে ৭টির। এক্ষেত্রে শাস্তি হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদে চিকিৎসকের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে। মাঝপথে টাকার বিনিময়ে সমঝোতা হয়েছে ১৪টির। চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগেও সর্বোচ্চ শাস্তির নজির নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক রোগ নির্ণয় ও দক্ষতার অভাবেই সাধারণত ভুল চিকিৎসা হয়ে থাকে। কখনো কখনো ভুল ওষুধ সেবন, ক্ষতিকর ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার, নি¤œমানের ওষুধ, ভুল অস্ত্রোপচার এবং প্রতারকের খপ্পরে পড়ার ঘটনাও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে আসছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সরকার ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন, ২০২২’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে খসড়াটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। জনস্বার্থে এই আইনের প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি মনে করি। এ বিষয়ে অবিলম্বে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা রোধ করতে ঊর্ধ্বতন মহলের নজরদারি দরকার। স্বাস্থ্য খাতের রূপরেখা নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। অবহেলা বা ভুল চিকিৎসায় কোনো মৃত্যু দেখতে চাই না।