মা হতে না দেয়ায় সতীন কন্যা জোনাকি খুন

0
30

নিজস্ব প্রতিবেদক
বাবা-মায়ের বৈবাহিক বিচ্ছেদ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেয় সন্ত্রানদের। সামাজিকভাবে মাথা উচু করে দাঁড়ানোর পথ যেমন রুদ্ধ হয়, তেমনি প্রতিহিংসার বলি হতে হয় অনেকের। তার আরও একটি বড় উধাহরণ ৯ বছরের ফুটফুটে শিশু সন্তান জোনাকি। সৎ মা শিশুটিকে হত্যায় দায় স্বীকার করে পুলিশকে বলেছেন-আমার গর্ভের সন্তান বারবার নষ্ট করে দেয় স্বামী শাহীন তরফদার। মা হতে না পেরে আমি সতীনের মেয়ে জোনাকিকে গলাটিপে হত্যা করেছি। বছর ৫ আগে জোনাকির মা কোহিনুরকে সংসারে রেখে যশোর রেলগেটে নার্গিস বেগম নামে এক নারীকে বিয়ে করেন শাহীন তরফদার। বিষয়টি মানতে না পেরে এক পুত্রসহ ৪ সন্তানকে রেখে কোহিনুর শাহীন তরফদারকে তালাক দিয়ে পাড়ি দেন তুরস্কে। এদিকে শাহীন তরফদার বেনাপোল ছেড়ে যশোর রেলগেটে নার্গিস বেগমের সাথে শুরু করেন সংসার। প্রথমপক্ষের সন্তানরা নানা সুরুজ মিয়ার কাছে থেকে বড় হচ্ছিলো। এরমধ্যে দুই মেয়ের বিয়েও হয়েছে। সবার ছোট ছিলো মর্জিনা আক্তার জোনাকি। গত কয়েকদিন আগে ঈদের নতুন জামা আর কসমেটিকস কিনে দেয়ার কথা বলে রেলগেটের ভাড়া বাড়িতে ডেকে আনা হয় শিশুকন্যা জোনাকিকে। কিন্তু ফুটফুটে জোনাকির কপালে জুটলো না ঈদের আনন্দ। সৎ মা তাকে পাঠিয়ে দিলো না ফেরার দেশে। যার দায় স্বীকার করার পর পুলিশ হত্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। নিহত শিশু জোনাকির নানা সুরুজ মিয়া আহাজারি করতে করতে বলছিলেন ‘চাঁদের মতো ফুটফুটে একটা শিশু ছিলো আমার জোনাকি। তার কোনো শত্রু ছিলো না। ঈদের জামা কাপড় কিনে দিয়েছি। তার পরে আমার নাতনিডারে কসমেটিকস কিনে দেয়ার কথা বলে বেনাপোল থেকে নিয়ে আসে যশোরে। ওই খুনির সঙ্গে দেখা হলে তাকে জিজ্ঞাসা করব, আমার নিষ্পাপ নাতনিডারে কেন এভাবে মারলি। তার তো কোনো দোষ ছিলো না। নিহতের বড় ভাই তাওহিদ হোসেন চয়ন বলেন, কয়েকদিন আগে জোনাকি বেনাপোল পোড়াবাড়ি থেকে বাবার রেলগেটের বাসায় বেড়াতে আসে। সোমবার সকাল ১০টা থেকে জোনাকিকে পাওয়া যাচ্ছিল না। সৎ মা আমাদের জানিয়েছিল পাশেই স্টেশন, সেই স্টেশনে খুলনার ট্রেনে উঠে যেতে পারে। আমরা খুলনাতেও খুঁজেছি। যশোরে থানাতে জিডি করেছি। এমনকি শহরে মাইকিং করে আমার বোনকে খুঁজেছি। এরপর মঙ্গলবার দুপুরে বাবার বাসার পাশে পুকুর থেকে বোনের মরদেহ উদ্ধার হয়। এই মৃত্যু আমি মানতে পারছি না। সৎ মায়ের প্রতিহিংসার বলি হতে হলো ৯ বছরের জোনাকিকে। উল্লেখ্য, ২ এপ্রিল দুপুরে যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিমপাড়া মডেল মসজিদের পাশে একটি পুকুর থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। যশোর ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পর তার সৎ মা ও বাবাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি। একপর্যায়ে সৎ মা নার্গিস বেগম জানান তিনি মা হতে চান কিন্তু স্বামী শাহিন তরফদার প্রত্যেকবার গর্ভের সন্তান নষ্ট করে দেয়। এতে আমি খুশি ছিলাম না। সতিন কন্যা জোনাকিকে দেখলে আমার মনে হতো আমিও হতে পারতাম এরকম সন্তানের মা। ক্ষোভে দুঃখে ও প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে জোনাকিকে হত্যা করে ফেলেছি।