মেট্রোরেলের সুবিধায় জমবে বইমেলা, স্বপ্ন বুনছেন প্রকাশকরা

0
17

প্রতিদিনের ডেস্ক
রাজনৈতিক অস্থিরতা কেটে গেছে। রাজপথে নেই ভয়-আতঙ্ক ছড়ানোর মতো কর্মসূচিও। যানজটে ভোগান্তিও অনেকটা কমেছে মেট্রোরেল সুবিধায়। উত্তরা-মিরপুর থেকে কম সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা শাহবাগ স্টেশনে পৌঁছানো এখন বাস্তব সত্য। স্বস্তির এমন খবরে পাঠক-দর্শনার্থীদের যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে বইমেলা। আর জমজমাট মেলায় ভালো বিক্রির আশায় স্বপ্ন বুনছেন লেখক-প্রকাশকরা।
১ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে বইমেলা। শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সবাই। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলছে বইমেলার স্টল তৈরির কর্মযজ্ঞ। নানা সাজে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে স্টলগুলো। কাজ দ্রুত শেষ করতে শ্রমিকদের তাগাদা দিয়ে সময় পার করছেন প্রকাশনা সংস্থার মালিক-কর্মকর্তারা। তাদেরই একজন উৎস প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী মুস্তফা সেলিম। নিজে উপস্থিত থেকে কাজের তদারকি করছেন।বইমেলা নিয়ে কী ভাবছেন, জমবে কেমন— এমন প্রশ্নে বেশ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে মুস্তফা সেলিমের চোখমুখ। স্বস্তির হাসি দিয়ে তিনি বলেন, ‘কেন জানি মন বলছে, এবার বিগত কয়েক বছরের মধ্যে আমরা সবচেয়ে ভালো মেলাটি উপভোগ করতে যাচ্ছি।’
কেন এমন স্বপ্নে বিভোর, তার কারণও জানালেন তিনি। মুস্তফা সেলিম বলেন, ‘আমরা কয়েক বছর করোনা মহামারির দুর্যোগের মধ্যে ছিলাম। মাঝে মেলা হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা-সংকট ছিল প্রকট। মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা ছিল। আস্থার সংকটও ছিল। সবকিছুর বাইরে এসে ২০২৪ সালের এ বইমেলা অত্যন্ত চমৎকার একটি পরিবেশে হচ্ছে। যদিও মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক হতাশা এখনো রয়েছে। সেটি ভিন্ন বিষয়। বইমেলাকে ডিস্টার্ব (নেতিবাচক প্রভাব ফেলে) করে এমন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি তো এখন আর নেই। এটাই স্বস্তির।’
কিছুটা দম নিয়েই আরও স্বস্তির খবর জানাতে শুরু করেন উৎস প্রকাশনের এ স্বত্বাধিকারী। এবার মেট্রোরেলের সুবিধা নিয়ে দূরের পাঠকরা মেলায় আসবে—এমন আশার কথা শোনালেন তিনি। বললেন, ‘এবার বইমেলা জমে ওঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রাখবে মেট্রোরেল। বইমেলা সংলগ্ন এলাকায়ই তো মেট্রোরেলের একটি স্টেশন রয়েছে। কাছাকাছি আরও দু-একটা, শাহবাগ-সচিবালয়। ব্যাপারটা ভাবতেই বেশ ভালো লাগছে।’
মুস্তফা সেলিম বলেন, ‘মিরপুর, উত্তরাসহ ঢাকার বর্ধিত অংশে যারা বসবাস করেন, তাদের মধ্যে বইমেলায় প্রতিদিন আসাটা যানজটের শহরে সহজ ছিল না। সপ্তাহের ছুটির দিনে আসারও কষ্টের ছিল। মেট্রোরেল চালু হওয়ায় তাদের মেলায় সহজে আসার সুযোগ অবারিত হয়েছে। ফলে আশা করাই যায়, এবার অসংখ্য মানুষ কম সময়ে দূর-দূরান্ত থেকেও সহজে মেট্রোরেলে চড়ে মেলায় চলে আসবে। আবার মেলার গেটের খুব কাছ থেকে মেট্রোরেলে চড়ে সহজ ও নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারবেন।’
মেট্রোরেল সুবিধার কথা শুধু মুস্তফা সেলিম নয়, অন্য প্রকাশনার মালিক-কর্মকর্তাদেরও মুখে মুখে। প্রিয়মুখ প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মোজাম্মেল হোসেন শুভ বলেন, ‘মেট্রোরেল তো এখন পুরোদমে চালু হয়েছে। উত্তরা ও মিরপুরের লোকজন ব্যাপকভাবে এবার মেলায় আসবে বলে আশা করছি।’
