আগুনে আক্রান্ত সুন্দরবন : পদক্ষেপ জরুরী

0
15

বারবার আগুনে আক্রান্ত হয় বাংলাদেশের ফুসফুসখ্যাত সুন্দরবন। দাউ দাউ করে আগুনে পুড়ে মানুষের অক্সিজেনের ভাণ্ডার। গত ৫৪ বছরে আগুন লেগেছে ৪০ বার। সর্বশেষ গত শনিবার আগুন লাগে পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির কাছের গভীর বনে। ফায়ার সার্ভিস আগুন লাগার একদিন পর রবিবার ভোর ৬টার দিকে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে এবং গতকাল সোমবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস ছাড়াও নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, ভলান্টিয়ার ও স্থানীয় লোকজন কাজ করেছে। সুন্দরবন বনবিভাগের তথ্য মতে, ১৯৭০ সালে চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকায় আগুন লেগেছিল। এরপর থেকে দু-এক বছরের ব্যবধানে এই রেঞ্জ এলাকার কোনো না কোনো স্থানে আগুন লাগে। ১৯৯৬ সালের এপ্রিল মাসে এই রেঞ্জ এলাকার বৈদ্যমারিতে বেশ বড় আগুন লাগে। ১৯৭০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ছোট-বড় কমপক্ষে ১৫টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। আর ২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে ২৫ বার। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মৌয়ালদের মশালের কারণে সুন্দরবনে আগুন লেগে থাকতে পারে। অথবা কারো বিড়ি-সিগারেটের আগুন ফেলে রাখা থেকে আগুন ধরতে পারে। তুলনামূলক বনের যেসব এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, সেসব এলাকা অনেক উঁচু। গ্রীষ্ম মৌসুম চলায় অনেক দিন বৃষ্টি না হওয়া ও শুকনো পাতা জমে যাওয়ার কারণে আগুন অনেকক্ষণ ধরে জ্বলতে থাকে। বনবিভাগের আগুন লাগলে তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়ার মতো যন্ত্রপাতি ও জনবল নেই। ফলে স্থানীয় ফায়ার স্টেশন ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পৌঁছতে আগুন বহুদূর ছড়িয়ে যায়। এতে বনে ক্ষতি হয় বেশি। সুন্দরবনের নদী-খালে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে না আনলে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড থেকে সুন্দরবনকে রক্ষা করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে বনের মধ্যে চোরা শিকারিসহ মানুষের অবাধ যাতায়াত বন্ধের দাবি আবারো তুলেছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনের আয়তন কমতে কমতে এখন ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারে এসে ঠেকেছে। ২০২০ সালে বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে বলেছে, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে গত ১০০ বছরে সুন্দরবনের আয়তন ৪৫৩ বর্গকিলোমিটার কমেছে। সুন্দরবন আমাদের দেশের জন্য রক্ষাকবচ। বিভিন্ন সময়ে ঝড়-জলোচ্ছ¡াস কিংবা সিডরের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ই সুন্দরবনের গুরুত্ব অনুধাবন করা গেছে। সুন্দরবন না থাকলে আমাদের জন্য কী ধরনের বিপর্যয় অপেক্ষা করছে, তা নিয়ে কিছুটা হলেও ভাবতে হবে। সুন্দরবনের প্রাণী-প্রকৃতিকে বাঁচাতে হবে। সুন্দরবনে আগুন লাগার বিষয়টিতে হালকাভাবে নেয়া ঠিক হবে না। সুন্দরবন বিগত ২২ বছরে অন্তত ২৫ বার আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়েছে। এটা অস্বাভাবিক। প্রতিবারই হয়তো তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটির সুপারিশের বাস্তবায়ন করা হলে এতবার আগুন লাগত না। সুপারিশ যদি বাস্তবায়নই করা না হয়, তাহলে কমিটি করে কী লাভ? দুঃখজনক বিষয়, বারবার আগুনে সুন্দরবন পোড়ার পরও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। পানির প্রবাহ না থাকায় ভবিষ্যৎ অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনায় বনকে রক্ষা করা কঠিন হবে বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তাই সুন্দরবন অগ্নিকাণ্ডে বনের মধ্যে পানির প্রবাহ না থাকা এখন বড় একটা ইস্যু হয়ে গেছে। এ জন্য বড় ধরনের একটা প্রকল্প দরকার। এছাড়া আগের সব অভিজ্ঞতা ও তদন্ত মাথায় রেখে করণীয় পদক্ষেপ ঠিক করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।