তীব্র তাপদাহে পুড়ছে যশোর-চুয়াডাঙ্গাসহ দক্ষিণাঞ্চল বাড়ছে ডায়রিয়া জ্বর কাঁশি নিউমোনিয়ায় রোগী

0
14

বিশেষ প্রতিবেদক
তীব্র তাপদাহে পুড়ছে যশোর-চুয়াডাঙ্গাসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চল। সকালে যেমন-তেমন, দুপুর ১২টার পর ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। দুপুরে তাপমাত্রার পারদ উঠতে থাকে, যা অনুভুত হচ্ছে গভীর রাত পর্যন্ত। ফ্যানের বাতাসেও স্বস্তি নেই। বেশি বিপত্তিরমুখে পড়েছেন সীমিত আয়ের মানুষ। শ্রমজীবী-খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রার পারদ ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। এরফলে জ্বর-সর্দি, কাঁশি ও নিউমোনিয়াসহ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মানুষ হাসপাতালে আসছেন। বাড়ছে ভর্তি রোগীর সংখ্যা। শিশুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) যশোরে তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ঠেকেছে। চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা উঠেছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। জেলা দুটি যেন একে অপরের পেছন পেছন হাঁটছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে নানা রোগ-বালাইও দেখা দিয়েছে। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু। ডায়রিয়া, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৬ জন শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। ২০ বেডের শিশু ওয়ার্ডের মেঝেতে রোগী রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের অবস্থা আরও করুণ। মেঝেতে রোগী রেখে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্বজনরা। শিশু চিকিৎসক আব্দুস সামাদ তীব্র তাপদাহের মধ্যে বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গোলাম মোর্তুজার পরামর্শ জরুরী কাজ ছাড়া বাইরে বের হওয়া উচিত হবে না। বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। যশোর বিমান বাহিনী নিয়ন্ত্রণাধীন আবহাওয়া অফিস বলছে-বুধবার বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল। রাত সোয়া ৯টার দিকে দু’এক ফোট বৃষ্টি হওয়ার খবর শোনা গেছে লোকমুখে। আপাতত বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই। যেকারণে আগামী দুই-তিন তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকা আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, যশোরে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। বৃহস্পতিবার যশোরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে চড়েছে। বুধবার একই মাত্রা ছিল। তবে বাতাস যেন আগুনের হল্কা ছড়াচ্ছে। বেলা ১১টার পর মানুষ ঘরের বাইরে বের হতে পারছেন না। জরুরী কাজ সারতে কিছু মানুষ বের হচ্ছেন। শহরে লোকসমাগম একেবারেই কম দেখা যাচ্ছে। ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান মালিকরা বলছেন-বেচাকেনা নেই বললেই চলে। অলস সময় পার করতে হচ্ছে। তবে সন্ধ্যার কিছু বেচাবিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুদি দোকানী তম্ময় সরকার, আব্দুল গফুর ও হৃদয়সহ বেশ কয়েকজন। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে-থার্মোমিটারের পারদ ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। উষ্ণতা বেড়ে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। তারমানে যশোর তীব্র তাপদাহের ভেতরে পড়েছে। যশোর জেনারেল হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক আব্দুস সামাদ বলেন, গরমের কারণে হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ছিল ২৬। এই ওয়ার্ডের বেড সংখ্যা মাত্র ২০। যেকারণে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গরমে শিশুরা বেশি বেশি অসুস্থ হচ্ছে। পানি শূন্যতার কারণে জ্বর-সর্দি-কাঁশি ও নিউমোনিয়া দেখা দিয়েছে। এশিশুদের নিয়ে বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে এই চিকিৎসক বলেন-ডায়রিয়া, জ্বর ও শ্বাসকষ্টের রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছে। তবে চিকিৎসা সামগ্রীর কোনো সংকট নেই বলেও জানান তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়-ডায়রিয়া ওয়ার্ডে পাঁচ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি রয়েছে ২৮ জন। হাসপাতালের ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা নিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। যশোর বেজপাড়ার মেহজাবিন রেহেনুমা জানান, তার ভাইয়ের ১১ মাসের ছেলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। যেকারণে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেয়া হচ্ছে। যশোর সদরের ফতেপুরের ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘এক বছর বয়সি ছেলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। তাকে নিয়ে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের মেঝেতে ভর্তি আছি। ছেলে এখানে থাকতে চাইছে না। মানুষের হাঁটাচলা ও ভিড়ে অতিষ্ঠ হয়ে আছি।’ চিকিৎসকরা বলছেন, তাপপ্রবাহ থেকে সুস্থ থাকতে নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা। জেনারেল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গোলাম মোর্তুজা বলেন, এই তীব্র গরমে জরুরী কাজ ছাড়া বাইরে বের না হওয়া ভাল। পর্যাপ্ত পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসক। এছাড়া গরমে চর্ম রোগের আধিক্য দেখা দেয়। এর থেকে রক্ষা পেতে ছাতা, হেড ক্যাপ এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে বলেও জানান তিনি। এদিকে, গত কয়েকদিন ধরেই শহরে লোক সমাগম কম দেখা যাচ্ছে। ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে যেন মাছি পড়ছে। অনেকে দোকান খোলা রেখে নিদ্রায় মগ্ন হচ্ছেন। এ ব্যাপারে পুলিশ বলছে-চুরির ঝুঁকি বাড়ছে। দোকান খুলে রেখে ঘুমানো উচিত হবে না। প্রয়োজনে কিছু সময় দোকান-পাট বন্ধ রাখা উচিত হবে।