অটিজমদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করার দাবি

0
17

একটি শিশু মাতৃগর্ভ থেকে যেসব সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অটিজম। মূলত অটিজমে আক্রান্ত শিশু বা ব্যক্তি মাতৃগর্ভ থেকে মস্তিষ্কের বিকাশগত অসম্পূর্ণতাজনিত ত্রæটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। যার ফলে তাকে দৈনন্দিন জীবনপ্রবাহ ও আচার-আচরণ, গ্রহণমূলক ও প্রকাশমূলক ভাষা ব্যবহার, সংজ্ঞাপন ও সামাজিকতার ক্ষেত্রে নানা মাত্রার প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়, যা জীবনব্যাপী চলতে থাকে। ২ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়েছে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। একসময় অটিজম ছিল একটি অবহেলিত জনস্বাস্থ্য ইস্যু। এ সম্পর্কে সমাজে নেতিবাচক ধারণা ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা ও স্কুল সাইকোলজিস্ট সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নিরলস প্রচেষ্টায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অটিজম বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ২০০৭ সালে এ বিষয়ে দেশে কাজ শুরু করেন। এ অবহেলিত জনস্বাস্থ্য ইস্যুতে তার বিরাট অবদানের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃতি পেয়েছেন। বর্তমানে সায়মা ওয়াজেদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তথ্য অনুযায়ী, ‘সচেতনতা-স্বীকৃতি-মূল্যায়ন : শুধু বেঁচে থাকা থেকে সমৃদ্ধির পথে যাত্রা’ প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালন করা হয়। প্রতিপাদ্যটিকে অত্যন্ত সময়োপযোগী মনে করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে সবার সঙ্গে অটিজম ও প্রতিবন্ধিতার শিকার ব্যক্তিদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে। এ লক্ষ্যে আরো বেশি প্রযুক্তিবান্ধব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে তিনি নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) সুরক্ষা ট্রাস্টকে আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার অটিজম ও প্রতিবন্ধীবান্ধব সরকার। বিগত ১৫ বছরে আমরা অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিসহ সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কল্যাণে ব্যাপক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছি। এর মধ্যে রয়েছে নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন-২০১৩, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) সুরক্ষা ট্রাস্ট বিধিমালা-২০১৫, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা বিধিমালা-২০১৫, বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন-২০১৮ এবং প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা-২০১৯। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন- আমার বিশ্বাস, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু-কিশোরদের সম্ভাবনাগুলোকে চিহ্নিত করে সঠিক পরিচর্যা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে মানবিক পরিবেশে গড়ে তোলা হলে তারাও পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠবে। সুস্থ ও স্বাভাবিক প্রত্যেক মানুষ যেমন একজন থেকে অন্যজন ভিন্ন, তেমনটি প্রত্যেক অটিস্টিক শিশু বা ব্যক্তিও স্বতন্ত্র। তাই প্রত্যেক অটিস্টিক শিশুর ধরন অনুযায়ী বয়সের ভিত্তিতে দৈনন্দিন জীবন ধারণ কার্যাবলি, আচার-আচরণ, ভাষার ব্যবহার শেখানো এবং শিক্ষা, চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় থেরাপি সেবা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান করার মাধ্যমে অটিস্টিক শিশু বা ব্যক্তিকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে। বিশেষ শিশুর মা-বাবা এবং পরিচর্যাকারীর মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোবল বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক কাউন্সেলিং সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। পরিশেষে বলতে চাই, বিশেষ শিশু বা ব্যক্তি সমাজের বোঝা না হয়ে সমবয়সি স্বাভাবিক বিকশিত মানুষের মতো যেন খেলাধুলা ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারে, হাসতে পারে, বাঁচার মতো বাঁচতে পারে এবং সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারে, সেজন্য অটিজমদের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।