জাকাতের শাড়ি-লুঙ্গির কদর কমেছে, টাকা দিয়ে দেন ধনীরা

0
10

প্রতিদিনের ডেস্ক
ইসলাম ধর্মে সামর্থ্যবানদের সম্পদের একটি ক্ষুদ্র অংশ প্রতি বছর জাকাত হিসেবে গরিব মানুষের মধ্যে বিতরণ করতে হয়। অনেক বিত্তবান শাড়ি বা লুঙ্গি দিয়ে সেই জাকাত দেন। প্রচলিত আছে, নিম্নমানের ও কম দামি শাড়ি-লুঙ্গি দিয়ে যেন-তেনভাবে জাকাত দেওয়ার কাজটিও সারতে চান অনেকে। যদিও এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, জাকাতের কাপড়ের পরিবর্তে এখন নিম্নবিত্তদের নগদ টাকা দিয়ে দেন বিত্তবানরা। আর এ কারণে জাকাতে শাড়ি, লুঙ্গির কদর কমেছে বিপণিবিতানগুলোতে।
রোববার (২৪ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বরের মোহাম্মাদীয়া মার্কেটের শাড়ির দোকানে সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদ উপলক্ষে দোকানে নতুন শাড়ির পসরা সাজানো হয়েছে। জামদানি, পার্টি শাড়ি, কাতানসহ বাহারি নামে শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে।তবে চাকচিক্যের মাঝেও চোখে পড়ে কিছু পাতলা, নিম্নমানের প্রিন্টের শাড়ি। আলাদা করে কোনো নাম না থাকলেও ফিনফিনে এই নিম্নমানের শাড়িগুলোই জাকাতের শাড়ি নামে পরিচিত।
মার্কেটিতে সব বয়সীদের জামাকাপড় খুচরা বিক্রি হয়। দুই/একটি দোকানে পাইকারি পোশাক বিক্রি হয়। কয়েকটি দোকানে পাওয়া যায় জাকাতের শাড়ি। তেমনই একটা দোকান মতলব শাড়ি বিতান। যেখানে জামদানি, কাতান, টাঙ্গাইল, পার্টি শাড়িরই সমারোহ।
দোকানটির স্বত্বাধিকারী শাওন ইসলাম বলেন, ‘জাকাতের শাড়ি, লুঙ্গি বলতে কিছু নেই। নিম্নমানের ও কম দামের শাড়ি-লুঙ্গি আসলে জাকাতের কাপড়। তবে সেই দিন আর নেই। আগে মানুষ বস্তা ভরে জাকাতের কাপড় নিয়ে যেতো। হুড়োহুড়ি লাগতো জাকাতের কাপড় নেওয়ার জন্য। এখন বিত্তবানরা টাকা দিয়ে দেন। সবার জন্যই সুবিধা।’
তিনি বলেন, ‘৩৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দামের শাড়ি আছে। এগুলো নিম্ন-আয়ের লোকেরাও কেনেন, আবার অনেকে জাকাত দেওয়ার জন্যও কেনে। তবে এবছর এখনো জাকাতের শাড়ি বিক্রি শুরু হয়নি।’
মতলব শাড়ি বিতানের কয়েকটি দোকান পরেই মীম শাড়ি হাউজ। সেখানেও জাকাতের শাড়ি বিক্রি শুরু হয়নি বলে জানানো হয়।একই মার্কেটের বিসমিল্লাহ শাড়ির স্বত্বাধিকারী মুসা আহমেদ বলেন, ‘জাকাতের শাড়ি বিক্রি হয় কম, সেটা ২০ রোজার পরে হয়তো শুরু হবে। তবে পুরো মার্কেটেই বেচাকেনা কম।’
মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, শাড়ির মতই নিম্নমানের লুঙ্গি, পাঞ্জাবি বিক্রি শুরু হয়নি এখনো। মার্কেটির বাইরের ফুটপাতের ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘জাকাতের লুঙ্গি ২০০-৪০০ টাকা, আর পাঞ্জাবি ৩০০-৭০০ টাকায় পাওয়া যায়।’
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শবে বরাতের পর দুই/একদিন ব্যবসা ভালো হলেও এরপর শুক্রবার ব্যতীত মার্কেট জমেনি। এপ্রিল মাসের শুরুতে বেচাকেনা বাড়তে পারে। দাম বাড়ার বিষয়ে বিক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার কিছু কিছু পোশাকের দাম বেড়েছে।