মেলায় মানুষের সমাগম হলেও বিক্রি নিয়ে সংশয়ে প্রিয়মুখের এ ব্যবস্থাপক। তার ভাষ্য, ‘মেলা জমবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। কিন্তু বিক্রি কেমন হবে, তা নিয়ে আমরা সংশয়ে আছি। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ওতটা ভালো না। দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ায় সংসার চালাতে সবারই দেখা যাচ্ছে পকেট খালি। আবার বই ছাপার খরচ, কাগজের দামও বেশি। এতে বইয়ের দামও বাড়াতে বাধ্য হয়েছি। সেক্ষেত্রে মানুষ কতটা বই কিনে প্রকাশনা সংস্থাগুলো সাপোর্ট দেবে, তা নিয়ে দ্বিধায় আছি। তবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল, সবকিছু শান্ত আছে এখন। আশা করছি মেলা এবার জমবে, বিক্রিও জমবে। বাকিটা সময় বলে দেবে।’
সত্যয়ন প্রকাশনীর সেলস এক্সিকিউটিভ আতিকুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবারই পাঠকদের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা থাকে। তারা আসবেন, বইগুলো দেখবেন, ভালো লাগবে কিনবেন। যত দিন যায়, আমাদের প্রত্যাশাটাও তত বাড়ে। এবার আমাদের প্রত্যাশা, গত বছরের চেয়েও বেশি। আশা করছি—এবার জমজমাট হবে বইমেলা।’
খুশরুজ কিতাব মহলের কর্মী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘মেট্রোরেলে সহজে যাতায়াতের সুযোগটা তৈরি হওয়ায় বইপ্রেমী মানুষ; যারা কি না যানজটসহ নানা কারণে ইচ্ছা থাকলেও কম আসতেন, তারা এবার সপ্তাহে একাধিক দিন আসবেন, ঘুরবেন, বই কিনবেন, পরামর্শ দেবেন। প্রকাশকরা আমরা খুবই আশ্বস্ত হয়েই আছি যে, এবার বইমেলাটি অন্য যে কোনো বারের চেয়ে বেশি জমজমাট হবে।’
পার্ল প্রকাশনীর জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভয়-আতঙ্ক এবং দেশে যে একটা সমস্যা বিদ্যমান ছিল, তা তো এখন কেটে গেছে। আশা করছি মেলাটা এবার ভালোই হবে। মেট্রোরেল চালু হয়েছে। দূর থেকেও মানুষ সহজে আসতে পারবে। এজন্য জমজমাট বইমেলার প্রত্যাশা করছি।’
এদিকে, মেলার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন না হলেও অনেক দর্শনার্থী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্টল তৈরির কর্মযজ্ঞ দেখতে আসছেন। রোববার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে তেজগাঁও মহিলা কলেজের কয়েকজন ছাত্রী মেলার প্রস্তুতি দেখতে এসেছিলেন। তারা জানান, বইমেলার একমাস প্রায় প্রতিদিনই তারা বেড়াতে আসেন। মেলার সাজ-সজ্জা কেমন চলছে, সেটা দেখতে এসেছেন তারা। এর আগেও বন্ধুরা মিলে দুদিন মেলার স্টল তৈরি দেখতে এসেছিলেন।
ছাত্রীদের মধ্যে একজন আনজুম আরা সাথী। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ঘুরতে যাওয়ার তেমন জায়গা নেই। ক্লাস শেষে কলেজ থেকে বেরিয়ে হঠাৎ বইমেলার কাজ কেমন চলছে, কীভাবে স্টল বানানো হচ্ছে, সেগুলো দেখতে চলে এসেছি। এগুলো দেখেও বেশ ভালো লাগছে। মেলা শুরু হলে নিয়মিত আসা হবে।’
প্রতি বছরের মতো এবারও ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে মাসব্যাপী ঐতিহাসিক ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪’ শুরু হবে। এদিন বিকেল ৩টায় মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা কমিটির সদস্যসচিব ড. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জানান, এবার মেলায় ৫৭৩ প্রতিষ্ঠানকে ৮৯৫টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৭৮৬টি সাধারণ স্টল এবং ১০৯টি স্টল লিটল ম্যাগাজিন চত্বরকে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া এ বছর মোট ৩৭টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ করা হয়েছে। গত বছর অর্থাৎ, ২০২৩ সালে ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সেই হিসেবে এবার ছয়টি স্টল কমছে।
অন্যদিকে মেলা ঘিরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মাসব্যাপী সেমিনারের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্য ছবি আঁকা, সংগীত ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা থাকবে। শিশুপ্রহরে থাকবে আকর্ষণীয় সিসিমপুরের প্রদর্শনী।