চিকিৎসায় গুরুত্ব দিতে হবে

0
11

টানা তাপপ্রবাহে পানিবাহিত রোগে প্রতিদিনই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু এবং বেশির ভাগ সময় ঘরের বাইরে থাকা মানুষ এ রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ। যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের অধিকাংশই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। এছাড়া জ¦র ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীও রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। সামনে গরম আরো বাড়বে। সচেতন না হলে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হতে পারে বলে মনে করেন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেলেই ডায়রিয়ার জন্য দায়ী জীবাণুগুলো শক্তিশালী হয়ে থাকে। তাপমাত্রা ইতোমধ্যে যশোরে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছির খবর আসছে। পানি ও ঠাণ্ডা-বাসি খাবারে জন্ম নেয়া এ জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। তখনই ডায়রিয়া হয়। এছাড়া ঋতু পরিবর্তন ও বায়ুদূষণজনিত কারণে শিশুদের সর্দি, নাক বন্ধ হওয়া ও হাঁচি-কাশি, তীব্র জ¦র ও গলাব্যথার মতো রোগ হচ্ছে। আইসিডিডিআরবির জরুরি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে হাসপাতালটিতে দৈনিক গড়ে সাড়ে ৫০০-৬০০ রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ বৃদ্ধ। আর ৪০ শতাংশ শিশু। এদিকে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটেও বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। দৈনিক গড়ে দেড়শ রোগী ভর্তি হচ্ছেন এই হাসপাতালে। দিন দিন বাড়ছে রোগীর চাপ। এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে মহামারির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। বছরে দুবার ডায়রিয়া মৌসুম আসে। একবার মার্চ-এপ্রিল। এ সময়কে ডায়রিয়ার প্রি-মৌসুম বলা হয়। দ্বিতীয়বার আগস্ট-অক্টোবর মাস। এই সময়কে পোস্ট মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এ সময় রোগীর চাপ বেশি থাকে। আর গরমের সময়ে ডায়রিয়ায় শিশুদের সংখ্যা থাকে কম, বড়রা বেশি আক্রান্ত হন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়ার প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিক কারণেই বেশকিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা প্রহণের প্রয়োজন পড়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মানুষের করণীয় কিছু নেই, তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ডায়রিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এসব সতর্কতামূলক ব্যবস্থার মধ্যে পানি ফুটিয়ে পান করা অন্যতম। এছাড়া ডায়রিয়া হলে স্যালাইন ও অন্যান্য তরল খাবার, যেমন- ডাবের পানি, চিড়া ভিজিয়ে তার পানি, ডালের পানি, ভাতের মাড়, চালের গুঁড়ার জাউ ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। রাস্তার পাশের খোলা খাবার বা শরবতজাতীয় পানীয় পরিহার করতে হবে। যে কোনো খাবার গ্রহণের আগে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করাও ডায়রিয়া প্রতিরোধের অন্যতম উপায়। ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে বৃদ্ধ ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। শিশুদের ক্ষেত্রে মায়ের দুধসহ অন্যান্য খাবার তাদের যথেষ্ট পরিমাণে খাওয়ানোই সমীচীন। পাশাপাশি কলা, চিড়া ও ডাবের পানি খাওয়াতে হবে। আর পানিশূন্যতা দেখা দিলে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। তবে কোনোভাবেই বাসি খাবার দেয়া যাবে না। সাধারণ ডায়রিয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক না দেয়ারও পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক। সর্বোপরি জনসাধারণকে ডায়রিয়া রোগ সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। হাসপাতালে যেসব বৃদ্ধ ও শিশু ভর্তি হচ্ছে তারা বেশির ভাগই দরিদ্র। তাদের বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ ও সময়মতো চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে কর্তৃপক্ষকে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের চিকিৎসায় গুরুত্ব দিতে হবে এ সময়।