শাড়ির দোকানদার মুসা আহমেদ বলেন, ‘১২-১৩ রোজা পার হয়ে গেলো অথচ ১৪-১৫ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারি না। সকাল-দুপুর অলস সময় কাটে, সন্ধ্যার পর একটু বেচাকেনা হয়।’আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘সাধারণত ১০ রোজার পর ঈদের বাজার জমতে শুরু করে। এবার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যেহেতু অনেক বেশি, মানুষ দেরি করে মার্কেটে আসবে।’
ব্যবসায়ী শাওন ইসলাম বলেন, ‘এবার রমজান শুরু হয়েছে একটু ব্যাকওয়ার্ড সময়ে। মাসের মাঝামাঝি। ঈদও হবে আগামী মাসের ১০-১১ তারিখে (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে)। দেখা যাবে মানুষের বেতন ঢুকবে ৪-৫ তারিখে, আর বেচাকেনা করে মানুষ বাড়ি যাবে ৯-১০ তারিখ। অর্থাৎ বেচাবিক্রির জন্য মাত্র ২-৩ দিন থাকবে। কোটি টাকা লগ্নি করে মাত্র ২-৩ দিন ব্যবসা করে লাভ বের করা কঠিন।’
বিক্রেতারা বলছেন, এক হাজার ২০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকার সুতি শাড়ি বিক্রি হচ্ছে বেশি। চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার জামদানি, পার্টি শাড়ি বিক্রি নেই বললেই চলে। একই অবস্থা পাঞ্জাবির ক্ষেত্রেও। ৮০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকার পাঞ্জাবি বেশ চলছে। এছাড়া সিল্ক ও সুতি শাড়ি এক হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা, পার্টি শাড়ি সাড়ে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এছাড়া বাচ্চাদের হাফ শার্ট ও প্যান্ট ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। জিন্স প্যান্ট ৩০০ টাকা, ফ্রক ১৫০ টাকা, বাচ্চাদের পাঞ্জাবি ও গেঞ্জি ১৫০-৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
মার্কেটির কয়েকটি দোকানে কিছু ক্রেতা দেখা গেছে। বেশিরভাগ দোকানেই বিক্রেতাদের পণ্য গোছাতে ও অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতারা পণ্য দেখায় ব্যস্ত বেশি, এখনো সেভাবে কিনছেন না।
কালশী থেকে পাঁচ বছরের ছোট মেয়েকে নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা জাহানারা আক্তার বলেন, ‘বাচ্চার কেনাকাটা শুরু করতে পারিনি। নিজের জন্য কয়েকটি শাড়ি ও থ্রি-পিস দেখেছি। দোকানিরা সব জিনিসের দাম ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা বেশি বলছেন। কয়েকটি দোকান ঘুরেছি। কিছু কেনাকাটাও করেছি।’
এই মার্কেটের সামনে পল্লবী থেকে আসা হাসিন আহম্মেদ নামের একজন মধ্যবয়সী ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘এবার পোশাকের দাম বেশি চাচ্ছেন বিক্রেতারা। বিশেষ করে মেয়েদের পোশাক ও কসমেটিকসের দাম অনেক বেশি। মেয়ের জন্য কিছু কসমেটিক সামগ্রী কেনার ইচ্ছা আছে। কয়েকটি দোকান দেখেছি। আরও কিছু দোকান দেখে কিনবো।’